জমি দিলে মিলবে চাকরি। এমনটাই আশা করে নিজেদের বসত বাড়ি ভেঙে জমি দিয়েছিলেন বাসন্তীর ভরতগড় পঞ্চায়েতের এক আদিবাসী পরিবার।
বছর দু’য়েক আগে গ্রামে তৈরিও হয় উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কিন্তু চাকরি মেলেনি। ভিটেমাটি হারিয়ে এখন পথে বসেছেন দুই আদিবাসী ভাই। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশেই একটি অস্থায়ী ঘর তৈরি করে পরিবারের ১০-১২ জন সদস্যকে নিয়ে রয়েছেন তাঁরা। আশা পূরণ না হওয়ায় ক্ষোভে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন দুই ভাই। ফলে তৈরি হয়েও দু’বছর ধরে বন্ধই পড়ে রয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শিবগঞ্জ মৌজার প্রায় ৬ শতক জায়গা ওই দুই ভাইয়ের কাছ থেকে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করেছিল ভরতগড় পঞ্চায়েত। সে সময়ে পঞ্চায়েত প্রধান জমিদাতা পরিবারের এক জনকে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলে দাবি। এর পরে ওই জমিতে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি হয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র। জমিদাতা দুই ভাই জয় সিংহ সর্দার এবং মান সিংহ সর্দার বলেন, “প্রধান কথা দিয়েছিলেন, জমি দিলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিবারের এক জনের চাকরি হবে। সে জন্য নিজেদের বাড়ি ভেঙে ৬ শতক জায়গা দিয়েছিলাম উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করার জন্য। স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হলেও কথা রাখেননি পঞ্চায়েত প্রধান। পরিবারের কারও চাকরি হয়নি।” |
জয় সিংহ বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্র উদ্বোধনের আগে চাকরির জন্য দুই ভাই পঞ্চায়েত এবং ব্লক অফিসে যোগাযোগ করেছিলাম। কোনও লাভ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তালা দিয়েছি।” মান সিংহ আক্ষেপ করে বলেন, “দিনমজুরি করে কোনও মতে সংসার চলে। সম্পদ বলতে ছিল ওই ৬ শতক জমি। চাকরি দেওয়া হবে বলে দাম না নিয়ে পঞ্চায়েতকে জমিটা দিয়ে দিলাম। সব হয়ে যাওয়ার পর এখন প্রধান তাঁর প্রতিশ্রুতির কথা মানতে চাইছেন না। কিন্তু আমাদের তো জমিও গেল, চাকরিও হল না।” এ দিকে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু না হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন এলাকার মানুষ।
ভরতগড় পঞ্চায়েতের আরএসপি-র প্রধান সবিতা মণ্ডল বলেন, “ওই পরিবারকে এমন কোনও প্রতিশ্রুতি দিয়ে জমি নেওয়া হয়েছিল বলে মনে পড়ছে না। যত দূর জানি এলাকার মানুষের উপকার হবে বলেই ওই দুই ভাই স্বেচ্ছায় তাঁদের জমি দিয়েছিলেন। তাঁরা নিজেরা রাজি না থাকলে কারও পক্ষে জমি জোর করে নেওয়া সম্ভব নয়। এখন তাঁরা কেন এমন বলছে, বুঝতে পারছি না। ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলব।” বাসন্তীর বিডিও সৌম্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ভাবে তো কাউকে চাকরি দেওয়া যায় না। তবে কী ভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, দেখছি।” |