রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের নতুন সরকারের বিরোধ ক্রমশ বাড়ছে। মুখ্যমন্ত্রীকে জড়িয়ে ব্যঙ্গচিত্র কাণ্ড-সহ সাম্প্রতিক কালের বিভিন্ন ঘটনায় কমিশনের সুপারিশ মানেনি সরকার। এ বার রাজ্য পুলিশের এক ইনস্পেক্টরের বিরুদ্ধে কমিশনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশও বাতিল করে দিল তারা।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জড়িয়ে ব্যঙ্গচিত্রের ঘটনায় অম্বিকেশ মহাপাত্র-সহ বিভিন্ন মামলায় কমিশনের সঙ্গে সরকারের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। মগরাহাটে বিষমদ খেয়ে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় রাজ্যের আবগারি কমিশনারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করেছিল কমিশন। সরকার সেই সুপারিশ মানেনি। রফি আহমেদ ডেন্টাল হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতির মামলায় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করেছিল কমিশন। সরকার তা বাতিল করে।
এ বার একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে গাফিলতির মামলায় পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিশনের সুপারিশও মানা হল না। মহাকরণ সূত্রের খবর, বর্ধমানে এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় অভিযোগ না নেওয়া এবং তদন্তে গাফিলতির অভিযোগে বর্ধমান থানার প্রাক্তন আইসি (এখন রাজ্য গোয়েন্দা দফতরে কর্মরত) প্রসূনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাসপেন্ড করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিল কমিশন। সোমবার সরকার সেই সুপারিশ খারিজ করে দিয়েছে। মহাকরণ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালে সুব্রত দাস নামে এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় সুব্রতবাবুর মা লক্ষ্মী দাস
খুনের অভিযোগ জানিয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ এফআইআর দায়ের করেনি। পরে আদালত এফআইআর করার নির্দেশ দেয়।
তার পরেও বর্ধমান থানার পুলিশ তদন্তের কাজ ঠিকমতো করেনি বলে লক্ষ্মীদেবী রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জানান।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই বর্ধমানে তৎকালীন পুলিশ সুপারের রিপোর্ট তলব করে কমিশন। ২০০৯ সালের সেই রিপোর্টে পুলিশ সুপার জানান, দেবাঞ্জন ভট্টাচার্য নামে এক সাব-ইনস্পেক্টর ওই ঘটনার তদন্ত করছেন। তবে এ ব্যাপারে কেউ গ্রেফতার হয়নি।
কমিশন চলতি বছরের গোড়ায় বর্ধমান থানার তৎকালীন আইসি প্রসূনবাবুকে ডেকে পাঠায়। তাঁর জবাব শোনার পরে ৯ জুলাই দু’সপ্তাহের মধ্যে প্রসূনবাবুকে সাসপেন্ড করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে তারা। প্রসূনবাবুর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, তিন মাসের মধ্যে সরকারকে তা জানাতে বলা হয়েছিল। সুপারিশের পাঁচ মাস পরে, সোমবার জবাব দিল রাজ্য সরকার। জানিয়ে দিল, ওই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না। |