মোহিন্দরের কথা শুনলে
এই দুর্দশা দেখতে হত না

নাগপুরে ভারতীয় ক্রিকেটকে লজ্জায় ডুবতে দেখে একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে ভারতীয় বোর্ড কর্তাদের। মহামান্য ভারতীয় বোর্ড কি এ বার বুঝতে পারছে, মোহিন্দর অমরনাথ কেন ০-৮-এর বিপর্যয়ের পর মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে সরাতে চেয়েছিল?
আরে বাবা, বোর্ড কর্তাদের চেয়ে জিমি ক্রিকেটটা একটু বেশি বোঝে। আর বোঝে বলেই বলেছিল, ধোনিকে তাড়াও। নইলে ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ আরও গাড্ডায় পড়বে। আজ কথাটা মিলে গেল তো? সে দিন যদি জিমি-র কথা শোনা হত, আজ আমাদের এই দিন দেখতে হত না। আমাদের দেশে এসে, স্পিনারদের উড়িয়ে কি না সিরিজটাই জিতে ফেলল ইংল্যান্ড! কতটা যে অপমানিত লাগছে, বলে বোঝানো মুশকিল।
ধোনির কাছে আমার কয়েকটা প্রশ্ন আছে। কেন তুমি নাগপুরে চতুর্থ দিন ওঝা-অশ্বিনকে দিয়ে এক ঘণ্টা ব্যাট করিয়ে গেলে? তুমি কি টেস্টটা জেতার জন্য খেলছিলে, নাকি ড্র করার জন্য? অশ্বিন উইকেট পেলে পরের ওভারেই তুমি কোন যুক্তিতে ওকে সরিয়ে নিচ্ছ? হরভজন সিংহের মতো অভিজ্ঞ অফস্পিনারকে কেন তুমি মাত্র কুড়ি ওভার বল করিয়ে সিরিজ থেকেই ছেঁটে ফেললে? কেন পারফরম্যান্স না থাকা সত্ত্বেও তোমার পছন্দের কিছু ক্রিকেটারকে বারবার দেখতে হচ্ছে ভারতীয় টিমে?
সোজা কথাটা এ বার সহজ ভাবে বলি। ওয়ান ডে বা টি-টোয়েন্টিতে ধোনি দুর্দান্ত ক্যাপ্টেন। কারণ ওখানে মস্তিষ্কের বেশি প্রয়োগ লাগে না। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে ও অধিনায়ক হিসেবে সাধারণ নয়, অতি সাধারণ। টেস্ট ক্রিকেটটা তো আর পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচ নয়। এখানে কিছু ব্যাটসম্যান থাকে যারা দশ-বারো ঘণ্টা ক্রিজে পড়ে থাকতে পারে। যেমন অ্যালিস্টার কুক। ঘণ্টায়-ঘণ্টায় পরিকল্পনা বদলের দরকার পড়ে। প্ল্যান ‘এ’ কাজ না করলে প্ল্যান ‘বি’। নইলে ‘সি’।
দেশ জুড়ে অধিনায়ক বদলের ধ্বনি
‘নাগপুর টেস্টের চতুর্থ দিন পর্যন্ত আমি বলেছি ধোনির কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু এখন বিরাট কোহলি চাপের মুখে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে মনে হয় নিজেই আবিষ্কার করেছে যে ওর ভেতর নেতৃত্বগুণ আছে। ধোনির জায়গায় কোহলিকে ভারতের অধিনায়ক করার সময় এসে গিয়েছে।’
‘ধোনিকে মাঠে যেমন খেই হারানো দেখাচ্ছে, ও এখনও কেন
অধিনায়ক রয়েছে সেটা বুঝে উঠতে আমারও একই অবস্থা।’
‘ধোনিকে টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে এ বার সরানো উচিত। আমি নির্বাচকপ্রধান থাকলে ধোনিকে শুধু উইকেট কিপার-ব্যাটসম্যান হিসাবে দলে রাখতাম। নেতৃত্বের বোঝা সরে গেলে ও আরও ভাল খেলবে।’

