বনে প্রবেশের অধিকার দাবি বাসিন্দাদের |
‘অরণ্যের অধিকার’ ফিরে পেতে আজ, শুক্রবার, আন্দোলন শুরু করছেন সুন্দরবনের মানুষ।
অরণ্যবাসী এবং অরণ্য-নির্ভর মানুষের হাতে ‘অরণ্যের অধিকার’ ফিরিয়ে দিতে ২০০৬ সালে ‘তফশিলি জনজাতি ও অন্যান্য পরম্পরাগত বনবাসীদের বনাধিকার স্বীকৃতি আইন’ তৈরি করে কেন্দ্রীয় সরকার। এ রাজ্যে ১১টি জেলাকে চিহ্নিত করে ওই আইন কার্যকর করার প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু তা থেকে বাদ পড়েছে উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা। অথচ ওই দুই জেলাতেই রয়েছে সুন্দরবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চল। এই জেলাগুলিতে লক্ষ লক্ষ বাসিন্দার জীবিকা অরণ্যের উপর নির্ভর করে।
বনাধিকার আইন কার্যকর করার মধ্যে দিয়ে ‘অরণ্যের অধিকার’ ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন সুন্দরবনের মানুষ। আজ, শুক্রবার থেকে আটদিন ধরে সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপে নৌকায় ঘুরে ঘুরে নিজেদের দাবির সমর্থনে প্রচার চালাবেন তাঁরা। |
ওই আইন কার্যকর করার ব্যাপারে দুই জেলার প্রশাসন কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি না করলেও পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, বর্ধমান, হুগলি, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, কোচবিহার এবং দার্জিলিং-এ মিলিয়ে মোট ২৮১৯টি ‘বনাধিকার কমিটি’ তৈরি হয়েছে। কমিটিতে ভূমি, বন, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন এবং অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের প্রতিনিধিরাও থাকছেন। বনের অধিকার নিয়ে যে কোনও আবেদন মহকুমা এবং জেলা কমিটির অনুমোদনের ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করবে গ্রামস্তরের বনাধিকার কমিটি। কিন্তু এই প্রক্রিয়া সুন্দরবন সংলগ্ন দুই জেলায় শুরু হয়নি।
অথচ রাজ্যের মধ্যে সুন্দরবনেই কৃষি বা অন্যান্য উপায়ে জীবিকা অর্জনের সুযোগ সব চাইতে কম। আয়লার পর চাষের জমিতে নোনা জল জমে চাষ আবাদ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তিন বছর পরেও অবস্থা স্বাভাবিক নয়। তার উপর জঙ্গলে ঢোকা বন্ধ হওয়ায় সুন্দরবনের মানুষ সংকটে পড়েছেন। অনেকেই বিকল্প জীবিকার সন্ধানে সুন্দরবন ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছেন। কিন্তু এ বার বনাধিকার আইনের ওপর ভরসা করে তাঁদের অনেকে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন।
সুন্দরবন মৎস্যজীবী যৌথ সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক গোবিন্দ দাসের অভিযোগ, “মাছ ধরা বা মধু সংগ্রহের জন্য বন দফতরের দেওয়া বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট (বিএলসি) থাকা সত্ত্বেও বন দফতর জঙ্গলে যেতে দিচ্ছে না। নেতিধোপানি, চাঁদবালি বা চামটার মতো যে জঙ্গলগুলোয় অবাধে ঢোকা যেত সেগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে। জঙ্গলের আরও কয়েকটি ব্লক সংরক্ষিত ঘোষণা করায় মাছ ধরার এলাকা আরও কমেছে।” ছোট নৌকা (স্থানীয় পরিভাষা হালদার নৌকা) নিয়ে যাঁরা মাছ ধরতে যান তাঁদের ওপরেই বনরক্ষীদের অত্যাচার বেশি। গোবিন্দবাবুর অভিযোগ, বনরক্ষীরা ওই দরিদ্র মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে মাছ ধরার জাল কেড়ে নেয়। নৌকাটাও আটকে রাখে। তখন অনাহার ছাড়া গতি থাকে না। |
রাজ্যের অনুন্নত শ্রেণি কল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস আইনটি কার্যকর করার পুরো দায় বন দফতরের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। আর বন দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, অরণ্য ও বন্যপ্রাণী বাঁচাতে গেলে মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতেই হবে।
অরণ্যজীবীরা অবশ্য এ যুক্তি মানতে রাজি নন। গোবিন্দবাবু বলেন, “ছোট মৎস্যজীবীরা সুন্দরবনের পরিবেশ কখনও নষ্ট করেনি। করবেও না। তারা নদীতে আর খাড়িতে মাছ আর কাঁকড়া ধরে। কেউ মধু সংগ্রহ করে, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে। আমরা বরং সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা বাঁচিয়ে অরণ্যের স্থায়ী ব্যবহারেই বিশ্বাস রাখি।” |