|
|
|
|
|
নন্দরাম মার্কেট |
ট্রেড লাইসেন্স, দায় এড়াল দমকল
নিজস্ব সংবাদদাতা |
|
নন্দরাম মার্কেটের ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া নিয়ে দমকল ও পুরসভার মতবিরোধ এ বার প্রকাশ্যে এল। পুরসভা ওই ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ায় তাঁদের কোনও দায় নেই বলে বৃহস্পতিবার এক বণিকসভার আলোচনাচক্রে সাফ জানিয়ে দেন রাজ্য দমকলের এডিজি গোপালকুমার ভট্টাচার্য। কারণ, দমকলের সুপারিশ এখনও মানা হয়নি নন্দরামে। মেয়র অবশ্য বলছেন পুরসভা, দমকল, পুলিশ ও সিইএসসিকে নিয়ে গঠিত অ্যাপেক্স কমিটির বৈঠকেই নন্দরাম নিয়ে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। জবাবে দমকলকর্তার বক্তব্য, ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া পুরসভার নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এতে তাঁরা মাথা গলাবেন না।
বৃহস্পতিবার অগ্নি-বিধি বিষয়ক এক আলোচনাসভা করে বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। নন্দরাম মার্কেটের প্রসঙ্গ উঠতে গোপালবাবু বলেন, “২০০৮ থেকে দমকল দফতর অগ্নি-বিধি নিয়ে ওই মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কিছু সুপারিশ মেনে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে আসছে। ২০১২ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি।”
গোপালবাবু বলেন, “নন্দরামে আগুন লাগার পরে দমকল কর্তৃপক্ষ পুরসভার কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন ওখানকার ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স আটকে রাখতে। তাই বন্ধ ছিল।” তিনি জানান, দমকল বিধি মানার জন্য সে সময়ে চাপ দেওয়া হয়েছিল। তা হলে ওই ব্যবসায়ীরা দোকানের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করালেন কী ভাবে? দমকলের এডিজির বক্তব্য, “ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণের পুরো এক্তিয়ার পুরসভার। ওরা তা দিতেই পারেন।”
অগ্নি-বিধি না মেনেই তবে ট্রেড লাইসেন্স মিলল? এর সরাসরি কোনও জবাব মেলেনি। গোপালবাবুর বক্তব্য, “অগ্নি নির্বাপণে নন্দরাম মার্কেটের ব্যবসায়ীদের যে সব পদক্ষেপ করতে বলা হয়, তা তাঁরা করেননি। তা-ও ওঁরা যখন দমকলের ছাড়পত্র চান, তখনই বলা হয়েছিল ‘দুঃখিত, দেওয়া যাবে না’।” এর পরে পুরসভা নিজস্ব সিদ্ধান্তে ওই ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ করেছে। এতে তাঁদের কিছু করার নেই বলে জানান গোপালবাবু। যদিও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরসভা, দমকল, পুলিশ ও সিইএসসিকে নিয়ে গঠিত অ্যাপেক্স কমিটিতে নন্দরাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই কমিটির প্রস্তাব অনুসারেই নন্দরামের ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নবীকরণ হয়েছে।” তিনি জানান, অগ্নি নির্বাপণের কিছু সুপারিশ মতো তাঁরা কাজ করেছেন। বাকিটাও ওঁদের তাড়াতাড়ি করতে বলা হয়েছে। জবাবে গোপালবাবু বলেন, “আমরা ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স দিই না। এ ব্যাপারে পুরসভা যা ভাল বুঝেছে, করেছে। দমকল মাথা গলাবে না।”
ক্ষমতায় আসার আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তাঁরা ক্ষমতায় এলে নন্দরাম মার্কেট ফের খুলে দেওয়া হবে। সরকার গঠনের পরে তাঁরই নির্দেশে পুরসভা সেখানকার ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স দিতে আগ্রহী হয়। মেয়র জোর কদমে সেই প্রক্রিয়া চালু করেন। কিন্তু দমকলের সুপারিশ মতো অগ্নিবিধি পুরোপুরি না মানায় লাইসেন্স নবীকরণ নিয়ে জট লেগেই ছিল। মাস কয়েক আগে পুরসভা নবীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করে।
তবে অগ্নি-নির্বাপণে খামতির ক্ষেত্রে পুরো বড়বাজার নিয়েই চিন্তিত দমকল। সভায় গোপালবাবু বলেন, “বড়বাজারে দমকলের গাড়ি রাখার জায়গা পাচ্ছি না। সেই কবে থেকে চেষ্টা করছি।” তাঁর বক্তব্য, কাছাকাছি দমকলের গাড়ি থাকলে কিছুটা নিরাপদ থাকা যেত। বড়বাজারে দমকলের গাড়ি থাকা যে জরুরি, মানছেন মেয়রও। শোভনবাবুর বক্তব্য, “আমাদের কাছে এখনও আবেদন আসেনি। জায়গা থাকলে অবশ্যই দেওয়া হবে।”
এ দিনের অনুষ্ঠানে বারংবার ওঠে স্টিফেন কোর্ট ও আমরির কথাও। হাজির ছিলেন কয়েক জন ব্যবসায়ী ও কারখানার প্রতিনিধিরা। পুরনো বাড়িতে অগ্নি নির্বাপণে কী কী ব্যবস্থা দরকার, সে প্রশ্ন তোলেন একাধিক প্রতিনিধি। ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডের প্রসঙ্গে গোপালবাবু জানান, নতুনের মতো পুরনো বাড়িতে অগ্নি নির্বাপণের সতর্কতা নেওয়ার সুযোগ না থাকলেও প্রতিটি তলে স্প্রিঙ্কলার থাকা উচিত। তাঁর মতে, “স্প্রিঙ্কলার থাকলে আগুনের হাত থেকে অনেকটা রেহাই মেলে।” একই সঙ্গে নতুন বাড়ির ক্ষেত্রে অগ্নি-নির্বাপণের পাকাপাকি ব্যবস্থা না-থাকলে বাড়ি তৈরির অনুমোদন আটকে রাখতে হবে পুরসভাকে, এমনই মত গোপালবাবুর।
বর্তমানে কত উঁচু বাড়ির আগুন নেভাতে সক্ষম দমকল? গোপালবাবুর জবাব, “আন্তর্জাতিক মানের গাড়ি রয়েছে। যা প্রায় ৭০ মিটার বা দুশো ফুট উচ্চতায় আগুন নেভাতে পারবে।” তিনি জানান, ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে সদর দফতরে ঢোকার রাস্তা ছোট হওয়ায় বিধাননগর দমকল কেন্দ্রে ওই গাড়িটি রয়েছে। তবে বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীদেরও অগ্নি নির্বাপণ বিধির প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিষয়ে জোর দিতে চান গোপালবাবু। তাঁর কথায়, “দমকলই সব নয়, সবার আগে দরকার জন-সচেতনতা।” |
|
|
|
|
|