দিনের শেষেও শান্তিতে নেই তিনি। দলের দুই সাপোর্ট স্টাফকে উইকেটের হাল দেখতে পাঠালেন ইংল্যান্ডের কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে হাল শোনার পরও! বোধহয় উইকেট সম্পর্কে যাবতীয় আপডেট একেবারে চেঁচেপুঁছে না নিয়ে মাঠ ছাড়তে নারাজ ইংল্যান্ড কোচ। শুক্রবার টেস্টের দ্বিতীয় দিন প্রতিপক্ষ তো শুধু ভারতের বোলাররা নন, জামথার ভিসিএ স্টেডিয়ামে ২২ গজের ওই জমিটুকুও।
প্রথম দিনই বা কী কম লড়াই হল উইকেট ও ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে? এক ক্রিকেট ওয়েবসাইটের ইংরেজ সাংবাদিক তো ‘সাব স্ট্যান্ডার্ড উইকেট’-এর তকমাও লাগিয়ে দিলেন। দিনের শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও কেভিন পিটারসেন বলে দিলেন, “আমার টেস্ট জীবনে এত কঠিন উইকেটে কখনও খেলিনি।” মিনিট কয়েক পরেই জীবনের প্রথম টেস্ট খেলা রবীন্দ্র জাডেজা আবার বলে গেলেন, “এই উইকেটে না স্পিনাররা সাহায্য পাচ্ছে, না পেসাররা। মন্থর এবং বাউন্সও কম।” সব মিলিয়ে যেন প্রথম দিন, জামথা স্টেডিয়ামে ধাঁধার নাম ছিল উইকেটই। ২৮ বছর পর ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হলে যে কুকবাহিনী ও ব্রিটিশ মিডিয়া এই উইকেটকেই বলির পাঁঠা বানাবে, তার আভাস কিন্তু প্রথম দিনই পাওয়া গেল। |
তাই বলে ভাববেন না, বৃহস্পতিবার বিকেলে জয়ের আভাস রেখে মাঠ ছাড়লেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। ধোনিদের সবচেয়ে বড় সমর্থকও বলবেন না সে কথা। প্রথম দিন ইংল্যান্ডের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দিয়েও ১৯৯-এ বেঁধে রাখা গেল ঠিকই, কিন্তু তাতেও ভারতীয় শিবিরে স্বস্তি নেই। টেস্ট ক্রিকেটের দুনিয়ায় সদ্য পা রাখা জো রুট এবং ৬২ নম্বর টেস্ট খেলা ম্যাট প্রায়রই এখন ভারতীয় বোলারদের পথের কাঁটা। শুক্রবার সকালে দ্রুত ইংল্যান্ডকে গুটিয়ে দিয়ে নিজেরা বড় ইনিংস গড়তে না পারলে ভারতের কপালে দুঃখ আছে। এই উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করে টেস্ট জেতার স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত দুঃস্বপ্নে না পরিণত হয়। নিষ্পাপ শিশুর মতো মুখ যাঁর, সেই রুট শুক্রবার ইশান্ত, ওঝা, অশ্বিন, জাডেজা, চাওলাদের প্রতি নিষ্ঠুর হয়ে উঠলেই কেলেঙ্কারি।
টেস্ট জীবনের শেষ পাতা লিখেছিলেন যেখানে, সেই জামথা স্টেডিয়ামের উইকেট দেখে কিছুটা অবাক হয়েছেন কি? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলছিলেন, “উইকেটের যা অবস্থা, তাতে ভারতের বোলাররা ভালই বল করেছে বলতে হবে।” চলতি সিরিজের সবচেয়ে কম দর্শক দেখা গেল এ দিনই, জামথার গ্যালারিতে। কিন্তু এমন উইকেট হতে থাকলে সংখ্যাটা প্রতি ম্যাচে আরও কমবে। ধোনি কি এমন উইকেটই চেয়েছিলেন? |
