রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পদক প্রাপ্তির শতবর্ষ পূর্তিতে নব কলেবরে ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকাশ করছে বিশ্বভারতী। কবির নোবেল প্রাপ্তির শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আজ, মঙ্গলবার বিশ্বভারতীতে উপস্থিত থাকবেন বিশ্বভারতীর পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। থাকবেন বিশ্বভারতীর প্রধান তথা রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন।
সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে বিশ্বভারতীর রবীন্দ্র-অধ্যাপক উদয়নারায়ণ সিংহ বলেন, “রাষ্ট্রপতি মঙ্গলবার বিকেল ৩টে ৫০ মিনিট নাগাদ বিনয় ভবনের লাগোয়া মাঠে হেলিকপ্টার থেকে নামবেন। বিশ্বভারতীর রীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তথা বিশ্বভারতীর পরিদর্শককে অভ্যর্থনা জানানো হবে।” |
প্রশাসন সূত্রের খবর, এর পরে প্রণববাবু বোলপুরের জামবুনি নিজের দাদা পীযূষ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে যাবেন। পীযুষবাবুর স্ত্রী অসুস্থ। বৌদিকে দেখে আসার পাশাপাশি দাদার সঙ্গে পারিবারিক আলোচনাও করবেন রাষ্ট্রপতি। সেখানে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সময় কাটিয়ে বিশ্বভারতীর রথীন্দ্র অতিথিগৃহে রবীন্দ্রভবনের পক্ষে গীতাঞ্জলির দ্বিভাষিক সংস্করণ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রণববাবু। রবীন্দ্রভবন দ্বারা প্রকাশিত দ্বিভাষিক গীতাঞ্জলির নতুন সংস্করণের উন্মোচন করবেন রাজ্যপাল। গীতাঞ্জলির প্রথম কপি উপহার হিসেবে তিনি তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতির হাতে।
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি, দুষ্প্রাপ্য কিছু বিষয়বস্তু সমেত এই প্রথম গীতাঞ্জলির সংস্করণ প্রকাশিত হতে চলেছে। গ্রন্থটির প্রচ্ছদে লেখা আছে গীতাঞ্জলি (সং অফারিংস)। রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলি লিখেছিলেন ১৯১০ সালে। মূল কাব্যগ্রন্থে ১৫৭টি কবিতা ছিল। সেগুলির মধ্যে ১০৩টি কবিতার ইংরেজি অনুবাদ করেছিলেন কবি। ‘সং অফারিংস’-এ সেই অনুদিত কবিতাগুলি ছিল। বিশ্বভারতীর এক আধিকারিকের কথায়, “নতুন সংস্করণটিতে অনুদিত ১০৩টি কবিতা থাকবে। সেগুলির মূল বাংলা কবিতাও থাকবে। পাশাপাশি এতে সংযুক্ত করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের হাতে লেখা ৭০টি বাংলা কবিতার পাণ্ডুলিপি।” গ্রন্থটিতে থাকছে আরও কিছু বিরল ঘটনার উল্লেখ। গীতাঞ্জলি নিয়ে রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত সাহিত্য সমালোচক স্টপফর্ড এ ব্রুক এবং টমাস স্টার্জ মুর তাঁদের অনুভূতির কথা জানিয়ে কবিকে যে চিঠি লিখেছিলেন, সেগুলিও থাকবে গীতাঞ্জলির নতুন সংস্করণে। থাকছে রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত নোবেল পুরস্কার প্রদানের টেলিগ্রাম, দুষ্প্রাপ্য কিছু আলোক চিত্র, কবির নোবেল পুরস্কার পাওয়া নিয়ে সেই সময়ের বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিলিপি প্রভৃতি। এমনকী কবির নোবেল পাওয়া নিয়ে একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিরূপ সমালোচনাও ছাপা হয়েছে এই সংস্করণে। |
গীতাঞ্জলি প্রথম প্রকাশিত হয় ‘গীতাঞ্জলি সং অফারিংস’ নামে ১৯১২ সালে। সে বছরই কবি নোবেল পুরস্কার পান। দ্বিতীয় সংস্করণটি বেরোয় ১৯৩৮-এ। এর পর বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ১৯৯৭ সালে ইংরেজি ও বাংলায় এক সঙ্গে ‘গীতাঞ্জলি সং অফারিংস’ প্রকাশ করেন। ওই তিনটি সংস্করণই এখন দুষ্প্রাপ্য বলে জানিয়েছেন রবীন্দ্রভবন কর্তৃপক্ষ। রবীন্দ্রভবনের অধ্যক্ষ তপতী মুখোপাধ্যায় ও বিশ্বভারতীর ইংরেজির অধ্যাপক অমৃত সেন নতুন কলেবরে গ্রন্থটির সম্পাদনা করেছেন। বিশ্বভারতী সূত্রের খবর, ৩৭৩ পাতার নতুন গ্রন্থটির দাম করা হয়েছে এক হাজার টাকা।
বুধবার সকালে প্রণববাবু যাবেন সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজে। ১৯৫৩ থেকে ’৫৬ সাল পর্যন্ত এই কলেজেই পড়েছেন প্রণববাবু। ওই দিন কলেজে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। দুপুর ১টায় বিশ্বভারতীর উত্তরায়ণে রবীন্দ্রনাথের নোবেল পদক প্রাপ্তির শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় যোগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। সেখানে তাঁর বক্তৃতা দেওয়ারও কথা। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যপাল, বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক তান চুং। উপাচার্য এখানে ‘টেগোর মরাল অফ ইনক্লুসিভ এডুকেশন’ বিষয় নিয়ে বক্তব্য পেশ করবেন। দুপুর পৌনে ৩টেয় প্রণববাবুর বোলপুর ছেড়ে উড়ে যাওয়ার কথা।
|
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পদক প্রাপ্তির শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আজ, মঙ্গলবার শান্তিনিকেতনে আসছেন বিশ্বভারতীর পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতি ছাড়াও বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান তথা রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। তিনিই রবীন্দ্রভবন দ্বারা প্রকাশিত দ্বিভাষিক গীতাঞ্জলির নতুন সংস্করণের আনুষ্ঠানিক সূচনা করবেন। বইয়ের প্রথম কপিটি উপহার হিসেবে তিনি তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতির হাতে। বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠানের পরে অসুস্থ বৌদিকে দেখতে বোলপুরের জামবুনিতে দাদার বাড়িতে যাবেন প্রণববাবু। অপেক্ষায় দাদা পীযুষ ও বৌদি মঞ্জু মুখোপাধ্যায়। |