সম্পাদকীয় ২...
অভিন্নতার ভ্রান্তি
শ্চিমবঙ্গের রাজ্য-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্নাতকোত্তর স্তরে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা চালু করিবার প্রস্তাব করিয়াছে উচ্চ শিক্ষা সংসদ। বিবিধ প্রবেশিকা আর থাকিবে না, সবই মিলিয়া মিশিয়া মহান হইয়া যাইবে! সাধারণ ভাবে অভিন্নতা সম্বন্ধে এ দেশের সমাজহৃদয়ে কিছু দুর্বলতা রহিয়াছে। ইহা আধ্যাত্মিক অদ্বৈতবাদের দেশ, সাম্যবাদী ভাবনার দ্বারা প্রভাবিত রাজ্য, সুতরাং অভিন্নতার কথা শুনিলেই বেশ লাগে। ভিন্নতার চাহিতে বুঝি অভিন্নতাই ভাল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ অবশ্য এই অভিন্নতার বিরোধিতা করিয়াছেন, তবে তাহা তাঁহাদের নিজস্ব যুক্তিতে। উচ্চশিক্ষায় স্নাতকোত্তর স্তরে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার বিষয়টি সমর্থন না করিবার সাধারণ তথা সামগ্রিক কারণটি ভিন্ন।
প্রবেশিকা পরীক্ষা আসলে শিক্ষায় এক প্রকারের কেন্দ্রীভবন বলবৎ করিতে চাহে। এই কেন্দ্রীভবন প্রক্রিয়া উচ্চশিক্ষার পক্ষে ক্ষতিকর। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সংস্কৃতি রহিয়াছে, রহিয়াছে শিক্ষা দানের নিজস্ব ঘরানা। সকল বিশ্ববিদ্যালয় এক প্রকারের পাঠক্রম নির্মাণ করে না, তাহা বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে আলাদা। আবার এমন কিছু বিষয় আছে, তাহা সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় না। আসলে স্নাতকোত্তর স্তরটি বিশেষায়ণের স্তর। নানা বিষয় নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়, স্নাতকরা তাঁহাদের সামর্থ্য অনুসারে যোগ্যতা অনুযায়ী বিশিষ্ট প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া এই স্তরে পড়িতে ঢুকিলে ভাল। স্নাতকস্তরে সাধারণ কতগুলি সামর্থ্য বা দক্ষতা শেখানো হয়। স্নাতকোত্তর স্তর সকলের জন্য নহে, নির্বিশেষের জন্য নহে, বিশেষ আগ্রহীদের জন্য। অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা এই মূল নীতিটিকে অস্বীকার করিতেছে। ভয় হয়, স্নাতকোত্তর স্তরে এই বিচিত্র বিশেষের জগৎটি অভিন্নতার দাপটে মুছিয়া দেওয়ার চেষ্টা হইতেছে না তো? বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও সমান মানের নহে। ফলে তাঁহারাই নিজেরা ঠিক করিয়া লইবেন প্রবেশিকা পরীক্ষার মান কেমন হইবে। উপর হইতে অভিন্নতার দাওয়াই চাপাইয়া দেওয়া অন্যায়। ইহাতে সাম্য, সামঞ্জস্য কিছুই আসিবে না, বরং বৈচিত্রহীন সহজিয়ার সাধনা শুরু হইবে। এই সূত্রে আর একটি কথাও বলিবার। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকোত্তর স্তরে আসনগুলিকে মুক্ত করিয়া দিক। যাদবপুরের স্নাতক মাত্রেই যাদবপুরে স্নাতকোত্তর স্তরে কেন বাড়তি বা বিশেষ সুযোগ পাইবে? যোগ্যতা বিবেচ্য। সকলকেই স্নাতকোত্তর স্তরের জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসিতে হইবে। অতিরিক্ত সুবিধা কাহারও প্রাপ্য নহে।
সার কথা একটিই। উচ্চশিক্ষা যোগ্যতার উপর দাঁড়াইয়া থাকুক, পাওয়াইয়া দিবার উপর নহে। উচ্চশিক্ষায় বৈচিত্র ও বিবিধতা থাকুক। কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা ও অভিন্নতা ক্রমে স্থিতিশীল কায়েমি স্বার্থের জন্ম দেয়। এই স্থিতিশীল কেন্দ্রীয় কায়েমি স্বার্থই পশ্চিমবঙ্গকে শিক্ষায় পিছাইয়া দিয়াছে। আবার কেন? জানিয়া শুনিয়া অভিন্নতার বিষ পান না করাই ভাল। বৈচিত্রময় যোগ্যতা ও বিকেন্দ্রীভূত স্নাতকোত্তর ব্যবস্থা কাম্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.