রঞ্জিতে বাংলার বিপর্যয়ে এতটাই কষ্ট লাগছে যে কোনও রাখঢাক না করে বলে দিচ্ছি, এখনই কোচ উরকেরি রামনকে তাড়ানো উচিত।
কোচ মাঠে নেমে খেলে না ঠিকই। কিন্তু প্লেয়ারদের ভাল পারফরম্যান্সের পিছনে, দলগত সাফল্যের পিছনে কোচের ভূমিকা বিরাট। সে জন্য আমার বিচারে বাংলা ক্রিকেটের ব্যর্থতার জন্য সত্তর ভাগ দায়ী কোচ রামন। বাকি তিরিশ ভাগ দায়ী ক্রিকেটাররা। এ মরসুমে বাংলার টিম স্পিরিট, গেমপ্ল্যান, স্ট্র্যাটেজি এ সবের তীব্র অভাবের পিছনে রামনের ব্যর্থতাই আসল।
রামন এই নিয়ে তিন মরসুম বাংলাকে কোচিং করাচ্ছে। গত বছরও রঞ্জিতে বলার মতো কিছু করেনি। কিন্তু সেটা নিয়ে বেশি চর্চা হয়নি, বাংলা ঘরোয়া ওয়ান ডে টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন হওয়ায়। কিন্তু বিজয় হাজারে ট্রফি জেতায় রামনের বিরাট ভূমিকা নেই। ওটা বাংলা জিতেছিল লক্ষ্মীরতনের অসাধারণ সেঞ্চুরির জোরে। প্লেয়ারের অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য কোচের কেরামতি থাকে না। ওটা সেই প্লেয়ারের প্রতিভা আর দক্ষতায় ঘটে।
ক্রিকেটে অধিনায়কের মতো কোচের বলার সুযোগ নেই এক জন ক্যাপ্টেন ততটাই ভাল, যতটা ভাল তার টিম। তা হলে আর তুমি কোচ হয়েছ কী করতে? তোমার কাজ যারা খারাপ খেলছে তাদের ভাল খেলানো। যারা ভাল খেলছে তাদের আরও ভাল খেলানো। মনোজ তিওয়ারির দল মোটেই খারাপ নয়। বরং আমার সময় বাংলা যে বার তিনেক রঞ্জি ফাইনাল খেলে এক বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তখন অরুণ লাল, আমি আর কখনও ফুচা-র (প্রণব রায়) মতো এক-দু’জন বাদে বাংলা দলে ইন্ডিয়া প্লেয়ার বা জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ার মতো ক্রিকেটার তেমন ছিল না। সেখানে এখন বাংলা দলে ভারত, ভারত ‘এ’, জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়া ক্রিকেটার সাত-আট জন। মনোজ, দিন্দা, ঋদ্ধিমান, সামি, অনুষ্টুপ সৌরভ সরকার... । তা সত্ত্বেও রামন দলটাকে ঘেঁটে ফেলেছে। অথচ সিএবি ২৫ লাখ টাকা দিয়ে রামনের মতো ভিনরাজ্যের কোচ রেখে দিচ্ছে বছরের পর বছর।
বাংলায় কি কোচ নেই? ভনিতা না করেই বলছি, আমিই তো ভারত ‘এ’-কে কোচিং করিয়েছি। আমার কি বাংলাকে কোচিং করার ক্ষমতা নেই? বাংলার চাই ফুলটাইম কোচ। যার কাছে অফসিজনেও যখন-তখন ক্রিকেটার ভুলভ্রান্তি শুধরোতে যেতে পারবে। রামন চেন্নাই থেকে রঞ্জির চার-পাঁচ সপ্তাহ আগে কলকাতায় এসে সেই প্রয়োজনটা কী ভাবে মেটাবে? বছরের অর্ধেকেরও কম সময়ে বাংলায় থেকে কী করে বুঝবে কোন জেলায় কী ক্রিকেট প্রতিভা রয়েছে? নির্বাচকেরা ১৫-২০ জনের যে তালিকা দেয়, সেটাই ওর কাছে গোটা বাংলা ক্রিকেট। নির্বাচকেরাই বা কোচের সঙ্গে সারা বছর বাংলা ক্রিকেট নিয়ে কতটুকু আলোচনার সময় পায়?
বাংলার টপঅর্ডার এ মরসুমে চূড়ান্ত ব্যর্থ। যার পুরো চাপটা পড়েছে মিডল অর্ডারের ওপর। ধারাবাহিক ব্যাটিং ব্যর্থতাই বাংলার বিপর্যয়ের আসল কারণ। কিন্তু ছ’টা ম্যাচের পরেও কোচ তার দলের প্রথম তিন ব্যাটসম্যান কারা সেটাই ‘সেট’ করতে পারল না? আজ পার্থসারথী তো কাল অরিন্দম আবার পরশু রোহন বন্দ্যোপাধ্যায় তো পরের দিন শ্রীবৎস। পাড়ার ক্রিকেটেও এত ঘনঘন টপঅর্ডারে বদল হয় না। তার মানে কোচ তার দলের ট্যাকটিক্স, কম্বিনেশন ঠিক করতে ব্যর্থ। প্রংশসা করব মনোজ, ঋদ্ধিমান, লক্ষ্মীর ব্যাটিংয়ের। প্রায় প্রতি ইনিংসেই প্রচণ্ড চাপের মুখে ওদের কেউ না কেউ বড় রান পেয়েছে। বোলারদের মধ্যে সৌরভ সরকার যখনই খেলার সুযোগ পেয়েছে বেশ কিছু উইকেট তুলেছে। স্পিন সহায়ক উইকেট পেতেই ইরেশ সাক্সেনা সৌরাষ্ট্র ম্যাচে ১১ উইকেট পেয়েছে। কিন্তু দলগত পারফরম্যান্স বলতে যা বোঝায় বাংলার ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। |