ভুঁইফোঁড় অর্থ সংস্থার প্রতারণায় জেরবার ধনী-গরিব সকলেই
ল্প সময়ে বেশি মুনাফার প্রতিশ্রুতি। ভুঁইফোঁড় অর্থ সংস্থার বাজার থেকে টাকা তোলার এই কৌশল কার্যত মুছে দিয়েছে বিত্তশালী আর গরিবের বিভাজন। সংস্থা উধাও হতেই এক সঙ্গে পথে বসতে হচ্ছে মেয়ের বিয়ের জন্য সারা জীবনের সঞ্চয় জমা রাখা দরিদ্র মা আর গরু পাচার করার টাকা বহু গুণ করার স্বপ্ন দেখা সমাজবিরোধীকে। ব্যাঙ্কের পরিষেবা বৃত্তের বাইরে এ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া স্বল্প সঞ্চয়কারীদের মিছিল লম্বা হচ্ছে।
মেয়ের বিয়ে। তাই সঞ্চিত অর্থ আর জমি বিক্রি থেকে পাওয়া সওয়া তিন লক্ষ টাকা জড়ো করে ‘জনকল্যাণ সমিতি’ নামে একটি সংস্থায় রেখেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার দক্ষিণ হেলেঞ্চার সুচিত্রা বাড়ই। সম্প্রতি উধাও হয়েছে সংস্থা। সুচিত্রাদেবী পথে বসেছেন। একই সংস্থায় রাখা গচ্ছিত টাকা পেরত না পেয়ে গ্রাহক আত্মহত্যাও করেছেন। ওই সংস্থার মালিক দীনেশ কীর্তনিয়াকে ধরেছে পুলিশ। কিন্তু টাকা উদ্ধার হয়নি। কারণ, পুলিশ সূত্রের খবর, সংস্থাটির বাড়ি বা অফিসের কাগজপত্র মালিকের নামে নয়, তাঁর আত্মীয়দের নামে। আপাতত আদালতের কাছে দীনেশের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আবেদন জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত তিন বছরে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, বাগদা, গোপালনগর বা হাবরার মতো সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় প্রায় ৩০টি হঠাৎ গজানো টাকা তোলার সংস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সর্বস্বান্ত লক্ষাধিক। ওই সংস্থাগুলির অফিস এখন তালাবন্ধ। মাঝেমাঝে সেখানে বিক্ষোভ দেখান প্রতারিতেরা। পুলিশের দাবি, ওই ৩০টি ঘটনার মধ্যে সাতটিতে ১০ জনকে ধরা হয়েছে। বাকিরা অধরা কেন? জেলা পুলিশ সুপার সুগত সেনের বক্তব্য, “প্রতারিত হয়েও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান না সাধারণ মানুষ। অভিযোগের অভাবে আইনি ব্যবস্থা নিতে সমস্যা হয়।”
কেন আসে না অভিযোগ? ইতিমধ্যেই এ ভাবে টাকা রেখে প্রতারিত একাধিক গ্রাহকের বক্তব্য, “সংস্থার কর্তারা গ্রেফতার হলে বড়জোর গায়ের ঝাল মেটে। কিন্তু টাকা ফেরত পাওয়ার আশা চলে যায়।” ‘জনকল্যাণ সমিতি’ উঠে যাওয়ার পরে, তার অফিস ঘেরাও করলেও প্রতারিতেরা মালিকদের বিরুদ্ধে প্রথমে পুলিশে অভিযোগ জানাননি। ২০১০-এ বাগদায় এমন ভাবে উঠে যাওয়া একটি সংস্থার অফিসে আগুন ধরানো হয়। কিন্তু পুলিশে অভিযোগ হয়নি।
কী ভাবে কাজ করে সংস্থাগুলি
কেন এ ধরনের ভুঁইফোঁড় সংস্থার ফাঁদে পা দিয়ে বোকা বনে জনতা? পুলিশ এবং বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণে উঠে আসছে নানা মত। প্রধান কারণ, অবিশ্বাস্য মাত্রায় মুনাফার আশ্বাস। সরকারি স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলি সম্পর্কে বিশদ ধারণার অভাব। তা ছাড়া, নথি-তথ্য যাচাইয়ের ‘ঝক্কি’ এড়িয়ে টাকা রাখার সুযোগ। ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইন দেওয়ার ‘কষ্ট’ও নেই। বাড়ি থেকেই টাকা নিয়ে যাবে ‘এজেন্ট’। ‘এজেন্ট’ হিসেবে এলাকায় ‘স্বচ্ছ’ ভাবমূর্তির ছেলেমেয়েদের বাছাই আরও ভরসা বাড়ায়।
ভাঁড়ারে কিছু টাকা জমলেই গ্রাহকদের ভরসা বাড়াতে সংস্থাগুলি এলাকায় নানা ধরনের ব্যবসা শুরু করে। কিছু মানুষকে মোটা টাকা ফিরিয়েও দেওয়া হয়। কানাঘুষোয় ছড়ানো হয় সে কথা। পড়শিকে লাভ করতে দেখে ফাঁদে পা দেন অনেকে। এলাকায় অনুকূল পরিস্থিতি রাখতে রাজনৈতিক দলগুলিকে মোটা চাঁদা দেওয়া, স্থানীয় ক্লাবের নানা অনুষ্ঠানে বড় অনুদান দেওয়ার মতো কৌশলও নিয়ে থাকে এ ধরনের সংস্থা। ফলে, প্রতারণার ফাঁদের পরিধি বাড়ে।
ভুঁইফোড় সংস্থা ব্যবসা গুটিয়ে পালালে বিপাকে পড়েন ‘এজেন্ট’রা। যাঁদের অনেকে গালভরা পদ, বিদেশ ভ্রমণ এবং মোটরবাইক বা মোবাইল ফোনের মতো রকমারি ‘ইনসেন্টিভ’-এর হাতছানিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন ওই সংস্থার সঙ্গে। ‘এজেন্ট’রাই জনতা ক্ষোভের মুখে পড়েন। সংস্থা উঠে যাওয়ায় পরে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে না পারার লজ্জায় ‘এজেন্ট’ আত্মহত্যা করেছেন, এমনও ঘটেছে। যে এলাকায় এ জাতীয় অর্থ সংস্থার রমরমা রয়েছে, সেই বাগদার বিধায়ক তথা রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণমন্ত্রী উপেন বিশ্বাস বলেন, “এ ভাবে টাকা তোলা ও রাখাসামাজিক ও অর্থনৈতিক অপরাধ। টাকা খোয়ানোর পরে অনেকে আমার কাছে আসেন। তার পরেও লিখিত অভিযোগ জানাতে ভয় পান।” মন্ত্রীর দাবি, তিনি তাঁর মতো করে প্রশাসনকে সতর্ক করছেন, জনতাকে বোঝাচ্ছেন।
প্রতারিতের সংখ্যা কিন্তু কমছে না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.