অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাঁকুড়া সদরে গিয়েছিলেন ছুটির আবেদন মঞ্জুর করাতে। তার পর থেকে নিখোঁজ বাঁকুড়ার বারিকুল থানার জুনিয়ার কনস্টেবল বিধানচন্দ্র মণ্ডল। বছর চব্বিশের বিধানের বাড়ি পুরুলিয়ার বলরামপুর থানা এলাকার শালবনি গ্রামে। প্রশিক্ষণ শেষে কাজে যোগ দেওয়ার তিন সপ্তাহের মাথায় বিধানের এই নিখোঁজ হওয়া ‘রহস্যজনক’ বলে মনে করছে তাঁর পরিবার।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার অবশ্য বলেন, “বারিকুল থানায় কর্তব্যরত ওই পুলিশকর্মী ছুটি না নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন। ৯ ডিসেম্বর থেকে তাঁর কোনও খবর নেই। আমরা খোঁজ করছি।”
গত নভেম্বরে জুনিয়র কনস্টেবল পদে বাঁকুড়া জেলা পুলিশে যোগ দেন বিধানবাবু। বারিকুল থানায় ‘পোস্টিং’ পান। নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারটা বিধানের বাড়ির লোকজন বিষয়টি জানতে পারেন ১০ ডিসেম্বর। ওই পুলিশকর্মীর বাবা জিতেন্দ্রনাথ মণ্ডলের কথায়, “৮ তারিখ ফোনে ওর সঙ্গে কথা হয়। বলেছিল, ‘শরীর একটু খারাপ আছে, ছুটি
|
বিধানচন্দ্র মণ্ডল।
—নিজস্ব চিত্র। |
পেলেই বাড়ি যাব’। পর দিন খবর নেবার জন্য ফোন করে ওর মোবাইল সুইচ অফ পাই।” কাকা বাদল মণ্ডলের বক্তব্য, “বিধান কাজে ব্যস্ত রয়েছে ভেবে ফের কিছুক্ষণ পরে ফোন করা হয়। তখনও ওর মোবাইল বন্ধ ছিল।” জিতেন্দ্রনাথবাবু জানান, তাঁদের এলাকার আরও কয়েকজন যুবক বাঁকুড়ায় একই পদে কাজে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিবার জানতে পারে, বিধান ছুটির দরখাস্ত নিয়ে বাঁকুড়া সদরে গিয়েছিলেন। তারপর থেকে তাঁর খোঁজ নেই।
জিতেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “এর পরে এদিক-সেদিক বা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে খোঁজ করে কোথাও বিধানের হদিস না পেয়ে আমরা বারিকুলে যাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি, শরীর খারাপের জন্য ছুটির দরখাস্ত মঞ্জুর করাবে বলে ৯ ডিসেম্বর বিধান এক সহকর্মীর (সিনিয়র কনস্টেবল) সঙ্গে বারিকুল থেকে মোটরবাইকে বাঁকুড়া গিয়েছিল।”
বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, নভেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহে বিধানবাবু বারিকুলে আসেন। কাজে যোগ দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জ্বর-বমির উপসর্গ ছিল। অসুস্থতার জন্য তিনি রানিবাঁধ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তারও দেখান। এর পরে বাড়ি যাওয়ার জন্য ছুটি চাইলে থানা থেকে তাঁর ছুটির আবেদন মঞ্জুরের জন্য জেলা পুলিশের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের কাছে পাঠানো হয়। ৯ ডিসেম্বর ওই থানারই আর এক কর্মীর বাঁকুড়ায় যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। তাঁর সঙ্গেই মোটরবাইকে বিধান বাঁকুড়ায় যান। জেলা পুলিশ লাইনে যে আধিকারিক তাঁর আবেদন পত্রের প্রেক্ষিতে ছুটি মঞ্জুর করবেন, সেখানে ফের একটি দরখাস্ত লেখার প্রয়োজন ছিল। বিধানকে ওই দরখাস্ত লিখতে বলে ওই সহকর্মী কাজে অন্যত্র চলে যান। তার পর থেকে খোঁজ নেই বিধানের।
জেঠতুতো দাদা সুকুমার মণ্ডল বলেন, “প্রতিদিনই বিধানের মোবাইলে চেষ্টা করে যাচ্ছি। লাভ হচ্ছে না।” বিধানের বাবা বলেন, “বাঁকুড়ার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে বিধানের হদিস করার অনুরোধ জানিয়ে লিখিত আবেদনপত্র জমা দিয়েছি। ছেলেটা যে কোথায় গেল!” |