অচলাবস্থা যেন কাটছে না সাঁইথিয়া অভেদানন্দ কলেজে। সোমবার দিনভর তালাবন্ধ হয়েই রইল কলেজ। ফলে বহু ছাত্রছাত্রীদের ফিরে যেতে হল কলেজের গেট থেকেই। অন্য দিকে, কলেজ খোলা না পেয়ে ছাত্র সংসদের তরফে কলেজের সামনে দীর্ঘ ক্ষণ অবস্থান বিক্ষোভ করা হয়। বিক্ষোভকারীরা অবিলম্বে উত্তম মণ্ডলকে অস্থায়ী অধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগের দাবি জানাতে থাকেন।
এ দিন কেন কলেজের তালা খুলল না সে বিষয়ে কেউই কিছু বলতে পারছেন না। কলেজের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা জয়ন্ত চন্দ্র বলেন, “এ দিন আমি ও অন্যান্য কর্মীরা সময় মতো কলেজে আসলেও কলেজ খোলা না পেয়ে ফিরে যাই।” কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি দেবাশিস সাহা বলেন, “আজ কলেজ খুলেছে কিনা তা আমার জানা নেই। যদি নাও খুলে থাকে, কেন খুলল না তাও আমার জানা নেই।” ফোনে বহু বার যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি অস্থায়ী অধ্যক্ষ উত্তমবাবু। |
কলেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৪ সালের পর থেকে ওই কলেজের স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়ে সমস্যা চলছে। বিভিন্ন সময় কখনও কলেজের অধ্যাপকেরাই অস্থায়ী অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলে এসেছেন, কখনও স্থায়ী অধ্যক্ষও নিযুক্ত হয়েছে। কিন্তু কেউই স্থায়ী ভাবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলাননি। সকলেই দায়িত্ব নেওয়ার পর নানা কারণে ওই পদ ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকে আবার কলেজটিও ছেড়ে দিয়েছেন। পরে ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে অভেদানন্দ কলেজের অস্থায়ী অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়েছিলেন অধ্যাপক উত্তম মণ্ডল। কিন্তু গত ৭ ডিসেম্বর কলেজের ছাত্র সংসদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। উত্তমবাবু দাবি করেন, ছাত্র সংসদের নেতারা তাঁর সঙ্গে দুর্বব্যহার করেছেন। অপমানিত হয়ে তিনি কলেজের পরিচালন সমিতির কাছে নিজের পদত্যাগ পত্রও পাঠিয়ে দেন। তারপর থেকেই কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন উত্তমবাবু। দেবাশিসবাবুর যদিও দাবি, “উত্তমবাবুর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। শীঘ্রই কলেজে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
এমন টালমাটাল অবস্থায় প্রবল অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন ওই কলেজের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী বলেন, “শুরুর দিন থেকেই কোনও ক্লাসই হচ্ছে না আমাদের। এমন চলতে থাকলে আমাদের ভবিষ্যত পুরোপুরি অনিশ্চিত।” রীতি মতন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন এই কলেজের পড়ুয়ারা। তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র বলেন, “একজন স্থায়ী অধ্যক্ষ থাকলে হয়তো এমন পরিস্থিতি তৈরি হত না। আমরা দূরদূরান্ত থেকে কষ্ট করে এই কলেজে পড়তে আসি। এখন মনে হচ্ছে পুরোটাই পণ্ডশ্রম!” সমস্যায় পড়েছেন কলেজের তফশিলি সম্প্রদায়ভুক্ত পড়ুয়ারাও। অচলাবস্থা চলতে থাকায় বিভিন্ন সরকারি বৃত্তি ও অন্যান্য ক্ষেত্রের ফর্ম পূরণ করতে পারছেন না বলে তাঁদের অভিযোগ। কলেজের এমন পরিস্থিতিতে মুখে খুলতে চাইছেন না শিক্ষকেরাও।
তবে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসি (ইন্সপেক্টর অফ কলেজেস) দেবকুমার পাঁজার ব্যঙ্গ, “ওই কলেজটির পরিস্থিতি এত ভাল যে, ওই কলেজের অধ্যক্ষ পদের জন্য কেউই আবেদন করেন না!” পরে তিনি যোগ করে বলেন, “সাঁইথিয়ার ওই কলেজের অচলাবস্থার জন্য শিক্ষক বা কর্মীদের তেমন ক্ষতি হচ্ছে না। আসল সমস্যায় আছেন ছাত্রছাত্রীরাই।” অচলাবস্থা কাটাতে এবং বর্তমান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আজ, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরিদর্শক দল ওই কলেজে যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ দিকে কলেজের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দু’টি ছাত্র সংগঠনের মধ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। অস্থায়ী অধ্যক্ষ উত্তম মণ্ডলের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যেই রাজ্যপাল-সহ প্রশাসনের নানা মহলে চিঠি পাঠিয়েছে ছাত্র সংসদের ক্ষমতায় থাকা ছাত্র পরিষদ। অন্য দিকে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদও থেমে নেই। তারা সোমবারই সাঁইথিয়ায় একটি মিছিল করেছে। সংগঠনের পাল্টা দাবি, অধ্যক্ষ নিগ্রহে যুক্ত পড়ুয়াদের গ্রেফতার করতে হবে। দু’টি সংগঠনই অবশ্য কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষের দাবিও জানিয়েছে। |