ধোনির হাসি, কোহলির নাচ, সিরিজ ইংল্যান্ডের
ড্রেসিংরুমের সামনে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ইংরেজ সাংবাদিকরা। প্রত্যেকেরই চাহিদা অ্যালিস্টার কুকের সাক্ষাৎকার। জনা পনেরো তো হবেনই। কাউকে ফেরালেন না ইংরেজ অধিনায়ক। প্রত্যেকেরই আশা পূরণ করলেন। কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার সকলকে একসঙ্গে নিয়ে বসলেন। বিকেল গড়িয়ে যখন সন্ধে হতে চলেছে, সিরিজ চুকেবুকে গিয়েছে অনেকক্ষণ। তখনও ইংরেজ ক্রিকেটাররা জামথার ড্রেসিংরুমে। সেখানে তখন চলছে পার্টি। এটা পশ্চিম ভারতের এক অজানা গ্রাম জামথা, না ইংল্যান্ডের কোনও অখ্যাত কাউন্টি! আসলে গত ২৮ বছরে তো এই দৃশ্য দেখা যায়নি ভারতের মাটিতে।
২৮ বছর পর ভারতের মাটিতে ইংল্যান্ডের টেস্ট সিরিজ জয় বলে কথা। ক্যাপ্টেন কুক নিজেই বললেন, “চিরদিন মনে থাকবে এই সফর। আজ সারা রাত আনন্দ করব।”
ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে যখন নতুন ভোরের সূচনা, তখন ভারতীয় ক্রিকেটের আকাশে কালো মেঘ। টেস্ট ম্যাচের পঞ্চম দিনের উইকেটে ৭৮ ওভারেরও বেশি সময় ধরে কোনও ব্যাটসম্যানকে না ফেরাতে পারাটাকে কী ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? দুই সেঞ্চুরিয়ান ট্রট ও বেলের ২০৮ রানের পার্টনারশিপের নীচে পিষে যখন ভারতীয় বোলিং ছটফট করছে, তখনই ধোনিকে বারবার আম্পায়ারের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা গেল। কতক্ষণে ম্যাচ ড্র মেনে নিয়ে মাঠ ছাড়া যায়, সেই রাস্তা বের করার চেষ্টা আর কি। কিন্তু প্রায় তিন দশক পর ভারতের মাটিতে ভারতীয়দের বাগে পেয়েছেন ইংরেজরা। এমন সুযোগ ছাড়েন? ট্রটের পর বেল-ও সেঞ্চুরি সেরে ফেললেন। তার পরেও তিন ওভার ব্যাট করলেন ইংরেজরা।
সিরিজ সেরা ক্যাপ্টেন কুক। ছবি: পিটিআই
ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, হতাশ ধোনিদের তখন প্রাণ ওষ্ঠাগত। ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস ইনিংসে ইতি টানার কথা জানাতেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। ম্যাচ ড্র, সিরিজে হার। প্রেসবক্সের বাঁদিকে ল্যাপটপের সামনে গালে হাত দিয়ে বসে ২৮ বছর আগের ঘটনা কি মনে পড়ছিল সে দিনের অধিনায়ক সুনীল গাওস্করের?
কোথায় চম্পানেরের ভুবন, আর কোথায় ঝাড়খন্ডের ধোনি। ইংরেজদের ক্রিকেট যুদ্ধে হারিয়ে ‘লগান’ মাফ করিয়েছিলেন যে যুবক, তিনি না থাকতেন বিলাসবহুল অট্টালিকায়, না পেতেন কোটি কোটি টাকা। সেটা অবশ্য গল্প। কিন্তু ধোনিরা তো পান। সেটা তো আর গল্প নয়। সোমবার জামথা স্টেডিয়ামে দেখা দৃশ্যগুলোও গল্প নয়। সাংবাদিক বৈঠকে ধোনি ঢুকলেন একগাল হাসি নিয়ে। মাঠের মধ্যে বীরু-গোতির ঠাট্টা-ইয়ার্কি চলল। কোহলি একবার নেচেও নিলেন। ধোনি যখন সাংবাদিক বৈঠকে বলছেন, “ভারতীয় ক্রিকেট একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলছে। অনেকেই বেরিয়ে গিয়েছে। তাদের জায়গায় নতুনরা এসেছে। নতুনদের আরও সময়, আরও সুযোগ দিতে হবে”, তখন মনে হল শুধু সময়-সুযোগ নয়, তাঁদের শিক্ষাও দিতে হবে।
অথচ ক্যাপ্টেন কুল-এর নিজের ৯৯-এ রান আউট হওয়া নিয়ে যেমন কোনও আফসোস নেই, তেমনই বললেন, “শুধু পরিসংখ্যানের দিকে তাকাবেন না। কে ক’টা উইকেট পেল? কত রান করল? পীযূষ চাওলা পাঁচ বছর পর টেস্টে ফিরে কত ভাল বল করল বলুন তো? আপনারা শুধু রাহুল, সচিন, লক্ষ্মণদের বিকল্পের কথা ভাবেন। ওদের বিকল্প হবে না। নতুনরা চাপ নিতে পারছে কি না, সেটাই বড় কথা। ০, ৪ দিয়ে শুরু করেও অনেকে পরে বড় ক্রিকেটার হয়েছে। নতুনদের নিয়ে গেল গেল রব তুলে লাভ নেই।” ভারতীয় অধিনায়কের মোদ্দা বক্তব্য দাঁড়াল, দেশের ক্রিকেটের নতুন প্রজন্মের অপেক্ষায় এই ক্ষতিগুলো মেনে নিতেই হবে। অবশ্য ২০০৭ বিশ্বকাপের ব্যর্থতার তুলনায় এটা কিছুই নয় বলে মনে করেন ধোনি।
টিম ধোনির ‘উপহার’
• আট বছর পর ভারতের মাটিতে ভারত প্রথম টেস্ট সিরিজ হারল। ঘরের মাঠে শেষ হেরেছিল ২০০৪-এ অস্ট্রেলিয়ার কাছে।
• ধোনির পাঁচ বছরের অধিনায়কত্ব জীবনে ঘরের মাঠে এই প্রথম টেস্ট সিরিজে হার।


