সংযম সংখ্যায় হয় না, ভিন্ন সুরে বার্তা পার্থের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
আইনসভার ভিতরে-বাইরে আচরণের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের আরও সতর্ক হওয়ার বার্তা দিলেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর গলায় প্রচ্ছন্ন ভাবে শোনা গেল আত্মসমালোচনার সুরও।
বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনের শেষলগ্নে বৃহস্পতিবার প্রথামাফিক ধন্যবাদজ্ঞাপক ভাষণ ছিল পার্থবাবুর। সেই অবসরেই পরিষদীয় মন্ত্রী বলেন, “সংযম সংখ্যার উপরে নির্ভর করে না। সংযম ব্যক্তিগত আচরণের উপরে নির্ভরশীল। বিধানসভার গরিমা, ঐতিহ্য আমাদের সকলকেই যত্নবান হয়ে রক্ষা করতে হবে। বাইরে তৃতীয় চোখ আমাদের দেখছে, সব সময় মনে রাখতে হবে।” অধিবেশন কক্ষের মধ্যেই দু’দিন আগে শাসক তৃণমূল ও বিরোধী বামফ্রন্টের বিধায়কদের মধ্যে মারামারির ঘটনার প্রেক্ষিতে পার্থবাবুর এ দিনের বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ। শাসক পক্ষের হাতে বিরোধী বিধায়কদের আক্রান্ত হওয়ার পরেই সে দিন পার্থবাবু মন্তব্য করেছিলেন, তাঁদের যা সংখ্যা, তাতে তাঁরা সংযত না-থাকলে অন্য রকম ব্যাপার হত! তাঁর ওই মন্তব্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ‘আমরা ২৩৫, ওরা ৩০’-এর ছায়া দেখেছিলেন অনেকে। সংখ্যার উপরে সংযম নির্ভর করে না বলে পার্থবাবু এ দিন আগের ভুল বার্তা শোধরাতে চেয়েছেন বলে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মত।বিধায়কদের একাংশের আচরণে এ বারের অধিবেশনে যে ছন্দপতন হয়েছে, তা-ও উল্লেখ করেন পার্থবাবু। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে আসার পরে মানুষ বিধানসভার ভিতরে-বাইরে বিধায়কদের ভূমিকার দিকে নজর রাখেন, এই তথ্যও স্মরণ করিয়ে দেন। এ বারের অধিবেশনে প্রথম বারের জন্য বিধানসভায় উপস্থিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোলমাল বা বিতর্কিত বিষয়ে যাননি। স্পিকারের ধন্যবাদ প্রস্তাব হয়ে অধিবেশনে যখন যবনিকা পড়তে চলেছে, সেই সময়ে হঠাৎই বিধানসভায় আসেন মুখ্যমন্ত্রী। স্পিকার তাঁকেও ধন্যবাদ জানাতে অনুরোধ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এখানে যাঁরা আছেন, তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।” সভায় সেই সময় বাম বা কংগ্রেস, কোনও বিরোধী দলই ছিল না। তাই মুখ্যমন্ত্রীর ধন্যবাদ-ভাষণে বিরোধীদের এড়িয়ে গিয়েছেন বলেই পরিষদীয় সূত্রের ব্যাখ্যা।
ধন্যবাদ দিতে গিয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু বিধায়কের আচরণে তাঁর অসন্তোষ গোপন করেননি। তাঁর বক্তব্য, “কিছু অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটেছে। বিধায়কদের অনুরোধ করেছি সংযত থাকতে। বিধানসভার নিজস্ব উত্তাপ আছে। কিন্তু তা এমন জায়গায় উচিত নয়, যাতে বিধায়কদের ভূমিকার সমালোচনা হয় সর্বত্র।” অধিবেশন কক্ষে বিধায়কদের মারামারির আগে স্পিকারকে নিগ্রহের চেষ্টা, সভার কাজ পণ্ড করার অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয় সিপিএমের তিন বিধায়ককে। আক্রমণকারী শাসক দলের বিধায়কদের শাস্তি না-দিয়ে একতরফা ভাবে তাদের বিধায়কদের সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে বিধানসভা চত্বরে নকল অধিবেশন চালাচ্ছে বামফ্রন্ট। স্পিকার এ দিন বলেন, “ওঁদের (বিরোধী) জেদি মনোভাবের জন্যই এটা (শাস্তি প্রত্যাহার) হতে পারল না। চেষ্টা করেছিলাম সকলকে নিয়ে চলার। সাসপেন্ড করেছি, যাতে কেউ মনে না করেন বিধানসভায় যা খুশি করতে পারি! দুঃখপ্রকাশ করতে বললেও ওঁরা করেননি।” চলতি অধিবেশনের জন্য সাসপেন্ড হয়েছিলেন তিন সিপিএম বিধায়ক। হিসাবমতো শাস্তির মেয়াদ আপনিই ফুরিয়েছে এ দিন। |
বিরোধীশূন্য অধিবেশন কক্ষে যখন ধন্যবাদজ্ঞাপন চলছে, বাইরে বিধানসভা ভবনের সিঁড়ি ও চত্বরে বিরোধী বামেদের নকল বিধানসভা তখন জমজমাট! স্পিকার-সহ সরকার পক্ষের ভূমিকা ও শারীরিক আক্রমণ-সহ বিরোধীদের সার্বিক কণ্ঠরোধের প্রতিবাদেই এই নকল অধিবেশনে এ দিন ‘সংগ্রাম মোল্লা’ নামে স্পিকার সেজেছিলেন সিপিএমের আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। ধূপগুড়ির মমতা রায় কখনও ‘সমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’ নামে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায়, কখনও ‘রূপালি গুহ’ নাম নিয়ে ডেপুটি স্পিকারের আসনে! সূর্যকান্ত মিশ্র নাম ভূমিকায় বিরোধী দলনেতা হিসেবেই অভিনয় করেন! শাসক ও বিরোধী বিধায়কদের মধ্যে সেখানে নকল মারামারিও হয়েছে প্রবল! যার পরে সিপিএমের বিধায়ক জাহানারা খান স্পিকারের কাছে গিয়ে অভিযোগ করেন, মেরে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাসপেন্ডেড বিধায়ক নাজমুল হক বিলের জবাবি বক্তৃতা করেছেন পরিষদীয় মন্ত্রী সেজে। বিরোধী দলনেতার তাঁর উদ্দেশে প্রশ্ন, “রোগা হয়ে গেলেন কী করে?” |