নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়নাগুড়ি |
বিকেল থেকে কুয়াশায় মুখ ঢাকছে মাঠঘাট। রাতভর টুপটাপ হিম ঝরছে। সকালের পরে কুয়াশা কেটে উঁকি দিচ্ছে সূর্য। হাল্কা রোদ উঠছে। মিঠে রোদে শহরবাসী আড্ডায় মজলেও কপালে চিন্তার ভাজ ফেলেছে ময়নাগুড়ি সহ ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকার চাষিদের। আগের দিন দেখা খেতের তরতাজা সব্জির চারা বিকেলে ঝিমিয়ে ঢলে পড়ছে। রকমারি ওষুধ ছড়িয়েও সেই মড়ক সামলানো সম্ভব হচ্ছে না। বুধবার আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখে আতঙ্ক বেড়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এলাকার চাষিদের আশঙ্কা, শীতে বৃষ্টি হলে আলু থেকে টম্যাটো, সবই নষ্ট হয়ে যাবে।
কৃষি দফতরের কর্তারাও রাতভর কুয়াশার দাপট দেখে উদ্বিগ্ন। তাঁরা জানান, একটানা কুয়াশার ফলে ছত্রাকের দ্রুত বংশবিস্তার ঘটে। এর ফলে রবি শস্যে ছত্রাক জাতীয় রোগের প্রকোপ বাড়ে। রাতভর কুয়াশার পরে দিনে কড়া রোদ থাকলে তেমন সমস্যা হয় না। গত রবিবার থেকে ডুয়ার্স-সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা ঘন কুয়াশায় তলিয়ে গেলেও ঝলমলে কড়া রোদের দেখা নেই। জলপাইগুড়ি মহকুমা কৃষি আধিকারিক হরিশ্চন্দ্র রায় বলেন, “এই পরিবেশ বিভিন্ন প্রজাতির ছত্রাকের বংশবিস্তারের উপযোগী। তাই ধসার মতো বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।” এই প্রসঙ্গে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা কৃষি আধিকারিক জ্যোতির্ময় বিশ্বাস বলেছেন, “একটানা কুয়াশার ফলে ফুলকপির চাষে ভালই ক্ষতি হবে।” |
কৃষি দফতর সূত্রেই জানানো হয়েছে, এই বছরে জলপাইগুড়ি মহকুমার ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে সব্জির চাষ শুরু হয়েছে। ময়নাগুড়ি ও ধূপগুড়ি ব্লকে বেশি চাষ হয়েছে টম্যাটো, বেগুন, সিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, লঙ্কা, রকমারি শাক। পাশাপাশি খেতে চলছে আলু বোনার কাজ। এই অবস্থায় ময়নাগুড়ির মাধবডাঙা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দ্বীপনগর গ্রামের চাষি বিপিন দাস বলেন, “সোমবার সকালে টম্যাটো খেতে গিয়ে দেখি কয়েকটি গাছ ঢলে পড়েছে। বিকেলে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় অন্তত একশো। ওষুধ স্প্রে করছি। কিন্তু লাভ হচ্ছে না। কড়া রোদ না হলে খেত টিকবে না।” শুধু টম্যাটো খেতই নয়, যে সব চাষি লাভের আশায় নভেম্বরের মাঝামাঝিতে আলু বুনেছিলেন তাঁদেরও মাথায় হাত পড়েছে। সেখানেও ধসা রোগের সমস্যা দেখা দিয়েছে। চিন্তায় পড়েছেন রামসাই এলাকার বেগুন চাষিরা। সিপিএমের কৃষক সংগঠনের স্থানীয় নেতা তথা বেগুন চাষি কেশব রায় জানান, তাঁর দেড় বিঘা বেগুন খেতের বেশির ভাগ গাছ ঝিমিয়ে পড়েছে। ফুলকপির রং পাল্টে যাচ্ছে। তা আর বাজারে বিক্রি হবে না। |