ধোনির শেষ এক বছর
দেশে
টেস্ট-২,
জয়-২, হার-০।
টেস্ট-৪,
জয়-১, ড্র-১, হার-২।
বিদেশে
টেস্ট-৪,
জয়-০, ড্র-০, হার-৪।
টেস্ট-৪,
জয়-০, ড্র-০, হার-৪।

ধোনির সেখানে কিছুই নেই। জানেই না কী ভাবে পার্টনারশিপ ভাঙতে হয়। কিছু অদ্ভুত একগুঁয়েমি নিয়ে চলে। আমদাবাদে টেস্ট চার দিনে শেষ করেও বলল, ওটা নাকি টার্নার নয়। টার্নার পেল মুম্বইয়ে আর ইংল্যান্ড লেলিয়ে দিল মন্টি পানেসরকে। তুমি যখন অধিনায়ক, নিজের টিমের বাইরেও তোমাকে ভাবতে হবে। জানতে হবে বিপক্ষের শক্তি কোনটা, দুর্বলতা কোনটা। কে বলতে পারে, টার্নার নিয়ে ধোনি হইচই না ফেলে দিলে মন্টি হয়তো মুম্বইয়ে নামতই না। সিরিজটাও আমরা জিততে পারতাম। এর পরেও ধোনিকে রেখে দেওয়া হবে?
সুনীল গাওস্কর শুনলাম বলেছে, ধোনিকে সরিয়ে বিরাটকে ক্যাপ্টেন করে দেওয়া উচিত। একদম ঠিক। আমিও সেটাই সমর্থন করি। ধোনির না আছে স্ট্র্যাটেজি, না আছে ম্যান ম্যানেজমেন্ট। না টিম স্পিরিট ও ঠিক রাখতে পারে। আমি জন্মে কোনও অধিনায়ককে দেখিনি যে কি না এত স্বজনপোষণে বিশ্বাসী। ধোনির আমলে দেখেছি, রোহিত শর্মা, সুরেশ রায়না, পীযুষ চাওলাদের টিমে ঢুকে পড়া খুব সহজ হয়ে গিয়েছে। আর মনোজ তিওয়ারি, অশোক দিন্দারা পারফর্ম করেও বসে থাকছে। থাকবেই। রায়নারা তো ধোনির কাছের লোক। ডানকান ফ্লেচারের সঙ্গে ধোনির আঁতাতটাও ক্ষতি করে দিচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটের। শুধু ধোনি নয়, আমার মনে হয় এই ‘ডি কোম্পানি’টাকেই তাড়ানো উচিত। ধোনি আর ডানকান।
দু’টো জিনিস আমি এর পর দেখতে চাই। এক, নির্বাচকরা এ বার কী করে? আর দুই, ভারতীয় বোর্ডের ভূমিকা। দেখতে চাই কোন নির্বাচক এ বার সাহস করে বলতে পারে, অনেক হয়েছে, ধোনিকে হঠাও। মোহিন্দর বলতে গিয়ে নিজেই ছাঁটাই হয়েছিল। কিন্তু এ বার পরিস্থিতিটা একটু অন্য রকম। আমার মনে হয় না, শেষ তেরোটার মধ্যে দশটা টেস্ট হারার পর ধোনিকে ভারতীয় বোর্ডও রেখে দিতে চাইবে বলে। সবাই এখন জানে যে, টানা বিপর্যয়ের পর ধোনি অধিনায়ক থেকে গিয়েছিল কারণ বোর্ডের ওকে পছন্দ ছিল বলে। কিন্তু এর পরও ওকে রেখে দেওয়া হলে, ভারতীয় বোর্ডও কিন্তু বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে দেশের মানুষের কাছে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.