কাছেই রয়েছে পুলিশ, গলির ভিতর চোলাই নাচে কেটলিতে
ক বছর হয়ে গেল। ছবিগুলো তেমন পাল্টাল না।
দৃশ্য ১: গুডস্ শেড রোড, বিকেল ৪টে। রাস্তার পাশেই জিআরপি ব্যারাক। ব্যারাকের হাতায় জ্যারিকেন আর ছোট-ছোট পাউচ নিয়ে বসে রয়েছেন বিক্রেতা। সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই হাতবদল হচ্ছে টাকা আর পাউচের। কেউ আবার প্লাস্টিকের গ্লাসে তৃষ্ণা মিটিয়ে চলে যাচ্ছেন। অবাধে, প্রকাশ্য চলছে চোলাই মদের কারবার।
দৃশ্য ২: বর্ধমান থানার পিছনের গলিতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টুলের উপরে রাখা একটি কেটলি। তাতে কিন্তু চা নেই। আছে চোলাই। সামান্য টাকা গুনে দিলেই মাটির খুরিতে মিলবে তরল আগুন। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, মাতালের উৎপাতে তাঁরা রাস্তায় হাঁটতে পারেন না। কিন্তু বহু বার পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও ফল হয়নি।
দৃশ্য ৩: বর্ধমান শহরের যৌনপল্লি মহাজনটুলিতে মা ওলাইচণ্ডীর থানের পাশে থেকে-থেকেই রব উঠছে, ‘জয়ন্তদা, একটা ক্যাপ্টেন দিন...।’ জয়ন্তদা বলছেন, ‘বোতলের দামটাও ধরে দিবি কিন্তু। নইলে, পরে মাল খেয়ে তুই কেটে পড়লে আমার বোতলের কী হবে?’
নতুনগঞ্জে বাঁকার পাড়ে মদের ভাটি। ছবিটি তুলেছেন উদিত সিংহ।
দৃশ্য ৪: শহরেরই আঞ্জিরবাগানে জ্যারিকেনের রমরমা। শ্রমিকেরা আসছেন নানা চালকল থেকে। টুক করে চোলাই ঢেলে নিচ্ছেন গলায়। চটুল গান গেয়ে টালমাটাল পদক্ষেপে ফিরছেন। সকাল-বিকেল সব সময়। মাঝে-মাঝে বসছে নাচ-গানের আসরও। ‘ভদ্দরলোকেদের’ আসা-যাওয়া দায়!
দৃশ্য ৫: তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ডের কাছেও একটি হোটেলের টেবিলে সাজানো বোতল। তাতে দেশি-বিদেশি মদ। টেবিল ঘিরে সুরাসক্তের দল। মদ বিক্রির লাইসেন্স আছে? মালিক হাসেন, “সে সবের কী দরকার? তেনারা তো আছেন। নগদা-নগদি প্রণামী নিয়ে যান!”
দৃশ্য ৬: বড়বাজারের একটি হোটেলেও একই দৃশ্য। সকলে প্রাণপণে হাঁকছেন, তিনশো, ছশো, ক্যাপ্টেন... । দোকানি ‘বাবুদা’ সহাস্যে সাপ্লাই দিচ্ছেন। লাইসেন্স? জবাবে শুধু ফিক করে হাসি।
দৃশ্য ৭: আলমগঞ্জে একটি সেতু তৈরি হচ্ছে বাঁকা নদীর উপরে। সেখানেও চোলাই ও দিশির বিক্রেতারা হাজির। তবে তাঁদের আক্ষেপ, আবগারি দফতরের ঘনঘন হানায় ব্যবসা তেমন জমছে না। এক দোকানির করুণ প্রশ্ন, “আমরা তো নিয়মিতই প্রণামী দিই। তবু শুধু আমাদের উপরেই বিষনজর কেন?
ঠিক এক বছর আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরে বিষমদে ১৭২ জনের মৃত্যু নড়িয়ে দিয়েছিল গোটা রাজ্যকে। কিছু দিন রে-রে করে উঠেছিল পুলিশ-প্রশাসন। তার পরে ফের যে কে সেই।
কেন বিষ হয় মদ?
আবগারি খাতা (অক্টোবর-নভেম্বর)
• মামলা হয়েছে ৬০৮টি।
• গ্রেফতার হয়েছে ৩৩ জন।
• বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার লিটার চোলাই, ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩৭৭ লিটার চোলাই তৈরির উপকরণ (জাওয়া), ৪০ লিটার জাল মদ, ৩৯৬ লিটার নকল বিদেশি মদ, ৪০ লিটার অবৈধ স্পিরিট।
• ধরা হয়েছে মদ পাচারে ব্যবহৃত ৯টি সাইকেল ও ৩৫৮টি মদ তৈরির হাঁড়ি।
পুলিশের খাতা (জানুয়ারি-অক্টোবর)
• আটক হয়েছে ৪৭৫০৬ লিটার চোলাই, ৫০৬২৫ লিটার জাওয়া, ২৩৩৩ বোতল নকল বিলিতি মদ
• দায়ের হয়েছে ২৪টি মামলা
• গ্রেফতার হয়েছে ৬১ জন
বর্ধমানের পূর্ব আবগারি দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট উজ্জ্বল চক্রবর্তীর ব্যাখ্যা, “মদ বিষাক্ত হয়ে যায় যদি তাতে নেশার মাত্র চড়াতে মিথাইল অ্যালকোহল বা অন্য কিছু অপদ্রব্য মিশিয়ে দেওয়া হয়। অথবা চোলাই তৈরির সময়েও পাতন প্রক্রিয়ায় মিথাইল অ্যালকোহল তৈরি হতে পারে।” সেটা হতে পারে বর্ধমান সদর থেকে শুরু করে কালনা, কাটোয়া, মেমারি, গলসি, রায়না, গুসকরা যে কোনও জায়গায়। যখন তখন।
সব জেনেও আবগারি দফতর কেন রাশ আলগা দিয়ে বসে আছে?
পূর্ব আবগারি দফতরের ডেপুটি এক্সাইজ কালেক্টর (সদর) সুরজিৎ সরকার ও কালনা-কাটোয়ার কালেক্টর কল্যাণ সিংহের দাবি, “মানুষ যাতে লাইসেন্সবিহীন কাউন্টার থেকে মদ না খান তার জন্য প্রচুর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পথনাটক করা হচ্ছে। ব্যানার, ফেস্টুন, হ্যান্ডবিল বিলি করা হচ্ছে নিয়মিত। পাশাপাশি বিষমদের ঠেকেও বারবার অভিযান চলছে।” পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার দাবি, অবৈধ মদ বিক্রি রুখতে প্রায় রোজই তাঁরা আবগারি দফতরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বা একেবারে নিজেদের উদ্যোগে অভিযান চালাচ্ছেন।
এর পরেও যাঁরা লাইসেন্স নিয়ে মদ বিক্রি করেন, তাঁদের সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ পচাই ও ভেন্ডার (সাপ্লিমেন্ট) অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক মেঘনাথ সাহার দাবি, “অবৈধ মদের দাপাদাপিতে আমাদের ব্যবসার নাভিশ্বাস উঠেছে। রোজ যে পরিমাণ অবৈধ মদ বিক্রি হচ্ছে, তার সামান্যই পুলিশ বা আবগারি দফতরের হাতে আটক হচ্ছে।”
পরিবর্তন তবে কোথায়?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.