নিজস্ব সংবাদদাতা • কোচবিহার |
বদলির জন্য অনটনে এক কর্মী আত্মঘাতী হয়েছেন, এই অভিযোগ ওঠায় এনবিএসটিসির বর্তমান ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি মুরুগনের অপসারণ চাইলেন তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাক্তন চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। বৃহস্পতিবার দুপুরে লোকনাথ দে (৫৪) নামে ওই আত্মঘাতী কর্মীর বাড়িতে গিয়ে এ কথা জানান নাটাবাড়ির বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবু। তিনি বলেন, “পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রকে সব জানিয়েছি। বর্তমান এমডি সরকারি পরিবহণ ব্যবসা কেমন হওয়া উচিত তা বোঝেন না। মাথায় যে কী আছে জানি না! না হলে কোচবিহারে গ্যারাজের কর্মীর অভাব থাকা সত্ত্বেও এখানকার লোককে সিউড়িতে বদলি করে দেন? সে জন্য লোকটা মরেই গেল। কাজেই এমডি-কে অবিলম্বে না-সরালে ফের এমন ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। এ কথা রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রীকে জানিয়ে শ্রমিক-স্বার্থে ওঁকে সরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছি।”
বুধবার কোচবিহার শহরে কলাবাগানের বাসিন্দা লোকনাথবাবুর ঝুলন্ত দেহ মেলে তাঁর শোওয়ার ঘরে। একটি সই-হীন সুইসাইড নোটে লোকনাথবাবু লিখে যান, জুলাই মাসে সিউড়িতে বদলি করায় তিনি দু’জায়গার খরচ চালাতে পারছিলেন না। তার উপরে লোকনাথবাবুর স্ত্রী যক্ষ্মা রোগে ভুগে হাসপাতালে। ছেলে বিবাহিত হলেও সামান্য দিনমজুর। রোজ কাজ জোটে না। সব মিলিয়ে অনটনেই তিনি আত্মঘাতী হন বলে চিঠিতে লেখা হয়েছে। এমতাবস্থায়, এ দিন দুপুরে কলকাতা থেকে ফিরে সোজা লোকনাথবাবুর বাড়িতে যান রবীন্দ্রনাথবাবু। সেখানে তিনি মৃতের স্ত্রীর হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেন। পরিবহণ মন্ত্রী মদনবাবু ব্যক্তিগত ভাবে ওই টাকা পাঠিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। মৃতের ছেলেকে এনবিএসটিসিতে চাকরি দেওয়ার জন্য শীঘ্রই মদনবাবু বিশেষ নির্দেশ পাঠাবেন বলে তিনি আশ্বাস দেন। এর পরেই সংস্থার এমডি-র সমালোচনায় সরব হন রবীন্দ্রনাথবাবু। যাঁর বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ, সেই এমডি মুরুগন জানান, তাঁর সম্পর্কে কী বলা হয়েছে তা দেখে তিনি মন্তব্য করবেন। তাঁর বক্তব্য, “প্রাক্তন চেয়ারম্যান কী বলেছেন ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রতিক্রিয়া জানাব।”
ঘটনাচক্রে রবীন্দ্রনাথবাবু যখন চেয়ারম্যান ছিলেন সেই সময়ে কর্মচারীদের ঢালাও বদলি করা নিয়েই মুরুগনের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাধে। এমডি বদলির নির্দেশ জারি করলে রবীন্দ্রনাথবাবু কার্যকর করতে বাধা দেন। রবীন্দ্রনাথবাবুর যুক্তি, “আচমকা ঢালাও বদলি করা হলে সংস্থার কাজের গতি কমার আশঙ্কা থাকে। অফিসার পর্যায়ে প্রথম বদলি দরকার। পরে পর্যায়ক্রমে শ্রমিক বদলির কথা ভাবা উচিত।” বিরোধ শুরুর দু’দিনের মাথায় রবীন্দ্রনাথবাবুকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গৌতমবাবু বলেন, “বদলি নীতি একেবারেই সংস্থার অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা নিয়ে এখন কিছু বলব না।” |