তৃণমূল নেতার মৃত্যু
নিছকই ‘দুর্ঘটনা’ নাকি ‘খুন’, খোকনের ভূমিকায় সন্দেহে পুলিশ
শুধু গয়না হাতিয়ে নেওয়াই নয়, ‘দুর্ঘটনায়’ মৃত তৃণমূল নেতা দেবাশিস দাস ওরফে দেবা’র ঘনিষ্ঠ বন্ধু খোকনের ভূমিকা আগাগোড়া সন্দেহজনক বলে মনে করছে পুলিশ। খোকনের বাড়ির আলমারি থেকে ওই গয়না পাওয়ার পরে পুলিশের সেই সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়েছে। দেবাশিসবাবুর পরিবার এবং ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ নিশ্চিত হতে চাইছে যে, ওই ঘটনা আদৌ দুর্ঘটনা ছিল, না কি এর পিছনে অন্য কারণ রয়েছে।
গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তারাপীঠ থেকে ফেরার পথে সিঙ্গুরে টাটাদের প্রকল্পের কাছে অন্য একটি গাড়ির সঙ্গে দেবাশিসদের গাড়ির সংঘর্ষ হয়। দু’টি গাড়িই জ্বলে যায়। দেবাশিসবাবু-সহ গাড়িতে পাঁচ আরোহী ছিলেন। তাঁরা সকলেই কলকাতায় ফিরছিলেন। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানিয়েছিল, অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলা গাড়িটি দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে আড়াআড়ি ভাবে ধাক্কা মারে কারখানা থেকে বেরনো একটি ট্রাকে। দু’টি গাড়িতেই আগুন ধরে যায়। গাড়িতে সওয়ার পাঁচ বন্ধুর প্রত্যেকেই গাড়ি চালাতে পারতেন। সে দিন সন্ধ্যায় অবশ্য দেবাশিসবাবুই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। দেবাশিসবাবির পরিবারসূত্রেও এ কথা জানা গিয়েছে।
পুলিশের অনুমান, প্রত্যেকেই সেদিন মদ্যপান করেছিলেন। মাত্রাছাড়া মদ্যপানের কারণেই গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি। ইতিমধ্যেই বিশ্বজিৎ সেন নামে এক সওয়ারির হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে। তপন বিশ্বাস এবং বিশ্বজিৎ দাস নামে অন্য দু’জন এখনও হাসপাতালে ভর্তি। যদিও ধৃত অসিত তফাদার ওরফে খোকন পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁরা কেউই সে দিন মদ্যপান করেননি। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির চার সওয়ারিই মারাত্মক ভাবে জখম হলেও গায়ে আঁচড়টি পর্যন্ত লাগেনি খোকনের। আর সেটাই সন্দেহ জাগিয়েছে পুলিশের। সেদিন উদ্ধারকাজে আসা গ্রামবাসীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির হাবভাব মোটেও তাঁদের সুবিধের মনে হয়নি। চিকিৎসক এবং পুলিশের সামনে তিনি আহত হওয়ার ‘ভান’ করছিলেন। গ্রামবাসীদের আরও দাবি ছিল, সেই রাতে যে হেতু খোকনের অবস্থা স্থিতিশীল ছিল, সেই কারণে দুর্ঘটনায় আহত চার জনের সোনার ৮টি আংটি, ২টি চেন, ২টি ঘড়ি সবই তাঁরা খোকনবাবুর হাতেই দিয়েছিলেন।
দুর্ঘটনার ওই সব গয়না ও ঘড়ি না পেয়ে প্রাথমিক ভাবে গ্রামবাসীরাই কাঠগড়ায় ওঠেন। ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। কারণ, সে দিন দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির সওয়ারিদের উদ্ধার এবং হাসপাতালে যাঁরা পাঠাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মী। গয়না ফিরে পেতে রাজ্যের কৃষি প্রতিমন্ত্রী তথা সিঙ্গুরের কৃষক নেতা বেচারাম মান্না নিজে উদ্যোগী হন। শেষ পর্যন্ত খোকনকে ধরতেই গয়না নিয়ে রহস্যের জট খুলে যায়।
দেবাশিসবাবুর স্ত্রী ও দমদম পুর এলাকার মহিলা তৃণমূলের সভাপতি কেয়াদেবীর বক্তব্য, “দুঘর্টনার পরে খোকন আমাদের বাড়ি এলেও গয়নার কথা কিছু জানায়নি। ওর আগে টিভি সারাইয়ের দোকান ছিল। আমার স্বামীই ওকে প্রোমোটিংয়ের ব্যবসায় নামান। তবে ও যে গয়না চুরি করবে তা ভাবতে পারিনি।” তবে একই সঙ্গে তিনি জানান, তাঁর স্বামীর মৃত্যু ‘দুর্ঘটনা’ নাকি পরিকল্পিত ‘খুন’ তা পুলিশই তদন্ত করে বের করুক। পুলিশের উপর তাঁদের আস্থা রয়েছে। এ বিষয়ে জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “আমরা সমস্ত দিক খোলা রেখেই তদন্ত করছি। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনাক্রম মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে, অনেকেরই মনে হয়েছে মৃত বন্ধুর শরীরের গয়না যে লুকিয়ে রাখতে পারে, তার পক্ষে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.