‘আমরা-ওঁরা’ বিভাজনের অভিযোগ উঠল রাজ্য ছাত্র যুব উৎসবের আয়োজনে। অভিযোগ, সরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজনে জনপ্রতিনিধিদের সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শাসক দল তৃণমূলের নেতানেত্রী ও সরকারি আমলাদের। তবে যেখানে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি রয়েছেন, সেখানে অবশ্য তাঁদেরই আয়োজনের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সরকারের যুব দফতরের উদ্যোগে আয়োজিত জেলা থেকে ব্লক স্তর পর্যন্ত ছাত্র যুব উৎসবের কমিটি কী ভাবে তৈরি হবে তার নির্দেশ জেলায় জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্লক থেকে জেলা প্রতিটি কমিটিতেই কমিটির শীর্ষে ‘পৃষ্ঠপোষক’ পদ তৈরি করে সরকার মনোনীত ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওই পদে তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা। এত দিন, পুরসভার চেয়ারম্যানরা পুরসভা কমিটির এবং বিধায়করা পদাধিকার বলে ব্লক কমিটির চেয়ারম্যান হতেন। এবারের নির্দেশে পুরসভার চেয়ারম্যান এবং বিধায়কদের কমিটিতে রাখাই হয়নি। যেমন, জলপাইগুড়ি পুর কমিটির ক্ষেত্রে মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি সরকারি আইনজীবী গৌতম দাসকে। বাদ পড়েছেন জলপাইগুড়ি পুরসভার কংগ্রেস চেয়ারম্যান মোহন বসু। সিপিএমের পরিচালিত মালবাজার এবং কংগ্রেসের দখলে থাকা আলিপুরদুয়ার পুরসভার চেয়ারম্যানও বাদ পড়েছেন। ধূপগুড়ি পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান সলিল রায়কে ধূপগুড়ি পুরসভার কমিটির শীর্ষে রাখা হয়েছে। জেলা কমিটির মূল দায়িত্ব থেকে জেলা পরিষদের সভাধিপতিকে সরিয়ে আনা হয়েছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে।
বিভিন্ন ব্লক কমিটির ক্ষেত্রেও বিধায়কদের সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শাসক দলের নেতা নেত্রীদেরই। যেমন, নাগরাকাটায় দায়িত্ব পেয়েছেন তৃণমূল ব্লক সভাপতি অসিতাভ বসু, ময়নাগুড়িতে সুভাষ বসু, মেটেলি ব্লকে তৃণমূলের চা শ্রমিক সংগঠনের নেতা সোনা সরকার। তবে রাজগঞ্জ এবং সদর ২ ব্লকে উৎসব কমিটির শীর্ষে রাখা হয় তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক খগেশ্বর রায়কে।
জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান, শহর ব্লক কংগ্রেস সভাপতি পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “এই সরকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা-ওঁরা বিভাজন করেছে। তবে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এটা না হলে ভাল হত।” সিপিএম জেলা সম্পাদকণ্ডলী সদস্য মিনতি সেন জানান, এক সময়ে ‘দলতন্ত্র’ বলে যাঁরা চেঁচাতেন এখন তাঁরা এ সব করছেন।”
রাজ্য সরকারের উদ্যোগেই প্রতিটি জেলায় একটি করে ছাত্র যুব উৎসব হয়। জেলার প্রতিটি পুরসভা ও ব্লকেও পৃথক অনুষ্ঠান হয়। চলতি বছরের নির্দেশে, উৎসব কমিটির সাধারণ সদস্য হয়েছেন সরকার মনোনীত ব্যক্তিরা। অভিযোগ, তৃণমূল নেতা ছাড়া কেউই সাধারণ সদস্যও হতে পারেননি। তবে পুরসভার ক্ষেত্রে পুরসভার নানা স্থায়ী সমিতির চেয়ারম্যানদের কমিটির সদস্যও রাখা হয়েছে। জেলার যুব তৃণমূলের সভাপতি তথা জেলা উৎসব কমিটির সদস্য শুভ্রজিত কর এই প্রসঙ্গে বলেন, “বিষয়টি সরকারি নীতির। এর সঙ্গে দলের কোনও যোগাযোগ নেই। তবে আমরা সব ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক বিভাজনের বিরুদ্ধে। হতে পারে যে আমরা কমিটিতে রয়েছি। তবে সব ক্ষেত্রেই পুরসভার চেয়ারম্যান, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান এবং অন্য দলের যুব সংগঠনের নেতাদের সম্মান দিয়ে কমিটিতে রাখা হবে।” |