রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছে এক নাবালিকা। গলার নলি কাটা। কিন্তু বেঁচে রয়েছে। খবর পাওয়া থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করা, স্থানীয় হাসপাতাল থেকে কলকাতার আরজিকরে নিয়ে যাওয়া, রক্তের ব্যবস্থা করা থেকে ওষুধ কেনা এবং বাড়ির লোকদের খবর দেওয়াসবটাতেই জড়িয়ে রইলেন এক পুলিশ অফিসার। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থানার অফিসার-ইন-চার্জ গোপাল বিশ্বাস এই ভূমিকা না নিলে হয়তো “বাঁচত না মেয়ে”, বলছেন তরুণীর বাবা।
|
ওসি গোপাল বিশ্বাস। |
চুরি, ডাকাতি, খুন, বোমাবাজি, চোরাচালানে জেরবার বনগাঁ মহকুমায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যখন মানুষের মনে হাজারো প্রশ্নের ভিড়, সেখানে মহকুমা পুলিশের বছর ছত্রিশের এই অফিসার যেন “ভরসা দিচ্ছেন”, বলছে জনতা।
বছর দু’য়েক পুলিশের চাকরিতে যোগ দিয়েছেন গোপালবাবু। বাগদা থানায় এসেছেন বছরখানেক। পুলিশ মহলে পরিচিতি ‘দক্ষ’ অফিসার বলে। সোমবার রাত ১১টা নাগাদ এলাকাবাসীদের কাছ থেকে গোপালবাবু খবর পান, মালিপোতা এলাকায় রাস্তার পাশে একটি মেয়ে নলিকাটা অবস্থায় পড়ে আছে। প্রচণ্ড রক্ত ঝরছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওসি দেখেন, মেয়েটি বেঁচে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের গাড়িতে চাপিয়েই তাকে নিয়ে যান বনগাঁ হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বনগাঁ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা গোপালবাবুকে জানান, মেয়েটির অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক। তাকে কলকাতায় সরালে ভাল হয়। তবে কলকাতা পৌঁছনোর ধকল মেয়েটি নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে ধন্ধ ছিল চিকিৎসকদের।
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে গোপালবাবু একটি অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য সাহায্য চান এসডিপিও (বনগাঁ) রূপান্তর সেনগুপ্ত এবং আইসি (বনগাঁ) জাফর আলমের। তাঁদের সহযোগিতায় মেলা অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে মেয়েটিকে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান বাগদার ওসি। মঙ্গলবার ভোরে অস্ত্রোপচার, তার আগে প্রয়োজনীয় ওষুধের টাকা দেন পকেট থেকে।
কোনও রকমে নিজের নাম এবং বাড়ির ঠিকানা বলতে পেরেছিল ওই তরুণী। জানিয়েছিল নদিয়ার হাঁসখালি এলাকার বাসিন্দা সে। মেয়েটির পরিবারকে খবর দিতে গোপালবাবু হাঁসখালি থানা তো বটেই, যোগাযোগ করেন রানাঘাটের বিধায়ক এবং রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসের সচিবের সঙ্গে। খবর পেয়ে মেয়েটির বাবা-মা আরজিকরে পৌঁছন। তরুণীটির জন্য রক্তের বন্দোবস্ত করে এবং ১০ দিনের ওষুধ কিনে দিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে বাগদা ফেরেন ওসি। পুলিশ সূত্রের খবর, মেয়েটি বাগদায় এসেছিল এলাকার একটি পরিচিত ছেলের সঙ্গে। আপাতত সেই ছেলেটির খোঁজ চলছে।
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “ওসির এই কাজ প্রশংসার যোগ্য।” এসডিপিও-র (বনগাঁ) বক্তব্য, “চার মাস হল এখানে এসেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে এটা পুলিশের খুব ভাল কাজগুলোর মধ্যে একটা।” এলাকাবাসী বলছেন, “ওসি-র এই কাজ পুলিশ সম্বন্ধে আমাদের ধারণা বদলে দিচ্ছে।” তবে যাঁর জন্য এই প্রশংসা, সেই ওসি বলছেন, “চেষ্টা করেছিলাম মেয়েটাকে বাঁচাতে। ও সুস্থ আছে। কর্তব্য করেছি মাত্র।” |