নতুন কিছু নয়, দাবি পার্থর |
পরিষদীয় সচিব নিয়ে বামেদের চিঠি রাজ্যপালকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিতর্ক জিইয়ে রেখেই পাশ হয়ে গেল রাজ্যে পরিষদীয় সচিব (পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি) নিয়োগের বিল। সরকারের দাবি, বিধায়কদের এই সচিব পদে নিয়োগ করা হলে উন্নয়নের কাজে গতি আসবে। বিরোধীদের অভিযোগ, এতে এক দিকে যেমন অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হবে, তেমনই রাজ্যের কোষাগারে অহেতুক বোঝা বাড়বে। বিলটিকে আইনে পরিণত করার বাকি প্রক্রিয়া আটকানোর দাবি জানিয়ে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বিরোধী বামফ্রন্টের পরিষদীয় দল। চিঠিতে তারা লিখেছে, এই বিল আইন হিসাবে কার্যকর হলে সংবিধানের ১৬৪ (১এ) ধারাকে লঙ্ঘন করবে।
বিরোধীশূন্য বিধানসভায় ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি (অ্যাপয়েন্টমেন্ট, স্যালারি, অ্যালাওয়েন্সেস অ্যান্ড মিসলেনিয়াস প্রভিশনস) বিল’ পাশ করাতে গিয়ে বৃহস্পতিবার পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে যে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে, তা এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং কৃষক-শ্রমিকের মুখে হাসি ফোটাতে এই নিয়োগ।” তাঁর ব্যাখ্যা, রাজ্যে আইএএস-আইপিএস এবং আধিকারিকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাই উন্নয়নমূলক কাজে গতি আনতে নতুন পরিষদীয় সচিবের পদ তৈরি করছে রাজ্য। পার্থবাবু আরও দাবি করেছেন, এই ব্যবস্থা নতুন নয়। ১৯৫২ সালের আইনে এমন ব্যবস্থা আছে। তাঁর কথায়, “প্রস্তাবিত বিলে পরিষদীয় সচিব পদের কাজের পরিধি বাড়ানো হল।” এঁরা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ও বেতন পাবেন। পূর্ণমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পরিষদীয় সচিব যথাক্রমে প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর সমকক্ষ বলে বিবেচিত হবেন।
পরে পার্থবাবু দাবি করেন, বাম আমলেও এই ব্যবস্থা চালু ছিল। এমনকী, ফরওয়ার্ড ব্লকের হেমন্ত বসু যখন যুক্তফ্রন্টে, সেই সময়েও এই সচিব ব্যবস্থার চল ছিল বলে নিজের ঘরে দাবি করেছেন শিল্পমন্ত্রী। বামেরা অবশ্য তাঁর দাবি খারিজ করে দিয়েছে। বিরোধী দলনেতা তথা বাম আমলের মন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, “গভর্মেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট, ১৯১৯ অনুসারে এই রকম পদ সৃষ্টি করা হয়। পরে ১৯৩৫ সালে তা রুলে পরিণত হয়। রুলে সেই অবকাশ এখনও রয়েছে। কিন্তু বিধায়কদের সচিব হিসাবে বসানোর চেষ্টা বাম আমলে হয়নি।” বিধানসভা বিশেষজ্ঞ দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ব্রিটিশ আমলে যখন মুখ্যমন্ত্রী-সহ ১১ জনের মন্ত্রিসভা ছিল, তখন কয়েক জন বিধায়ককে পরিষদীয় সচিব হিসাবে বিধানসভায় দায়িত্ব পালন করতে হত। কিন্তু স্বাধীনতার পরে কোনও রাজ্য সরকারের আমলেই এই ব্যবস্থা চালু ছিল না। পরিষদীয় সচিবদের প্রশাসনিক ক্ষমতা দেওয়ায় জটিলতা বাড়বে বলেও বিরোধীদের আশঙ্কা।
সূর্যবাবুর মতে, “তৃণমূলের অভ্যন্তরে বিরোধ ঠেকাতেই বিধায়কদের পদ, গাড়ি, ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। এই বিল জনবিরোধীই শুধু নয়, সংবিধান বিরোধীও।” মুখ্যমন্ত্রী যখন আর্থিক টানাটানির কথা বলছেন, তখন নতুন পরিষদীয় সচিব নিয়োগ করে টাকা খরচের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেসও। এই বিল পেশের আগেই তারা ওয়াকআউট করেছিল। ফলে তৃণমূল ছাড়া বিল পেশের সময় অধিবেশনে ছিলেন এক মাত্র এসইউসি বিধায়ক তরুণ নস্কর। শাসক দলে ভাঙন ঠেকাতেই এমন পদ বিতরণের ব্যবস্থা কি না, এই অভিযোগের জবাবে পার্থবাবু অবশ্য মন্তব্যে রাজি হননি। বিল নিয়ে প্রশ্নের মুখে মিডিয়া সেন্টারের সাংবাদিক সম্মেলন ছেড়ে উঠে যান তিনি। |