কোথায় তিনি? সবার মুখে একটাই প্রশ্ন। কোথায় সচিন তেন্ডুলকর? জামথা স্টেডিয়ামের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াল প্রশ্নটা। উত্তরও পাওয়া গেল। কিন্তু কোনটা সঠিক আর কোনটা নয়, তা অজানা। এই উত্তরগুলোই ক্রমশ দাবানলের মতো গুজব হয়ে ছড়িয়ে পড়ল সারা দেশে, এমনকী বিদেশেও। সারা দুনিয়া থেকে পালটা হাজার প্রশ্ন এসে আছড়ে পড়ল জামথায় সচিনের তা হলে টেস্ট ক্রিকেটে আজই শেষ দিন?
এ দিন প্রথম ঘণ্টাতেই ফিল্ডিং করতে গিয়ে কাঁধে হালকা চোট পান সচিন। সে জন্যই মাঠ ছেড়ে চলে যান তিনি। প্রথম ড্রিঙ্কসের পর সেই যে গেলেন, আর মাঠে ফেরেননি এক বারের জন্যও। এতেই আরও গুজবের পর্বতমালা তৈরি হয়ে যায়। ধারাভাষ্যকার হর্ষ ভোগলে টুইটারে লিখলেন, “কেন জানি না, আজ সচিনকে ব্যাট হাতে নামতে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।” তখন থেকেই শুরু। এক ব্রিটিশ সাংবাদিকের মন্তব্যের জবাবে হঠাৎ অস্ট্রেলিয়া থেকে রিচি বেনোর টুইট এসে পড়ল, “আমার কাছে খবর আছে, আজই সচিনের শেষ দিন। রবি শাস্ত্রী আমাকে সে রকমই জানিয়েছে। খবরটা ভুল হলে কিন্তু রবির দায়িত্ব।” প্রেসবক্সের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় হর্ষর সঙ্গে দেখা হতে তিনি বললেন, “বিশ্বাস করুন, এমন কোনও খবর আমার কাছে নেই। নেহাতই আবেগতাড়িত হয়ে পড়ে টুইটটা করে ফেলেছি। আসলে কাল রাতে টিভিতে সচিনের একটা পুরোনো ইনিংস দেখার পর ইচ্ছেটা বেড়ে যায়।” সচিন-পত্নী অঞ্জলি নাগপুরে এসে পৌঁছনোর পরই গুজবটা বাড়ে। এর পরে সোমবার সচিন মাঠ ছেড়ে চলে যেতেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে সেই গুজব।
রবি শাস্ত্রী খবরটা শুনে আকাশ থেকে পড়লেন। বললেন, “আমি বেনোকে বলেছি সচিনের এটাই শেষ টেস্ট? আমার কি মাথা খারাপ? না হলে বেনোর মাথা খারাপ হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখুন তো, ওটা বেনোর আসল টুইটার অ্যাকাউন্ট কি না?” সত্যিই তাই। ওটা বেনোর আসল অ্যাকাউন্টই নয়। জামথার মাঠে যখন সিরিজের শেষ দিনের অর্থহীন খেলা চলছে, তখন প্রেসবক্সে সাংবাদিকদের ছোট ছোট জটলা। যে যার ‘সোর্স’ কাজে লাগিয়ে আসল খবরটা বের করার চেষ্টা করছেন। ইংরেজ সাংবাদিকরাও উৎসাহী হয়ে পড়লেন। প্রাক্তন ইংরেজ ক্রিকেটার ডেরেক প্রিঙ্গল সাংবাদিক হিসেবে ভারতে এসেছেন, তিনিও টুইটারে ভাসিয়ে দিলেন, “সচিনের কি শুধুই চোট, না অন্য কোনও কারণ আছে।”
|
সিরিজ জিতে ইংল্যান্ডের উচ্ছ্বাস। ছবি: পিটিআই |
প্রতি সেকেন্ডে ভেসে আসছে আরও পোস্ট। কারও দাবি, “সচিন ড্রেসিংরুমে নিজের বিদায়ী ভাষণ লিখছেন”। কেউ বলছেন, “বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ড্রেসিংরুমে ফিরে গিয়েছেন সচিন।” তাঁর অন্ধ ভক্তরা অবশ্য আশাবাদী, এখনই নয়। সচিনের এক ফ্যান ক্লাব জানাল, “ভারত-পাক ওয়ান ডে খেলছে সচিন। ইডেনে তিনি বলে গিয়েছেন, ৩ জানুয়ারি তিনি আবার আসবেন।” সারা দিনে সচিনের মাত্র এক ঘণ্টা মাঠে থাকা দেখে সুনীল গাওস্কর পর্যন্ত রাতে টিম হোটেলে এক টিভি অনুষ্ঠানে বলে ফেললেন, “এতক্ষণ সচিন মাঠে ছিল না। তার মানেই ও ক্রিকেটকে উপভোগ করতে পারছে না। বিদায়ের সময় এসে গিয়েছে।”
খেলা শেষে ইংল্যান্ড ক্রিকেটারদের অভিনন্দন জানাতেও আসেননি সচিন। রাত সাড়ে আটটার বিমানে যখন মুম্বই উড়ে যান, তখন জল্পনার অবসান হলেও সম্ভাবনা একটা রয়েই গেল। মুম্বইয়ে দু-এক দিনের মধ্যে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে নিজের চরম সিদ্ধান্তটি জানিয়ে দেবেন না তো? যেমন করেছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। |