পূরণ হল সতেরো বছরের স্বপ্ন। গ্রামবাসীর দান করা জমিতে পঞ্চায়েতের অর্থসাহায্যে পাকা গ্রন্থাগার গড়ে তুলল এগরা ২ ব্লকের দোঁবাধী-র সংস্থা ‘অভিনন্দন’। সোমবারই উদ্বোধন হল নতুন এই দোঁবাধী গ্রামীণ গ্রন্থাগারের। উদ্বোধন করলেন বিডিও মৃন্ময় মণ্ডল।
বছর সতেরো আগে স্থানীয় কিছু সংস্কৃতিমনস্ক যুবক জোট বেধে ‘অভিনন্দন’ নামে এই সংস্থাটি গড়ে তুলেছিলেন। এগরা-কাঁথি পাকা রাস্তার পাশে পূর্ত দফতরের জায়গায় অস্থায়ী ছাউনি করে পাঠ্যপুস্তক ও অন্য ধরনের কিছু বই নিয়ে ছোট্ট গ্রন্থাগার খোলেন তাঁরা। সংস্থার সম্পাদক চন্দন প্রধান ও সভাপতি সুকুমার জানা বলেন, “গ্রন্থাগার তৈরির জন্য খুব কমই টাকা জমাতে পেরেছিলাম। সমাজসেবামূলক কাজেই আমাদের অধিকাংশ টাকা খরচ হয়ে যেত।” স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য কনককান্তি ভট্টাচার্য এই সংস্থারই সদস্য। তিনি জানান, পাশের খেজুরদা গ্রামের বাসিন্দা অজিত বেরা ও তাঁর চার ভাই গ্রন্থাগারের জন্য দোঁবাধী গ্রামে পাঁচ ডেসিমেল জমি দান করলে স্বপ্ন পূরণে এক ধাপ এগোয়। |
অজিতবাবু বলেন, “আমার ঠাকুরদা বৈদ্যনাথ বেরা গ্রামের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নতির জন্য জমি দান করবেন কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারি বা বেসরকারি ভাবে আজ পর্যন্ত কেউ কিছু করতে উদ্যোগী হননি। পাশের গ্রামের ওই সংস্থার উদ্যোগ সাধু বুঝেই জমি দান করেছি।”
জমি পাওয়ার পরেই স্থানীয় মঞ্জুশ্রী গ্রাম পঞ্চায়েতে অর্থসাহায্যের আবেদন জানান ‘অভিনন্দনে’র সদস্যরা। পঞ্চায়েত প্রধান শ্রীপতি প্রধান জানান, গ্রন্থাগার নির্মাণের জন্য ২ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। গ্রন্থাগারে শৌচাগার ও পানীয় জলের ব্যবস্থাও করে দেবে পঞ্চায়েত। নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে বই কেনার কিছু টাকাও। পঞ্চায়েত সমিতির তহবিল থেকেও মিলবে টাকা। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রকাশ রায়চৌধুরী বলেন, “বিনোদন-সর্বস্ব যুগে এই গ্রন্থাগার সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে জনগণকে বাঁচাবে আশা করি।”
আমন্ত্রণ পেয়ে এ দিন গ্রন্থাগারে এসেছিল বালিসাই ও দক্ষিণচক হাইস্কুলের বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী। হাতের নাগালে পাঠ্যপুস্তক ও বিভিন্ন সহায়ক বই পেয়ে খুশি নবম শ্রেণির দেবলীনা সাউ, দেবাশিস গিরিরা। স্থানীয় বাসিন্দা সুজিত চক্রবর্তী, শতাব্দী পণ্ডারা বলেন, “এ বার থেকে অবসর সময় কাটানো নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। বই পড়েই কেটে যাবে সময়।”
বিভিন্ন মহল থেকে অর্থ সাহায্য পেয়ে উচ্ছ্বসিত অভিনন্দনের সদস্য শ্যামশঙ্কর পণ্ডা ও স্বপন জানা বলেন, “অর্থ সংগ্রহ করে এক বছরের মধ্যে ভবনটি দোতলা করা হবে। বইয়ের সম্ভারও বাড়ানো হবে। সরকারি স্বীকৃতি ও সাহায্যের জন্য বিভিন্ন স্তরে আবেদন জানানো হবে।” |