প্রশাসনিক অনুমোদনহীন ভাবে একশো দিনের প্রকল্পে একটি কাজ হয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল। যে ঘটনার তদন্তে গিয়ে বৃহস্পতিবার হেনস্থা হতে হল সরকারি আধিকারিকদের। নথিপত্র কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়।
এ দিন দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে গোঘাট ১ ব্লকের শ্যাওড়া পঞ্চায়েতের শ্যাওড়া গ্রাম-সংলগ্ন আমোদর নদের ধারে। প্রায় শ’চারেক উত্তেজিত শ্রমিকের সামনে পিছু হঠতে হয় গুটি কয় পুলিশ কর্মীকে। পরে আরও পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। যদিও এ দিন ঘটনাস্থলে থেকে তদন্তের কাজ আর এগোয়নি। পঞ্চায়েত অফিসে এসে নথিপত্র খতিয়ে দেখন আধিকারিকেরা।
বিডিও দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস এবং আরও ৫ জন সরকারি আধিকারিক এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ তদন্তে এসেছিলেন গ্রামে। বিডিও জানান, অশ্রাব্য গালিগালাজ শুনতে হয়েছে সকলকে। হেনস্থা হতে হয়েছে। আজ, শুক্রবার ফের ওই এলাকায় তদন্ত-দলের যাওয়ার কথা।
পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, চলতি বছরের জুন মাস নাগাদ শ্যাওড়ার বলদাঘাটা থেকে গাজনঘাট পর্যন্ত একশো দিনের কাজের প্রকল্পে আমোদর নদের অংশ সংস্কারের জন্য ২১ লক্ষ টাকা ধার্য হয়েছিল। ১৪ হাজার শ্রম দিবসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু ৬৫০২টি শ্রমদিবসের পরেই ব্লক প্রশাসন জানিয়ে দেয়, ওই কাজে সরকারি অনুমতি নেই। কাজ বন্ধ করতেও বলা হয়।
শ্যাওড়া পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক তাপসকুমার জুঁইয়ের অভিযোগ, জেলা থেকে প্রকল্পটির কারিগরী অনুমোদন মিলেছিল। প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়ার জন্য ব্লক ও মহকুমা প্রশাসনের কাছে একাধিক বার দরবার করা হয়। কিন্তু আধিকারিকদের উদাসীনতায় এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ।
অন্য দিকে, বিডিও দেবেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “গত ৯ জুলাই আমাকে লিখিত ভাবে জানানো হয়, পঞ্চায়েত কাজটি শুরু করতে চায়। আমি পর দিনই প্রধানের কাছে জানতে চাই, বর্ষা এসে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কাজ সুসম্পন্ন করা যাবে কিনা। দু’দিন পরেই পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানান, ইতিমধ্যেই ২২ দিন কাজ হয়ে গিয়েছে। সমস্ত বিষয়টিই অস্পষ্ট ছিল।” এ দিকে, প্রশাসনিক অনুমতি না থাকার অভিযোগ ওঠায় কাজের টাকা পাননি শ্রমিকেরা।
তাঁদের ক্ষোভ বেড়েছে দিন দিন। এ দিকে, গত কয়েক মাসে এ ব্যাপারে দফায় দফায় তদন্ত হয়েছে। তৃতীয় দফার তদন্তের শেষে মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট শুভঙ্কর সরকার নানা অসঙ্গতি দেখতে পান। তিনি বিশদ তদন্তের সুপারিশ করেন মহকুমাশাসক অরিন্দম রায়ের কাছে। তারপরেই ৬ জনের কমিটি গড়ে চতুর্থ দফা তদন্ত শুরু হয়েছে। এ দিন ছিল তারই সূচনা।
শ্রমিকদের বক্তব্য, “খালি তদন্তই হচ্ছে। ৬ মাস হয়ে গেল মজুরি পাচ্ছি না। এরপরে মাথার ঠিক থাকে না।” প্রশাসনের তরফে একই কথা বার বার জিজ্ঞাসা করায় কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে বলে স্বীকারও করেছেন তাঁরা। প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, ওই সব কাগজ মূল নথির প্রতিলিপি। |