পান গুমটি থেকে ছোট ধাবা,
বেআইনি মদ বিক্রি চলছেই
ক বছর পেরোল। কিন্তু চিত্রটা বিশেষ পাল্টায়নি। রাস্তার পাশে ছোট ছোট হোটেল থেকে শুরু করে পান গুমটি, বেআইনি মদ বিক্রি চলছেই। আবগারি দফতরের অভিযান বেড়েছে। অভিযান চালালেই উদ্ধার হয় বেআইনি মদ ও মদ তৈরির উপকরণ। আর তাতেই প্রমাণ হয়, ‘ব্যবসা’ বন্ধ হয়নি। আবগারি দফতরের একাংশ মেনে নেয়, এক বার অভিযান চালালে দিন কয়েক বন্ধ থাকে। তার পরে ফের শুরু হয়ে যায় বিক্রি।
এক বছর আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে বিষমদে মৃত্যু হয় ১৭২ জনের। এই ঘটনার পরে রাজ্য জুড়ে বেআইনি মদ ধরতে অভিযান শুরু করে আবগারি দফতর। দুর্গাপুর আবগারি দফতরের দাবি, এখনও নিয়মিত অভিযান চলে। রাজস্বের পরিমাণও বেড়েছে। দুর্গাপুর আবগারি দফতরের ওসি পার্থ ঘোষ বলেন, “উপদ্রব আগের থেকে অনেকটা কমেছে।”
আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নোংরা পরিবেশে মদ তৈরি করা হলে বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার, চোলাই তৈরির ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত গোলমালে অনেক সময়ে তাতে মিথাইল অ্যালকোহল থেকে যায়। শরীরের পক্ষে তা ক্ষতিকর। মিথাইল অ্যালকোহলের মাত্রা বেশি হলে চোখ নষ্ট, স্নায়ুতন্ত্র বিকল, এমনকী মাত্রা অতিরিক্ত হলে মৃত্যুও ঘটতে পারে। আবার, অনেক সময় নেশা বাড়াতে চোলাই প্রস্তুতকারীরা এক বিশেষ ধরনের স্পিরিট (অর্ডিনারি ডিজেনারেটেড বা ওডি স্পিরিট) মেশান। এই স্পিরিট মূলত কাঠের আসবাবপত্র বার্নিশ ও রং করার কাজে ব্যবহৃত হয়। কী ভাবে তৈরি হয় স্পিরিট? আবগারি দফতর সূত্রে জানা যায়, ইথাইল অ্যালকোহলে পিডিটিন জাতীয় সামগ্রী মিশিয়ে দেওয়া হয়। ফলে, ইথাইল অ্যালকোহলের চরিত্র বদলে যায়। রং ও গন্ধ একেবারে চলে যায়। কিন্তু যে মিশ্রন তৈরি হয় তা বিষাক্ত। চোলাইয়ে এই বিশেষ ধরনের স্পিরিটের পরিমাণ বেশি হলেই বিপদ। মাত্রা তেমন বেশি হলে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
আবগারি দফতর সূত্রে জানা যায়, কাঁচা ইথাইল অ্যালকোহল ধাপে ধাপে শুদ্ধ করে ফ্লেভার ও রং মিশিয়ে তৈরি হয় বিদেশি মদ। দেশি মদের ক্ষেত্রে বাইরে থেকে কোনও ফ্লেভার বা রং মেশানো হয় না। দুর্গাপুর থানা এলাকায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত দেশি মদের দোকান রয়েছে ১১টি। কোকওভেন থানা এলাকায় ৩টি, নিউ টাউনশিপ থানায় দু’টি, কাঁকসায় ১৬টি ও বুদবুদ থানা এলাকায় ৮টি এমন দোকান রয়েছে। কিন্তু সেগুলির বাইরে নানা জায়গায় লুকিয়ে-চুরিয়ে দেশি বা পচাই মদের কারবার চলছে। লুকিয়ে চোলাইয়ের কারবার চলছে কাঁকসা, বুদবুদের বহু এলাকাতেও। দুর্গাপুরের লেবারহাট, মায়াবাজার, তামলা, আমরাই, রায়ডাঙা প্রভৃতি এলাকাতেও ঠেক চলছে। আবগারি দফতর জানায়, নিয়মিত অভিযানের ফলে চোলাইয়ের রমরমা আগের থেকে কমেছে।
এখানেই শেষ নয়, আবগারি দফতর জানায়, শিল্পাঞ্চল জুড়ে দেদার বিক্রি হচ্ছে জাল বিদেশি মদ। আবগারি দফতরের এক আধিকারিক জানান, মূলত রাস্তার ধারের বিভিন্ন ধাবা, ছোট হোটেল এমনকী, পান গুমটিতেও এই মদ বিক্রি হচ্ছে। এক বার অভিযান চালালে কিছু দিন বন্ধ থাকে। ফের একই অবস্থা। তাই আবগারি দফতরের তরফে ‘সাপ্লাই লাইন’ বন্ধের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে বলে দাবি ওই আধিকারিকের। তিনি জানান, নানা জায়গায় নিজেদের ‘সোর্স’ রেখে খবর জোগাড় করা হচ্ছে। আবগারি দফতরের ওসি পার্থবাবু জানান, ১৩ সেপ্টেম্বর আগাম খবর পেয়ে পানাগড় বাজারে কলকাতা থেকে আসানসোলের দিকে যাওয়া একটি গাড়ি আটক করা হয়। গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ৪৩০ লিটার বিশুদ্ধ স্পিরিট, পাঞ্চিং যন্ত্র, অব্যবহৃত বোতলের ছিপি, বিভিন্ন মদ কোম্পানির জাল লেবেল। গাড়ির মালিক ও চালককে গ্রেফতার করা হয়।
এমন ঘটনাতেই প্রমাণ, বেআইনি মদের রমরমা বন্ধ দূর অস্ত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.