রিপোর্ট চাইলেন শঙ্কু
বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে আহত ১০
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের গোষ্ঠী সংঘর্ষে ১০ ছাত্র আহত হলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পন্ডার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে গিয়েই এক গোষ্ঠীর সমর্থকেরা অপর গোষ্ঠীর রোষের মুখে পড়েন বলে অভিযোগ। এ দিন যাঁর নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছিল, সংগঠনের বর্ধমান জেলা সভাপতি সেই অশোক রুদ্রের কাছে গোটা ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছেন শঙ্কুদেব।
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার। পরীক্ষা বিভাগের কিছু লোকজন দুর্নীতি করে টিএমসিপি সমর্থকদের কম নম্বর পাওয়ার ব্যবস্থা করছেন এই অভিযোগে শঙ্কুদেবের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। কিন্তু জেলা সভাপতি-সহ অনেককে না ডেকে শুধু শঙ্কু-ঘনিষ্ঠদেরই ডাকা হয়েছিল বলে অভিযোগ। ফেরার পথে নবাবহাটে রাজ্য সভাপতির গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখান বেশ কিছু টিএমসিপি নেতা-কর্মী। সমর্থকদের কম নম্বর পাওয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার ফের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সভা হবে বলেও জানিয়ে দেন জেলা সভাপতি। এ দিন উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকারকে একটি স্মারকলিপিও দেন তাঁরা।
গণ্ডগোলের আগে।
ওই সভার পরেই, জেলা সভাপতির অনুগামীদের সঙ্গে সংগঠনের জেলা কার্যকরী সভাপতি বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মন্তেশ্বর থেকে আসা সমর্থকদের মারপিট বেধে যায়। বর্ধমান থানার আইসি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বাহিনী নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। যে ১০ ছাত্র আহত হয়েছেন, তার মধ্যে মন্তেশ্বর কলেজের তৃণমূল পরিচালিত ছাত্র সংসদের কার্যকরী সভাপতি অরিজিত কুণ্ডু ও সহ-সম্পাদক তন্ময় কুণ্ডুও রয়েছেন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও ওই কলেজেরই ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হাবিব শেখকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর মাথা, বুক ও পিঠে আঘাত রয়েছে। মাথায় চারটি সেলাই পড়েছে। পরে হাবিবকে দেখতে হাসপাতালে গিয়ে তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়েন জেলা সভাপতি। কার্যত তাড়া খেয়ে তাঁকে হাসপাতাল ছাড়তে হয়। গণ্ডগোলের খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবাশিস সরকার এবং এসডিপিও (বধর্র্মান) অম্লানকুসুম ঘোষ হাসাপাতালে যান। বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বাপ্পাদিত্যবাবু বর্ধমান থানায় নিজেদের সংগঠনেরই পাঁচ জনের বিরুদ্ধে হাবিবকে মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁরা হলেন টিএমসিপি-র জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অর্ধেন্দু চট্টোপাধ্যায়, রাজ কলেজের ছাত্রনেতা পিঙ্কু ক্ষেত্রপাল, বিবেকানন্দ কলেজের নেতা অভিজিৎ ধীবর, বর্ধমান শহর টিএমসিপি নেতা তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভাস্কর কুণ্ডু। তবে রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। সন্ধ্যায় কলকাতায় শঙ্কুদেব বলেন, “জেলা সভাপতির কাছে গোটা ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছি। যদি দেখা যায় সংগঠনেরই কেউ অপরাধী, উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পদক সন্তু ঘোষের ঘোষণা, “যারা হাবিবদের মেরেছে, তাদের আমরা আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেব না।”
প্রত্যক্ষদর্শীদের একটা বড় অংশই কিন্তু অভিযোগ করছেন, বাপ্পাদিত্য এবং তাঁর অনুগামীরাই প্রথম গোলমাল পাকিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক সন্তু ক্ষেত্রপালের অভিযোগ, “বাপ্পাদিত্যের অনুগামী প্রায় ৫০ জন টিএমসিপি নেতা-কর্মী এ দিন অশোক রুদ্রের ডাকা সভার গতি-প্রকৃতি দেখতে এসেছিলেন। বিক্ষোভে গত কালের তুলনায় সিকি ভাগ লোকও হয়নি বলে তাঁরা দাবি করতে থাকেন। নানা কটূক্তি করতে থাকায় আমাদের ছেলেরাও রেগে যায়। ওরাই প্রথমে আমাদের পিঙ্কু ক্ষেত্রপালকে মারধর করে। তাতে মারপিট শুরু হয়ে যায়।” শহর টিএমসিপির সম্পাদক শুভায়ু সাহা অবশ্য দাবি করেন, “পিঙ্কু আর হাবিবের মধ্যে ব্যক্তিগত ঝামেলা আছে। তারই জেরে দু’জনের মধ্যে গোলমাল বেধেছিল।” বাপ্পাদিত্যেরও সাফ কথা, “ওরা পাল্টা সভা না করলে এ সব কিছুই হত না!”
গণ্ডগোলের পরে।
শঙ্কুদেব বিক্ষোভ সমাবেশ করে যাওয়ার পরেও কেন ফের একই বিষয়ে সভা ডাকা হল? অশোক রুদ্রের দাবি, “আমাদের রাজ্য সভাপতি উপাচার্যের কাছে পেশ করা স্মারকলিপিতে অনেকগুলি বিষয় দেননি। এ দিন তাই ফের সভা করে আমরা সেগুলি তুলে ধরেছি।” হাবিবের বাবা, মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য আব্দুর রশিদ শেখ বলেছেন, “নিজেদের মধ্যে মারপিট দেখে মনে হচ্ছে, সিপিএমকে সরিয়ে পরিবর্তন এনে লাভ কিছুই হল না। এক শ্রেণির ছাত্রনেতা সিপিএমের মতই আচরণ করছেন।”

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.