বোধহয় না। উইকেটে যেমন বল কোমরের বেশি উঠছেই না, তেমন আউটফিল্ডেও বল এগোচ্ছে আমাদের মহাত্মা গাঁধী রোডে ফেঁসে থাকা গাড়ির গতিতে। সে জন্য বোলারদেরও খুব কমই ক্লোজ ইন ফিল্ডার বা স্লিপ ফিল্ডার নিয়ে বল করতে দেখা গেল। এই উইকেটে কেপি, বীরুদের মতো দানবিক ক্ষমতার ব্যাটসম্যান ছাড়া খাপ খোলা বেশ মুশকিল। কেপি ব্যাট করে উঠে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। বীরুর জন্য কী অপেক্ষা করে আছে কে জানে।
পিটারসেনের চিন্তা-ভাবনাহীন ফ্লিক দেখে মনে হল এমন উইকেটে না খেলতে পারলেই বাঁচেন। সাংবাদিক বৈঠকেও কেপি-র একই চেহারা। বিরক্ত, ক্লান্ত। তবে তাঁর সেই ফ্লিক মিড উইকেটে যে ভাবে প্রায় ঘাসের ওপর থেকে তুলে নিলেন প্রজ্ঞান ওঝা, তাতে আবার উল্টো ছবি। অশান্তি, বিভ্রান্তি দুরে সরিয়ে রেখে ভারতীয় শিবির বেশ তেতেছে। শর্ট কভার থেকে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কোহলির নেওয়া বেলের ক্যাচেও যেন সেই ইঙ্গিতই। তিন স্পিনারের সেই সাবেকি প্রথায় ফিরে গিয়ে ভারতকে এতটা চাঙ্গা লাগছে কি উইকেটের জন্যই? জাডেজার কথায় তেমনই আভাস। বললেন, “পরের দিকে উইকেট ভাঙবে। আমরা সেই দিকেই তাকিয়ে।” কিন্তু জাড্ডু কি ভুলে গেলেন, সাহেবদের শিবিরেও ছুরিতে শান দিচ্ছেন দুই বিশ্বমানের স্পিনার? |
আমার টেস্ট জীবনে এত কঠিন উইকেটে কখনও ব্যাট করিনি। রান তোলা এখানে
প্রচণ্ড কঠিন।
আমার কোনও ধারণাই নেই এই উইকেট পরে কী আচরণ করবে।
কেভিন পিটারসেন
|
আরও একটা জঘন্য উইকেট নাগপুরে। ভারতকে এর খেসারত দিতে হতে পারে। ধোনি নিজের
কবর খোঁড়ো ঠিক আছে, কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটকে কেন সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছ? বোর্ড কী বলছে?
বিষেণ সিংহ বেদী |
|
ভারতীয় শিবিরে ভাল দুটো খবর। ইশান্তের ফর্মে ফেরা। সমানে লাইন ও লেংথ বজায় রেখে গেলেন। দুই ইংরেজ ওপেনার তাঁর শিকার। কেপি-কেও ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিলেন। আর একটা ভাল খবর, জাডেজার পারফরম্যান্স। কিন্তু শেষ ভাল খবরের সন্ধান কি পাওয়া যাবে টেস্ট শেষে? ওই ২২ গজেই লুকিয়ে আছে এর উত্তর।
|
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস |
কুক এলবিডব্লিউ ইশান্ত ১
কম্পটন ক ধোনি বো ইশান্ত ৩
ট্রট বো জাডেজা ৪৪
পিটারসেন ক প্রজ্ঞান বো জাডেজা ৭৩
বেল ক বিরাট বো চাওলা ১
রুট ব্যাটিং ৩১
প্রায়র ব্যাটিং ৩৪
অতিরিক্ত ১২
মোট ১৯৯-৫
পতন: ৩, ১৬, ১০২, ১১৯, ১৩৯
বোলিং: ইশান্ত ১৯-৭-৩২-২, প্রজ্ঞান ২৭-৯-৫০-০
জাডেজা ২৫-১৩-৩৪-২, চাওলা ১৩-১-৩৯-১, অশ্বিন ১৩-২-৩২-০ |
|
|