দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
লড়াইটা ছিল সম্মান বাঁচানোর। হারলেই নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল ‘সি’ গ্রুপের গাড্ডায়। ইডেনে প্রথম দু’দিন পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচের তৃতীয় দিনেও সেই ধারা বজায় রেখে রঞ্জি ট্রফিতে মরসুমের প্রথম জয় পেল বাংলা। সাত নম্বর ম্যাচে পৌঁছে। লক্ষ্মণহীন হায়দরাবাদকে চার উইকেটে হারিয়ে লক্ষ্মীর ঝাঁপিতে ‘অমূল্য’ ছ’পয়েন্ট ঢুকলেও দিনের শেষে লাভ ওই একটাই। ১৩ পয়েন্টে পৌঁছে ‘এ’ গ্রুপে টিকে থাকার গ্রিন কার্ড চলে এল বাংলা ড্রেসিংরুমে।
সঙ্গে অবশ্য জটিল অঙ্কের বিচারে এখান থেকেও শেষ আটে ওঠার জন্য অনেক ‘যদি’ এবং ‘কিন্তু’ থাকছে। কিন্তু তাকে গুরুত্ব না দিয়ে লক্ষ্মীরতন শুক্লর দলের আপাতত লক্ষ্য ঘরের মাঠে শেষ ম্যাচে রেলওয়েজকে সরাসরি হারিয়ে পয়েন্ট তালিকায় বাংলাকে অন্তত ভদ্রস্থ জায়গায় নিয়ে যাওয়া।
ইডেনের গতিময় বাউন্সি পিচে বাংলার জয়ের ‘রিংটোন’ একটাই। টিকে থাকার সংকল্প। এ দিন যা হাজির রোহন বন্দ্যোপাধ্যায় (৫৬) এবং ঋদ্ধিমান সাহার (৫২ নটআউট) ব্যাটে। আর বল-এ সামি আহমেদ (৬-৭১)। ম্যাচে১০ উইকেট ভারত ‘এ’ দলের এই জোরে বোলারের। দিন্দাকে মাথায় রেখেও যাঁর ভূয়সী প্রশংসা ইদানীং শোনা যাচ্ছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের গলায়ও। চলতি মরসুমে পাঁচ ম্যাচে সামির শিকার ২৮ উইকেট। বাড়ি ফেরার পথে তাঁর সাফ কথা, “আক্রমভাইয়ের টিপস কাজে লাগিয়ে সাফল্য পাচ্ছি।”
|
অধিনায়কের দুই মেজাজ |
|
|
মাঠে তেজিয়ান, ম্যাচের শেষে স্বস্তিতে। বাংলাকে জিতিয়ে লক্ষ্মী। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
|
প্রথম দিন থেকেই বাংলা অধিনায়ক লক্ষ্মী বলে আসছিলেন, “এক দিনে আঠারো উইকেট পড়লেও শেষ পর্যন্ত আমরাই জিতব।” তৃতীয় দিন সকালে প্রথম আধঘণ্টার মধ্যেই পরপর দু’উইকেট তুলে নিয়ে হায়দরাবাদকে ১৮১-তে বেঁধে রেখে লক্ষ্মীর দাবিকেই আরও জোরাল করেছিল বাংলা। কিন্তু জয়ের সেই রান তোলার কাহিনিতে এত ‘টুইস্ট’! গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কয়েকজন ব্যাটসম্যান যেমন উইকেট ছঁড়ে দিয়ে এসে পুরনো রোগ না সাড়ার বার্তা দিয়ে গেলেন, তেমনই ‘এস্পার-ওস্পার’ ম্যাচে বাইশ গজে ছোটখাটো বাকযুদ্ধ হয়ে গেল বাংলা অধিনায়ক আর হায়দরাবাদের জোরে বোলার আনোয়ার আহমেদের মধ্যে। আনোয়ারকে এক ওভারে তিনটে চার মেরেছিলেন লক্ষ্মী। কিন্তু তাঁর পরের ওভারেই আড়া চালিয়ে বোল্ড হতেই গোলমালের সূত্রপাত। বাংলা অধিনায়কের কথায়, “ফেরার সময় ও কিছু বলছিল। তা জানতেই এগিয়ে যাই। খেলা শেষের সঙ্গেই ওই এপিসোডও শেষ হয়ে গিয়েছে।”
জয়ের জন্য ১৮১ রান তুলতে নেমে ২১ ওভারে অরিন্দম দাস (১১), সুদীপ চট্টোপাধ্যায় (০), অভিষেক ঝুনঝুনওয়ালার (৭) উইকেট হারিয়ে বাংলা যখন ৪৭-৩ তখনই উরকেরি রামনের এই বাংলা দলের সবচেয়ে বিরল বস্তু ‘সংকল্প’ কাজে লাগিয়ে খেলা ধরলেন রোহন এবং ঋদ্ধিমান। কিন্তু চায়ের পরেই রোহন এবং দেবব্রত দাস (১০) আউট হতেই ঠকঠকানি ফের শুরু হয়েছিল। কিন্তু বহু ঘরোয়া যুদ্ধের পোড়খাওয়া লক্ষ্মী নেমেই আশিস রেড্ডি, আনোয়ারদের চোখে চোখ রেখে পাল্টা ঠ্যাঙানি দিতেই (১২ বলে ২২ রান) চাপের খেলায় ব্যাকফুটে চলে যাওয়া শুরু নিজামের শহরের ক্রিকেটারদের।
আনন্দের দিনে বাংলা অধিনায়ক বলে গেলেন, “শেষ ম্যাচ থেকে সাত পয়েন্ট পাওয়ার চেষ্টা করব। গুজরাত আর মধ্যপ্রদেশ ম্যাচ দু’টো জিতে থাকলে খুব ভালো জায়গায় থাকতাম।” লক্ষ্মীর শেষ কথাটাই বাংলার এ বারের রঞ্জি অভিযানের সারকথা।
|
কাগজে-কলমেও অঙ্ক কঠিন |
• বাংলার (৭ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট) গ্রুপ থেকে প্রথম তিন দল কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবে।
• পঞ্জাব ৬ ম্যাচে ৩২ পয়েন্ট নিয়ে নক আউটে উঠেই গিয়েছে।
• চলতি মধ্যপ্রদেশ (৩২৩) ম্যাচে পঞ্জাব (১৪৮ ও ৩৫৪-৮) দু’উইকেট হাতে ১৭৯ রানে এগিয়ে। মঙ্গলবার শেষ দিনে ড্র হলে মধ্যপ্রদেশ হবে ৬ ম্যাচে ১৭। জিতলে ২০।
• মুম্বই (৬০৬-৫) সৌরাষ্ট্রের (২৪৮-৮) বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট কার্যত পেয়েই গিয়েছে। ফলে ৬ ম্যাচে ১৪। সৌরাষ্ট্র ড্র করলে হবে ৬ ম্যাচে ১৬।
• এ ছাড়া গুজরাতের ৬ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট।
• বাংলার সর্বাধিক পয়েন্ট হতে পারে ২০। |
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর
হায়দরাবাদ: ১১৫ ও ১৮১ (সামি ৬-৭১, লক্ষ্মীরতন ৩-৩৮)।
বাংলা: ১১৬ ও ১৮৩-৬ (রোহন ৫৬, ঋদ্ধিমান ৫২ নঃআঃ) |