মনে হচ্ছে আমাকেও ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি মাখতে হবে
হাওড়া ব্রিজ পেরিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ইস্টবেঙ্গল মাঠে আসার সময় আশা আর আশঙ্কা দু’টোই কাজ করছিল মনের মধ্যে।
আশা এ জন্যই যে, গত দু’বছর আমার টিম ট্রেভর মর্গ্যানের ইস্টবেঙ্গলকে হেলায় হারিয়েছিল। নিজের উপর এই বিশ্বাসটা ছিলই যে এ বারও জিতব।
আর আশঙ্কার কারণ এ বারের ইস্টবেঙ্গল টিমটা। যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই হারাচ্ছে। ভাবছিলাম টানা ৩২টা ম্যাচ অপরাজিত থাকা ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে পারব তো?
আমার কুড়ি বছরের কোচিং জীবনে কলকাতার এমন কোনও তারকাসমৃদ্ধ দল নেই যাদের হারাইনি। কিন্তু মর্গ্যানকে হারানোর মধ্যে একটা আলাদা আনন্দ আছে। করিম বেঞ্চারিফা, সুব্রত ভট্টাচার্য, সুভাষ ভৌমিক-সহ সব বড় কোচের কথা মাথায় রেখেও বলছি, মর্গ্যান আমার দেখা সবচেয়ে ভাল কোচ। তার চেয়েও মনে হয় ভাল মানুষ। আজও তো শেষ বাঁশি বাজার এক সেকেন্ডের মধ্যে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলেন।
স্তম্ভিত চাণক্য। ছবি: উৎপল সরকার
মর্গ্যানের টিমকে এ বার হারানোর পর একটা অন্য রকম আনন্দ হচ্ছে। কারণ টিমটার অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা আমিই ভেঙে দিলাম। অনেকেই ম্যাচের পর বলছিলেন, ইস্টবেঙ্গলের দু’নম্বর টিমকে নাকি হারিয়েছি। মর্গ্যান প্রথম দল নামালে জিততে পারতাম না। তাদের সবিনয়ে বলেছি, গত বছর লিগে আমরা ইস্টবেঙ্গলকে ৪-১ গোলে হারিয়েছিলাম। সেই ম্যাচে কিন্তু মর্গ্যান আই লিগের পুরো টিম খেলিয়েছিলেন। তিন বিদেশি টোলগে, পেন, ওপারা পর্যন্ত ছিল সেই দলে। আর একটা কথা, খাতায়-কলমে ইস্টবেঙ্গলের রিজার্ভ বেঞ্চও আমার টিমের চেয়ে শক্তিশালী। রাজু, ভাসুম, সুশান্তরা তো আই লিগ, ফেড কাপে খেলে। আমি তো কাউকে বলিনি পুরো টিম নামিও না। আমার মনে হয়, ইস্টবেঙ্গলের ব্রিটিশ কোচ জিতে-জিতে এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিলেন মনে করেছিলেন, আমাদের উড়িয়ে দেবেন। সেটা হয়নি কারণ আমি ছেলেদের বলে দিয়েছিলাম, ওদের অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা আমাদের ভাঙতেই হবে।
বারবার মর্গ্যানকে হারানোর রসায়নটা কিন্তু আমি জেনে গিয়েছি। একই মাঠে অনুশীলন করার জন্য নয়, ওদের খেলা নিয়মিত দেখে-দেখে স্ট্র্যাটেজিটা ঠিক করেছিলাম। মর্গ্যান প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক ফুটবল পছন্দ করেন। নিজের স্টপারকেও পাঠিয়ে দেন বিপক্ষ বক্সে গোল করতে। ফলে মর্গ্যানের ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে হলে প্রতিআক্রমণই সবচেয়ে বড় অস্ত্র। লোক বাড়িয়ে পাল্টা আক্রমণে গেলেই এই ইস্টবেঙ্গল ভেঙে পড়ে। সেটা ছেলেদের ব্ল্যাক বোর্ডে বুঝিয়ে মাঠে পাঠিয়েছিলাম। গত দু’বারের মতো এ বারও ট্যাকটিক্সটা কিন্তু কাজে লেগে গেল।
ময়দানের কোনও বড় দল আমার টিমের সামনে পড়লে আমি আলাদা মোটিভশেন পাই। একটা যন্ত্রণাও কাজ করে মনের মধ্যে। বারবার সেরা কোচেদের কোটি কোটি টাকার টিমকে হারিয়ে দিই। তবুও আমার ডাক আসে না বড় দলের কোচিং করার জন্য। নাম করতে চাই না, তবে এমন অনেক কোচ বড় দলের সঙ্গে এখন যুক্ত আছেন যাদের ময়দানে কোনও সাফল্যই নেই। জানি না বড় দলের কোচ হতে গেলে আর কী প্রমাণ করতে হবে।
মোহিন্দর অমরনাথ দেখলাম আনন্দবাজারেই বলেছেন, আমাদের কোচেদের এখনই ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি মাখা উচিত, যাতে গায়ের রংটা ফর্সা হয়। যাতে ওরা জাতীয় দলের কোচের চাকরিটা পায়। আমারও মনে হচ্ছে এত সাফল্যের পরেও বড় ক্লাবের কর্তাদের মন ভেজাতে নিজের এই কৃষ্ণবর্ণ মুখে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি মেখে আমাকে কোচিং করাতে আসতে হবে এ বার।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.