জমি আন্দোলনের কাহিনি এ বার নাটকের চেহারায়।
টানা এক মাস ধরে ‘মাটির লড়াই’য়ের মহড়া দিয়েছেন সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ জমিদাতারা। আজ, মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর তাপসী মালিকের মৃত্যুদিন তথা শহিদ দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে তার অভিনয়। বাজেমেলিয়া, খাসেরভেড়ি, বেড়াবেড়ি, গোপালনগরের মতো যে সব গ্রামের মানুষ সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন-পর্বের সাক্ষী, তাঁদের কথা তুলে ধরতেই এই নাটকের আয়োজন বলে জানাচ্ছে স্থানীয় ‘কৃষি-জমি রক্ষা কমিটি’। অভিনেতা ‘অনিচ্ছুক’ জমিদাতারা। নির্দেশক, বেড়াবেড়ি পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান দুধকুমার ধাড়া বলছেন, “মানুষকে উজ্জীবিত করতেই নাটকের ভাবনা।” দুধকুমার জানাচ্ছেন, দর্শকাসনে স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়াও, রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রেরাও থাকতে পারেন। থাকার কথা জেলার সব তৃণমূল বিধায়ক এবং সাংসদেরও।
২০০৮-এ টাটারা সিঙ্গুর ছাড়ার পরে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক পট বদলেছে রাজ্যে। কিন্তু জমি এখনও অধরা রয়ে গিয়েছে ‘অনিচ্ছুক’দের। দু’টাকা কিলো দরে মাসে পরিবার পিছু ১৬ কেজি চাল আর দু’হাজার টাকার সাহায্যও যে অসন্তোষ কমাতে পারছে না, সে ইঙ্গিত ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। ‘কবে জমি ফেরত পাব’ প্রশ্ন তুলে সিঙ্গুরের জনতা বিক্ষোভ দেখিয়েছে জমি-আন্দোলন পর্বের নেতা তথা হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্নাকে। ওই ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রীর সিঙ্গুর-সফরেও চিঁড়ে বিশেষ ভেজেনি। |
যাঁর মেয়ের মৃত্যুকে ঘিরে এই শহিদ দিবস পালন, সেই মনোরঞ্জন মালিকেরও রুটিন বদলাতে দেখেছে সিঙ্গুর। এখন তিনি এলাকায় তৃণমূলের পরিচিত নেতা। ডাক পড়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে। সেখানে তাপসীর স্মৃতিচারণ করা ছাড়া, অন্য ভূমিকায় তাঁকে বিশেষ দেখেননি জমিহারাদের অনেকে।
এক সময় দুধের শিশুকে বাড়িতে রেখে জমি আন্দোলনের মিটিং-মিছিলে যেত সিঙ্গুরের গোপালনগর ঘোষপাড়ার সমাপ্তি ঘোষের পরিবার। এখন তাঁরাই বলছেন, “জমির টাকা ফিরিয়ে নিতে চাই। সংসার চলে না আর। জমির মালিক ছিলাম। এখন সিঙ্গুর ব্লক অফিসে চালের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’’ বাজেমেলিয়া, খাসেরবেড়ির একাধিক মুখ বলছে, “টাটাদের কারখানার জন্য জমি না দিয়ে ভুল করেছি। সে সময় টাকা নিলে আজ এ দিন দেখতে হত না!”
এই পরিস্থিতিতে অন্য মাত্রা যোগ করেছে জমি-আন্দোলন পর্বের অন্যতম নেতা তথা প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের দলের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক তোপ। অস্বস্তি ঢাকতেই কি নতুন করে স্থানীয় বাসিন্দাদের পুরনো স্মৃতি উস্কে দেবে ‘মাটির লড়াই’? বেচারামবাবু বলছেন, “সিঙ্গুরের মানুষ আমাদের পাশে ছিলেন-আছেন-থাকবেন।” দলের মধ্যে ‘বিভাজন’ যাতে ‘অনিচ্ছুক’দের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছে না দেয়, তা নিশ্চিত করতে কৃষি-জমি রক্ষা কমিটির নেতা মানিক দাস শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে আসার আমন্ত্রণও জানান রবীন্দ্রনাথবাবুকে।
‘মাটির লড়াই’ নাটক হতে পারে, সিঙ্গুরের মাটি ধরে রাখার লড়াই-ই চ্যালেঞ্জ মাস্টারমশাইয়ের দলের কাছে। |