রঘুর ফাঁসে আটকা পড়ল মর্গ্যানের অশ্বমেধের ঘোড়া
ম্যাচ হারতে হলেও রণনীতি থেকে একচুল সরবেন না ট্রেভর জেমস মর্গ্যান! ব্রিটিশ কোচের গোঁ বলে কথা!
বৃহস্পতিবারের ম্যাচ যেমন। কলকাতা লিগে এক জনও বিদেশি না খেলানোর নীতি আঁকড়ে থাকার খেসারত দিয়ে থেমে গেল মর্গ্যানের ইস্টবেঙ্গলের টানা বত্রিশ ম্যাচের অপরাজিত-রথ। আর্মান্দো কোলাসো, করিম বেঞ্চারিফা কিংবা সুভাষ ভৌমিকের মতো তাবড় তাবড় কোচেরা যা করে দেখাতে পারেননি, টানা তিনবার সেটা করে দেখালেন এরিয়ান কোচ রঘু নন্দী।
রঘুর হাতে কী কোনও জাদুর লাঠি আছে, যার ছোঁয়াতে ‘ট্রেভর-ম্যানিয়া’ অকেজো হয়ে পড়ে? আই লিগের নামী-দামি কোচেরা নির্দ্বিধায় রঘুর শরণাপন্ন হতে পারেন। মর্গ্যান-ব্রিগেডকে আটকাতে ‘জাদু কি ছড়ি’-র সন্ধান দিতে পারেন হাওড়ার বাসিন্দাই। কী সেই রহস্য?
এক) ইস্টবেঙ্গলের অ্যাটাকিং ফুটবলকে দুরমুশ করো বুদ্ধিদীপ্ত কাউন্টার অ্যাটাক দিয়ে।
দুই) মাঝমাঠের তালা খোলো, ফুটবলারের সংখ্যা বাড়িয়ে।
গোপাল-পঙ্কজ। যাঁদের গোলে এরিয়ানের বাজিমাত।
নিজেদের ম্যাচে লাল-হলুদ নেমেছিল সম্পূর্ণ স্বদেশি-ব্রিগেড নিয়ে। সৈকত-সুবোধরা আক্রমণের সময় উঠে তো পড়লেন, কিন্তু বিদেশিদের মতো দ্রুত নেমে আসার ক্ষেত্রে গড়িমসি দেখালেন। আর এখান থেকেই শুরু রঘুর কেরামতি। এরিয়ানের গোপাল-পঙ্কজরা বিপক্ষ রক্ষণের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে গোল করে বেরিয়ে গেলেন। বারো মিনিটেই প্রায় চল্লিশ গজ দূর থেকে সোয়ার্ভিং শটে বিশ্বমানের গোল রাজারহাটের গোপাল দেবনাথের। পরের আধ ঘণ্টা সমানে-সমানে টক্কর হলেও, গোলের সন্ধান দিতে পারেননি রবিন সিংহরা। বিরতির পরে প্রবীণ অ্যালভিটো আর প্রথম দলের একমাত্র ফুটবলার মননদীপ নামতে কিছুটা জ্বলে ওঠে ইস্টবেঙ্গল। রবিনের ফ্লিক থেকে রাজু গায়কোয়াড়ের হেডে গোল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ছক বদলে (৪-৪-২ থেকে ৪-৫-১), মাঝমাঠে লোক বাড়িয়ে ম্যাচ শেষ হওয়ার পনেরো মিনিট আগে এরিয়ান ২-১ করে ফেলে। রাম মালিকের ক্রস থেকে পঙ্কজ মৌলার গোল। টেকনো এরিয়ানের মহা-গৌরবের দিনে ক্লাবের প্রধান স্পনসরকর্তা সত্যম রায়চৌধুরি গোটা দলের জন্য আর্থিক পুরস্কারও ঘোষণা করে দিলেন।
রঘুর কৃতিত্বকে ছোট করে দেখার কোনও জায়গা নেই। তবে এটাও মানতে হবে, মাঝ মরসুমে এসেও প্রথম বার সম্পূর্ণ নতুন দল নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন মর্গ্যান। নিটফল, প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৪০ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডকে ছোঁয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল তাঁর। ইস্টবেঙ্গল কোচ বললেন, “আবার নতুন করে শুরু করব।” কিন্তু মর্গ্যান-নীতি নিয়ে কী ভাবছেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা? কোচ-কর্মকর্তা মতান্তরের ঘটনা মোহনবাগানে হামেশা দেখা গেলেও, ইস্টবেঙ্গল কর্তারা ক্লাবের ঐতিহ্য মেনে কোচের পাশেই দাঁড়াচ্ছেন। ক্লাবের অন্দরমহলে কোথাও আফসোসের টুকরো মেঘ জমা হলেও, তার আঁচ কোচের উপর পড়ছে না। বরং মর্গ্যানের নীতিকে সমর্থন জানিয়ে ক্লাবের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, “আমাদের লক্ষ্য ট্রফি। সেটা ক্লাবে ঢুকলেই হবে। দল হারলে কষ্ট হয়। কিন্তু কোচকে আমরা পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি। ওঁর কাজে নাক গলাই না।”
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ হোক কিংবা লা লিগা, সব মাঠেই এখন অঘটনের কাহিনি হইহই করে ঘুরছে। দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দল নামানো বিশ্ব ফুটবলে আর নতুন নয়। কিন্তু গোটা একটা লিগ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা বোধহয় কলকাতা লিগেই সম্ভব। বৃহস্পতিবার চলতি লিগের মাঝখানে সম্পূর্ণ নতুন দল নামিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করে ফেললেন সাহেব-কোচ। মহা-আশঙ্কা হচ্ছে, লাল-হলুদ কোচের কট্টর পেশাদারি মনোভাব কলকাতা লিগকে এলেবেলে বানিয়ে টুর্নামেন্টের ভবিষ্যৎকেই না অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.