ভাল থেকো যিশুদা


আমাকে চেনে
ওঁর জন্য
আজকে আমি স্টার হওয়ার পেছনে ওই একটা লোক। আমি চির কৃতজ্ঞ ওঁর কাছে।
আমাকে প্রথম লোকে চিনতে শুরু করে যিশুদার মেগা সিরিয়াল ‘তিথির অতিথি’ থেকে। তখন আমি একদম নতুন মেয়ে। বৌবাজারে থাকি। ভীষণ স্ট্রাগল করছি। ঠিক এমন সময়ে আমাকে এত বড় ব্রেক দেন যিশুদা।
সেটে হঠাৎ ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল নিয়ে কথা বললে আজও আমার মনে পড়ে ওঁর কথা। নিজেই মনে মনে বলি, “আরে এটা তো আমায় যিশুদা শিখিয়েছিল।” আমাকে ক্যামেরা অ্যাঙ্গল শেখানো থেকে প্রোডাকশনের নানা খুঁটিনাটি সব কিছু বোঝাতেন যিশুদা।
মনে আছে, পুজোর সময় কলকাতায় গিয়ে সন্তোষপুরে যিশুদার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। প্রচুর আড্ডা হল। তখনও বুঝতে পারিনি যিশুদা এত অসুস্থ।
যিশুদার মতো প্রযোজক আর হবে না। কিন্তু সব চেয়ে বড় ব্যাপার ছিল যিশুদার সঙ্গে আর্টিস্টদের সম্পর্ক, যা কখনও আর্টিস্ট-প্রযোজকের সম্পর্ক থাকেনি।
এখানেই যিশুদা সবার থেকে আলাদা। আমরা সাঙ্ঘাতিক ঋণী তোমার কাছে, যিশুদা।

মানুষটা হল
প্রাণখোলা হাসি
সালটা এখনও মনে আছে ১৯৯৬। সবে কলেজ শেষ করেছি। সেই সময়েই যিশুদার সেটে গিয়েছিলাম।
মনে আছে, যিশুদা তখন ক্যামেরার কাজ করতেন।
আমাকে সেটে দেখে হঠাৎ চেঁচিয়ে বলেছিলেন, “এই দুর্গা দুর্গা দেখতে মেয়েটা কে?”
তার পর তো একটার পর একটা কাজ করলাম। ‘শিশিরের শব্দ’, ‘তিথির অতিথি’।
সেই ‘দুর্গা দুর্গা’ দেখতে মেয়েটা ধীরে ধীরে হয়ে গিয়েছিল যিশুদার পরিবারের একজন। যিশুদা যখন দুর্গা বৌদিকে বিয়ে করল, আমি যিশুদাকে বলেছিলাম, “এ বার তোমার ঘরে সত্যি দুর্গা এল।”
প্রাণ খুলে হেসেছিলেন যিশুদা।
আসলে যিশুদা মানে, আমার কাছে এক জন প্রাণবন্ত মানুষ যে প্রাণ খুলে বাঁচে, প্রাণ খুলে হাসে।
সোমবার যিশুদার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম হাসপাতালে। আমি ঢোকা মাত্র দুর্গা বৌদি যিশুদাকে বললেন, “দেখো, গার্গী এসেছে।” আমাকে বললেন, “তোর পরীক্ষা শেষ হল?” পরে দুর্গা বৌদি বলছিল, যিশুদা হয়তো আজও সেই আমার কলেজে পড়ার দিনগুলোর কথা ভাবছেন।
অনেকক্ষণ দেখলাম যিশুদাকে। শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। শুধু এইটুকুই বলতে পারি, আমার হয়তো হাসপাতালে যাওয়াটা উচিত হয়নি। আমি ও ভাবে কোনও দিন যিশুদাকে দেখব কল্পনাও করতে পারিনি।
যিশুদা প্রাণ খুলে হাসছে।
আমার কাছে ওটাই যিশুদা।

আমাদের কুণ্ডলী
ভাল ম্যাচ করে
আমি যে আজকে হিরোইন, তার পেছনে একটাই নাম যিশু দাশগুপ্ত। আমি অবশ্য যিশুদা বলতাম না। অনেক দিন আগেই যিশুদা আমার কাছে ‘যিস্’ হয়ে উঠেছিল।
তখন ‘তেরো পার্বণ’ করি। যিশুদা চিফ অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্যামেরাম্যান। মনে আছে ‘রাম শ্যাম যদু’তে যিশুদার কথায় প্রথম হিরোইনের রোল পাই।
আমার আঠারো বছরের জন্মদিনে একটা বাংলোতে শু্যটিং করেছিলাম। এক গোছা জংলি ফুল নিয়ে যিস্ আমার কাছে এসে বলেছিল, “মামণি, আজকে তুই আঠারো হলি। জীবনটাকে কমপ্লিকেটেড করে তুলিস না।”
আজও জীবনের নানা মোড়ে এই কথাটা আমার মনে পড়ে। তার পর তো ‘কুয়াশা যখন’, ‘তিথির অতিথি’... কত কাজ করলাম। মজা করে বলতাম, “যিস্, তোমার আমার কুণ্ডলী খুব ম্যাচ করে।” যিস্ খুব হাসত।
যখন মুম্বইতে চিকিৎসার জন্য গেল যিস্, তখন গিয়েছিলাম যশলোক-এ দেখা করতে। সেদিন যিসের প্রথম কেমোথেরাপি। পুরো কেমোথেরাপি চলা অবধি ছিলাম। খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম রান্না করে। দুর্গাবৌদি ছিল। হাসপাতাল থেকে বেরোবার সময় এ বছরের ৬ জানুয়ারির কথা মনে পড়ছিল। ডিকেএস ক্লাবে আমার জন্মদিনে এসে কত মজা করল যিস্। কিছুই বুঝতে পারিনি তখন। যিস্, সারা জীবন শুধু অন্যদের কথা ভাবলে তুমি, নিজের দুঃখ কাউকে জানতে দিলে না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.