স্বাধীনতার পর থেকে বিদ্যুৎহীন ছিল ফাঁসিদেওয়া ব্লকের নলডাঙা গ্রাম। গত তিন বছরে একাধিকবার চেষ্টা করেও গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে পারেনি প্রশাসন। প্রতিবারই রাবভিটার বাসিন্দাদের বাধায় তা ভেস্তে যায়। তাই জন্ম থেকেই গ্রামে বিদ্যুৎ ছাড়া কুপি, লণ্ঠন, মোমবাতি নিয়ে বড় হতে হয়েছে কালীপদ রায়, ধীরেন্দ্রনাথ রায়, নমিতা রায়দের। বিদ্যুতের দাবি এবং পাল্টা দাবিতে একাধিকবার রাস্তা অবরোধও হয়েছে।
সোমবার সকাল থেকে পুলিশ-প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে এলাকায় যান বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির আধিকারিকেরা। কাজ শুরু হতেই বাধা আসে। একদল মহিলা বাঁশ নিয়ে তেড়ে আসেন। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়। সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধান হয়। বিদ্যুতের খুঁটি কিছুটা সরানো, বিদ্যুতের তার খুঁটির ডান দিক দিয়ে টেনে সমস্যা মেটানো হয়। সন্ধ্যা হতেই বিদ্যুৎ পৌঁছয় নলডাঙা গ্রামে। যদিও ট্রান্সফর্মার অবধি। তাতেও খুশির হাওয়া ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্রাম জুড়ে। ফাঁসিদেওয়ার বিডিও বীরূপাক্ষ মিত্র বলেন, “ফাঁসিদেওয়ার মত এলাকায় একটা গ্রামে বিদ্যুৎই যায়নি ভাবাই যায় না। তাই আমরা কিছুদিন ধরে তৎপরতা বাড়িয়ে সবাইকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি সামলাই।” আর বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির শিলিগুড়ি গ্রামীণ বিদ্যুদায়ন প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রবোধ কুমার সিংহ বলেন, “গ্রাম অবধি বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। আগামী ১-২ মধ্যে বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়ে যাবে।”
এলাকাটি ফাঁসিদেওয়া ব্লকের জালাস নিজামতারা গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে। রাস্তার পাশের রাবভিটার মূল এলাকা থেকে প্রায় ৩৫০ মিটার পিছনে নলডাঙা গ্রাম। গ্রামের আশেপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ থাকলেও নলডাঙায় কোনও দিনই বিদ্যুৎ ছিল না। শুধু খুঁটি, তার এবং ট্রান্সফর্মার পোঁতা ছিল। আন্দোলনকারীদের তরফে মহম্মদ লতিফ, মহম্মদ মকবুল, মহম্মদ আজারুলেরা জানান, লোকমুখে নানা কথা শুনেছিলাম। কেউ বলেছিল জমি খারাপ হবে। কেউ বলেছিল বাড়ি তৈরি হবে না। আবার অনেকে বলেছিল, টাকা ও চাকরিও মিলতে পারে। এমনকি, জমিতে খুঁটি বসাতে দিলে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। তাই এতদিন বাধা দিয়েছিলাম।
ফাঁসিদেওয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রণবেশ মণ্ডল, ব্লক কংগ্রেস নেতা আতাউল রহমান, সিপিএমের প্রধান আনন্দ সিংহ এলাকাতেই ছিলেন। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বলেন, “রাবভিটা ওই এলাকা দিয়ে ছাড়া নলডাঙায় বিদ্যুতের তার ঢোকানো যাচ্ছিল না। সমস্ত ভুল ধারণা নিয়ে এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। একদল লোকের জন্য এক গোটা গ্রামকে বঞ্চিত করা যায় না। তবে আলোচনার বিষয়টি মিটে গিয়েছে।” |