রবীন্দ্র জাডেজারা না হয় নতুন। কিন্তু তিনি স্বয়ং তো ২০০৪ থেকে টানা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ইংরেজদের আউট করার জন্য দু’দিন ধরে কেন আরও একটু আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজালেন না? কেন এত ঢিলেঢালা হাবভাব? মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে নিয়ে এই প্রশ্ন সারা দিন ধরেই তুলে গেলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড়রা। সেটা হয়তো ধোনির কানেও পৌঁছেছে। সে জন্যই হয়তো বললেন, “স্লিপ, সিলি পয়েন্ট, ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ফিল্ডার রাখা মানেই আগ্রাসী হওয়া নয়। নিয়মিত ব্যাটসম্যানকে আউট করাটাই আসল কথা। কিন্তু এখানকার উইকেটের যা অবস্থা, তাতে ক’বার বল ক্লোজ ইন ফিল্ডারের জায়গায় পৌঁছেছে? এটা ঠিকই যে, এই সিরিজে আমাদের হাত থেকে বেশ কয়েকটা ক্যাচ পড়েছে। এটা ক্রিকেটে হয়েই থাকে। আসলে আরও বেশি প্র্যাক্টিস চাই। আর ব্যাটিংয়ে চাই বড় পার্টনারশিপ। কে বেশি রান করল, তার চেয়েও পার্টনারশিপ বেশি জরুরি। ইংল্যান্ড এটা পেরেছে বলেই সিরিজ জিতল। যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে। ওদের মন্টি, সোয়ান আর বিশেষ করে অ্যান্ডারসনই তো আসল তফাতটা গড়ে দিল।” অ্যান্ডারসনই এই টেস্টের ম্যান অব দ্য ম্যাচের এক লাখ টাকার পুরস্কার নিয়ে গেলেন। ইংরেজ অধিনায়ক কুকও সিরিজ জেতার মূল কৃতিত্বটা দিলেন তাঁর বোলারদের। যদিও ম্যান অব দ্য সিরিজের আড়াই লাখের চেকটা নিয়ে গেলেন কুক স্বয়ং।

প্রথম ইনিংস
ইংল্যান্ড: ৩৩০
ভারত: ৩২৬-৯ ডিঃ

দ্বিতীয় ইনিংস
ইংল্যান্ড: (আগের দিন ১৬১-৩)
ট্রট ক বিরাট বো অশ্বিন ১৪৩,
বেল নঃআঃ ১১৬,
রুট নঃআঃ ২০,
অতিরিক্ত ২০,
মোট ৩৫২-৪।
পতন: ৪৮, ৮১, ৯৪, ৩০২।
বোলিং: ইশান্ত ১৫-৩-৪২-০, প্রজ্ঞান ৪০-১৪-৭০-১, অশ্বিন ৩৮-১১-৯৯-২,
চাওলা ২৬-৬-৬৪-০, জাডেজা ৩৩-১৭-৫৯-১, গম্ভীর ২-০-৪-০।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.