কেন্দ্র কঠোর, নারাজ রাজ্য |
|
২৭শে-র পরে সেট-টপ বক্স ছাড়া টিভি নয়
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
রাজ্য যা-ই বলুক না কেন, আগামী ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যেই কলকাতা মেট্রো এলাকার কেব্ল টিভিতে অ্যানালগ সিগন্যাল বন্ধ করতে হবে। এর ফলে ওই তারিখের পর থেকে সেট-টপ বক্স ছাড়া আর টেলিভিশন দেখা যাবে না। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক।
রাজ্য সরকার অবশ্য কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত মানবে না এ দিনই জানিয়ে দিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। রাতে তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে কেব্ল ব্যবসা চালাতে গেলে রাজ্য সরকারের নির্দেশ মানতেই হবে। কেন্দ্র কী বলল না-বলল, তাতে কিছু যায়-আসে না। আমরা আমাদের আগের সিদ্ধান্তই বহাল রাখছি।” কেন্দ্রের কঠোর সিদ্ধান্ত এবং রাজ্যের ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাবে মাল্টি সিস্টেম অপারেটর (এমএসও) সংস্থাগুলির প্রায় জাঁতাকলে পড়ার অবস্থা। ব্যবসা হারানোর আশঙ্কা করছে তারা
কলকাতা-সহ চারটি মহানগরে সেট-টপ বক্স চালু করার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে টানাপোড়েন চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এ দিন দিল্লির বৈঠকে কলকাতার এমএসও-দের কাছ থেকে ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে অ্যানালগ সিগন্যাল বন্ধ করার ব্যাপারে মুচলেকা লিখিয়ে নিয়েছে তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক। ২৮ তারিখ থেকে সেট-টপ বক্স চালু করার নির্দেশ না-মানলে এমএসও-দের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় তথ্যসচিব। কলকাতা মেট্রো এলাকায় অ্যানালগ সিগন্যাল বন্ধ করার কাজ কতটা এগিয়েছে, তা জানতে মহানগরীর পাঁচটি বড় এমএসও সংস্থাকে বৈঠকে ডাকা হয় এক দিনের নোটিসে। চলতি মাসেই দিল্লি ও মুম্বই মেট্রো এলাকার এমএসও সংস্থাগুলির সঙ্গে কেন্দ্রের আলাদা বৈঠক হয়েছে বলে একটি সূত্রে জানানো হয়। শুধু কলকাতার বিষয়টি আলোচনার জন্যই এ দিন তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের সদর শাস্ত্রী ভবনে বিশেষ বৈঠক বসে। ছিলেন তথ্যসচিব উদয় বর্মা, সম্প্রচার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব সুপ্রিয়া সাহু এবং আরও তিন পদস্থ অফিসার। বেলা ৩টে থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আলোচনা চলে। কলকাতা থেকে বৈঠকে গিয়েছিলেন সিটি, মন্থন, ডিজি, ডেন সিলভারলাইন এবং কেসিবিপিএল সংস্থার প্রতিনিধিরা।
বৈঠকে এমএসও-দের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়, রাজ্য সরকার বারে বারেই বলছে, বিশেষত উৎসবের মরসুমে অ্যানালগ সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গেলে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দেবে। তা ছাড়া গরিবদের এলাকায় সম্প্রচার বজায় রাখার জন্য কম টাকায় এবং কিস্তিতে সেট-টপ বক্স দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে বলেও দাবি তুলেছে রাজ্য। এই অবস্থায় রাজ্য সরকারের নির্দেশ না-মেনে অ্যানালগ সিগন্যাল বন্ধ করলে তাঁরা বিপাকে পড়বেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন এমএসও-র প্রতিনিধিরা।
কিন্তু কোনও ওজর-আপত্তিই মানতে রাজি হয়নি তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক। ওই মন্ত্রকের এক মুখপাত্র বলেন, “বৈঠকে সচিব জানিয়ে দেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুরোধ মেনে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। উৎসব শেষ হয়ে এসেছে। আর সময় বাড়ানো সম্ভব নয়।” সচিব জানিয়ে দেন, এমএসও সংস্থাগুলিকে এ মাসের ২৭ তারিখের মধ্যে সব অ্যানালগ সিগন্যাল বন্ধ করতেই হবে। নইলে বাতিল করা হবে তাদের লাইসেন্স। যুগ্মসচিব জানান, অন্য চারটি ছোট সংস্থাকে দু’-এক দিনের মধ্যেই এই নির্দেশ জানিয়ে দেওয়া হবে। বৈঠকের পরে একটি এমএসও সংস্থার প্রতিনিধি বলেন, “মুচলেকা লিখিয়ে তথ্য মন্ত্রক আমাদের হাত-পা বেঁধে দিল। রাজ্য সরকার যদি এখনও জেদ ধরে থাকে, সব চেয়ে মুশকিলে পড়ব আমরা। আশা করি, কেন্দ্র ও রাজ্যের বিবাদের মধ্যে পড়ে আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হবে না।” সিটি কেব্লের প্রধান সুরেশ শেঠিয়া বলেন, “কলকাতায় ফিরে গিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আমাদের কথা বলতেই হবে।” |