টাকা এলেও হচ্ছে না উন্নয়ন, সরব লোধারা
দ্রুত বাড়ি তৈরি করা, জেলায় লোধা সেল চালু করা-সহ বিভিন্ন দাবিতে ফের জেলাশাসকের দফতরের সামনে লাগাতার ধর্না- বিক্ষোভ কর্মসূচির পথে যাচ্ছে মেদিনীপুর লোধা-শবর কল্যাণ সমিতি। আগামী ২১ জানুয়ারি থেকে এই কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানান সমিতির সম্পাদক বলাইচন্দ্র নায়েক। বলাইবাবু বলেন, “সরকার লোধা-শবরদের প্রতি উদাসীন। বিভিন্ন দাবিতে আগেও দরবার করা হয়েছে। তবে লাভ হয়নি। এ বার লাগাতার ধর্না-বিক্ষোভ চলবে।”
অভিযোগ, লোধাদের উন্নয়নে অর্থ আছে। কিন্তু উন্নয়ন হচ্ছে না। বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা জেলায় এসে পড়ে থাকছে। সমিতির মতে, পশ্চিম মেদিনীপুরের ২৯টি ব্লকের মধ্যে ২১টিতে সব মিলিয়ে ১৬ হাজার ২৬২টি লোধা-শবর পরিবারের বসবাস। জনসংখ্যা ৭১ হাজার ১৩৬। এর মধ্যে ভূমিহীন পরিবার ৯ হাজার ৪৩৬টি। এই সব পরিবারের ছেলেমেয়েদের মধ্যে ৮২৪ জন অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ। ১৬০ জন মাধ্যমিক পাশ করেছেন। ৬০ জন উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছেন। ২২ জন স্নাতক। তা সত্ত্বেও সরকারি চাকরি করেন মাত্র ৩৪ জন। বলাইবাবু বলেন, “আমাদের প্রতিবাদ এখানেই। জঙ্গলমহলের ছেলেমেয়েরা হোমগার্ডের চাকরি পেল। কিন্তু লোধা যুবক-যুবতীদের ভাগ্যে চাকরি জোটেনি।” তাঁর আক্ষেপ, “বিভিন্ন দাবি জানানোর জন্য সময় চেয়ে প্রশাসনের আধিকারিকদের চিঠি দিই। যদিও দেখা করার সময় পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়েই আমরা জেলাশাসকের দফতরের সামনে লাগাতার ধর্না-বিক্ষোভে বসছি। কলকাতার কিছু বিদ্বজ্জনও এই কর্মসূচিতে থাকবেন।”
জেলা প্রশাসন অবশ্য সমিতির অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, লিখিত ভাবে বিভিন্ন সংগঠনই দাবি জানায়। তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপও করা হয়। বছর তিনেক আগে লোধাদের জন্য বিশেষ প্রকল্পে পশ্চিম মেদিনীপুরে এক হাজার বাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। ইন্দিরা আবাস যোজনা বা অন্য প্রকল্পের মতো সাধারণ মানের বাড়ি নয়। এই প্রকল্পে বাড়ি হবে অনেক বেশি মজবুত। আগে বিভিন্ন প্রকল্পে লোধাদের বাড়ি তৈরি হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ বাড়িই সামান্য ঝড়ে ভেঙে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাই পরিকল্পনায় বদল আনে জেলা প্রশাসন। ঠিক হয়, বাড়ি তৈরির প্রয়োজনীয় অর্থ দেবে অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ বিভাগ এবং পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন ব্লকে বেশ কিছু বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, এই প্রকল্পে সব থেকে বেশি বাড়ি তৈরি হওয়ার কথা ছিল নারায়ণগড়ে, ২০০টি। জেলার এই এলাকায় ৩ হাজারেরও বেশি লোধা পরিবারের বসবাস। এ ছাড়া খড়্গপুর-১ ব্লকে ১১০টি, খড়্গপুর-২ ব্লকে ৫০টি, ঝাড়গ্রামে ১৩০টি, বিনপুর-১ ব্লকে ২৫টি ও বিনপুর -২ ব্লকে ৫০টি, ডেবরাতে ৬০টি বাড়ি তৈরির প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়। শুধু এই বিশেষ প্রকল্পে নয়, পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ আইএপি প্রকল্পেও লোধাদের বাড়ি তৈরি হচ্ছে। জেলায় আপাতত ৫৮টি বাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সাঁকরাইলে ৩৮টি ও শালবনিতে ২০টি বাড়ি হবে।
সমিতির অবশ্য অভিযোগ, লোধাদের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ কোটি কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। এই অভিযোগ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও লিখেছিল তারা। বাড়ি তৈরি নিয়েই তাদের মুখ্য অভিযোগ। এ ক্ষেত্রে গড়িমসি করা হচ্ছে বলে এক সময় জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। তবে, তারপরও পরিস্থিতির বিশেষ পরিবর্তন হয়নি বলে দাবি সমিতির। জেলা অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দফতরের আধিকারিক রাহুল নাথ অবশ্য বলেন, “দ্রুত এই কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।” তবে এই আশ্বাসে আস্থা নেই লোধাদের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.