খাবার বন্ধে মুখ ঘুরিয়েছে পড়ুয়ারা
এক শিক্ষক, চার বীরহোড় শিশু, স্কুল চলছে
দু’বেলা খাবারের নিশ্চয়তা দিয়েই প্রশাসন ওদের বন-জঙ্গল থেকে স্কুলের চৌহদ্দির মধ্যে এনেছিল। কিন্তু খাবারের বরাদ্দ বন্ধ হতেই পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের বিলুপ্তপ্রায় বীরহোড় সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা স্কুল ছেড়ে ফের পুরোনো জীবনেই ফিরে গিয়েছে। গত অগস্ট মাস থেকে বাঘমুণ্ডি ব্লকের ভূপতিপল্লি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ার সংখ্যা ৫৫ থেকে কমতে কমতে এখন ৪ জনে ঠেকেছে। ফলে বীরহোড়দের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার সরকারি উদ্যোগেই ধাক্কা লেগেছে।
কেন বন্ধ হল বরাদ্দ? স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (তিনি একমাত্র শিক্ষকও বটে) বাপি সেন বলেন, “অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের আর্থিক সাহায্যে এই ছাত্রাবাস চলে। এত দিন স্কুলের অ্যাকাউন্টে ছাত্রাবাসের খরচের টাকা আসত। কিন্তু বেশ কয়েক মাস আগে সরকারি নির্দেশ আসে, বীরহোড় অর্থাৎ তফশিলি উপজাতি পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। তাদের অ্যাকাউন্টেই ছাত্রাবাসের খরচের টাকা জমা পড়বে। কিন্তু পূর্বতন প্রধান শিক্ষক শশাঙ্কশেখর মাঝি গত সেপ্টেম্বর মাসে অবসর নেওয়ার আগে পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্ট খুলে যাননি। তাই ছাত্রাবাসের বরাদ্দ আটকে গিয়েছে।” তিনি জানান, এখন শুধু ভূপতিপল্লি গ্রামের পড়ুয়া পর্বত শিকারি, আশিক শিকারি, বাদল শিকারি ও শ্রীকৃষ্ণ মুড়া স্কুলে আসছে। বাকি ছাত্রেরা ভূপতিপল্লি থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরের বাড়েরিয়া এলাকার। তারা স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। ছাত্রাবাসের পাচক রঞ্জন শিকারির কথায়, “ছাত্রাবাসে রান্না বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পড়ুয়ারা খাবে কী? তাই সবাই বাড়ি চলে গিয়েছে। এখন ওরা বড়দের সঙ্গে বনজঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়।”
পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্ট খুলতে গড়িমসি কেন?
মেঝেতেই চলছে পড়াশোনা। ছবি: সুজিত মাহাতো।
স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক শশাঙ্কশেখর মাঝির অভিযোগ, “এমনিতেই অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতর থেকে ছাত্রাবাস চালানোর খরচ নিয়মিত পাওয়া যেত না। দোকান থেকে ধারে মাল কিনতে হত। গত এপ্রিল মাসে দফতর থেকে প্রত্যেক পড়ুয়ার নামে অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হয়। কিন্তু সেই অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ার পরে অভিভাবকরা যে ছাত্রাবাসের খরচের টাকা দিতেন তার নিশ্চয়তা কী? প্রত্যন্ত গ্রামে ঘুরে ঘুরে পড়ুয়াদের বাড়ি থেকে টাকা আদায় করা সম্ভব হত না।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, বাঘমুণ্ডি ব্লকের ভূপতিপল্লি ও বাড়েরিয়া গ্রামে এখন বীরহোড় সম্প্রদায়ের ২৮৫ জনের বাস। তাঁরা চাষবাস করেন না। জঙ্গলে ঘুরে মূলত পশুপাখি শিকার করে জীবনধারণ করেন। তাঁদের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরাতেই ১৯৬২ সালে ওই স্কুল চালু করা হয়। দূরত্বের জন্য ছাত্রাবাসও চালু করা হয়। সে জন্য সরকারি বরাদ্দও ছিল। কিন্তু নির্দেশ অনুযায়ী পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না খোলাতেই সমস্যার সূত্রপাত। হেলদোল নেই প্রশাসনেরও। বাঘমুণ্ডির কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো বলেন, “শিক্ষার আঙিনায় বীরহোড়দের নিয়ে আসার উদ্দেশ্যেই ওই আবাসিক স্কুল চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি উদাসীনতায় মাসখানেক ধরে স্কুলের ছাত্রাবাসের খাওয়াদাওয়ার খরচ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রশাসনের এ ব্যাপারে আরও যত্নবান হওয়া উচিত।” গ্রাম শিক্ষা কমিটির সভাপতি তথা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের স্বরূপ সিংহসর্দার বলেন, “স্কুলে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে বলেই দরিদ্র বীরহোড় পরিবারের সন্তানরা ছাত্রাবাসে থেকে লেখাপড়া করত। কিন্তু বরাদ্দ বন্ধের জন্য ছাত্রাবাসের রান্না বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে জানতাম না।” জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি নীলকলম মাহাতোও বলেন, “ওই স্কুলের সমস্যার কথা জানি না। স্থানীয় অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে রিপোর্ট চাইব।” অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের বাঘমুণ্ডি ব্লকের পরিদর্শক ভীম ওরাং বলেন, “পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা স্কুল কর্তৃপক্ষকে সময় মতোই জানিয়েছিলাম। অ্যাকাউন্ট খুললেই সমস্যা মিটে যাবে।” শিক্ষক বাপি সেন অবশ্য বলেছেন, “পড়ুয়াদের নামে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ব্যাঙ্কের সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। ফর্মও তুলে এনেছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.