|
|
|
|
বহু বদলের পরেও প্রশ্ন, কবে পাশ হবে জমি বিল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
অবশেষে জমি অধিগ্রহণ বিলে অনুমোদন দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। বিভিন্ন মহলের দাবি মেনে দীর্ঘ আলোচনার পরে বেশ কিছু বদল আনা হয়েছে এই বিলে। বদল হয়েছে নামও (নতুন নাম ‘যথাযথ ক্ষতিপূরণ, পুনর্স্থাপন, পুনর্বাসন ও জমি অধিগ্রহণে স্বচ্ছতার অধিকার বিল’)। কিন্তু এত কিছুর পরেও এই অধিবেশনে বিলটি পাশ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কবে পাশ হবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
নতুন বিল অনুযায়ী, বেসরকারি শিল্পের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০%, যৌথ উদ্যোগের ক্ষেত্রে ৩০% জমি নিতে পারবে সরকার। বেসরকারি শিল্পের ক্ষেত্রে ৮০% জমি মালিকের সায় নিয়ে তবেই এগোতে হবে সংস্থাকে। সরকারি উদ্যোগের ক্ষেত্রে অবশ্য কারও সায় নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এই বিল পাশ হওয়ার পরে এমন যদি কোনও প্রকল্প থাকে যেখানে অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে, কিন্তু প্রক্রিয়া শেষ হয়নি, সে ক্ষেত্রে নতুন বিলের নিয়ম মেনেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া এক বছরের মধ্যে শেষ করতে হবে।
কিন্তু এই বিলও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। এই অধিবেশনে যা সময় আছে তাতে বিলটি বড়জোর পেশ করা হতে পারে। পাশ করানো সম্ভব নয়। তার উপরে বিতর্ক উস্কে দিয়ে এ দিনই সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এন সি সাক্সেনা বলেছেন, “বর্তমান বিল যতটা কৃষক-বিরোধী, ততটাই শিল্প-বিরোধী। জমি অধিগ্রহণের আগে বেসরকারি শিল্প সংস্থাকে যদি ৮০ শতাংশ মালিকের রায় নিতে হয়, তা হলে তো ৩-৫ বছর কেটে যাবে। তাতে না হবে শিল্প, না হবে জমির মালিক তথা কৃষকের উপকার।” মনে করা হচ্ছে, বিরোধী তো বটেই, শিল্প-সহ আরও বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা শুনতে হবে সরকারকে।
বিজেপি নেতা প্রকাশ জাভড়েকরও আজ বলেন, “ছ’বছর হয়ে গেল, গোটে দেশে বহু প্রকল্প আটকে রয়েছে, অথচ বিলটা পাশ করানোই গেল না। আসলে প্রধানমন্ত্রী খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে যতটা ব্যস্ত, জমি অধিগ্রহণ বিল পাশ করাতে ততটা নন।”
উত্তরপ্রদেশের ভাট্টা পারসলে কৃষক অসন্তোষের পর প্রথমে রাহুল গাঁধী ও পরে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ জানিয়েছিলেন, ২০১১ সালে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে নতুন জমি বিল পাশ হয়ে যাবে। তার পরে তৃণমূলের মতো শরিক তো বটেই, এমনকী সনিয়া গাঁধীর আপত্তিতেও বদলাতে হয়েছে বিলের খসড়া। তার পরেও দেখা যাচ্ছে, এ বছর শীতকালীন অধিবেশনেও বিলটি পাশ হওয়ার আশা নেই।
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ এই নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য না করলেও ঘরোয়া আলোচনায় অসন্তোষ জানিয়েছেন। তিনি গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার পর যুদ্ধকালীন তৎপরতায় জমি বিলের নতুন খসড়া প্রস্তুত করেন। কিন্তু শরদ পওয়ার, কমল নাথ, সি পি জোশীরা নিত্য নতুন প্রশ্ন তুলতে থাকেন। ফলে বিলটির মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেতেই দেরি হয়ে গেল। আর এখন বিরোধীরা যে ভাবে সংসদ অচল করে রাখছেন, তাতে বাজেট অধিবেশনেও বিলটি পাশ হবে কি না সন্দেহ।
জমি বিল নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনা শুনতে হলেও বিনিয়োগ বিষয়ক মন্ত্রিসভার কমিটি গঠন নিয়ে কিন্তু বণিকসভাগুলির সাধুবাদই পেয়েছে সরকার। জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এন সি সাক্সেনাও আজ বলেন, “অনেক সময়েই বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যে মতান্তরের ফলে প্রকল্পের ছাড়পত্র পেতে দেরি হয়। মন্ত্রিসভার এই কমিটি সেই প্রতিকূলতা দূর করবে। আবার পরিবেশ মন্ত্রক যে ভাবে শিল্পোন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রকল্পের ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে একতরফা মত দেয়, সে সমস্যাও মিটবে।”
তবু প্রশ্ন রয়েই গেল। প্রকল্প ছাড়পত্র পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হলেও জমি অধিগ্রহণ সহজ হবে কবে? |
|
|
|
|
|