বইমেলাতেও ‘আমরা-ওরা’র ছায়া।
নদিয়ার চাপড়া বইমেলা নিয়ে সিপিএম-তৃণমূলের বিভেদের ছায়ায় অবশ্য আড়াল পড়েছে স্থানীয় স্কুলগুলি। বিধায়ক ভাতায় স্কুলের পাঠাগারে যে সামান্য কিছু বই কেনা হত, তৃণমূল বিধায়ক তা না দেওয়ায় এ বার ভুগতে হচ্ছে স্কুলের পড়ুয়াদের।
চাপড়া বইমেলা কমিটির অধিকাংশ সদস্যই ‘বাম ঘেঁষা’। কমিটির মাথাও, এলাকার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সামসুল ইসলাম মোল্লা। আর তাতেই ‘গোঁসা’ হয়েছে তৃণমূলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রুকবানুর রহমানের। কমিটিতে তাঁকে ‘বিশেষ সম্মান’ উপদেষ্টা পদে বহাল করা হলেও রুকবানুর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ওই কমিটি তিনি মানেন না। মেলায় পা-ও রাখেননি কিনি। এখানেই থেমে না থেকে পূর্বতন বিধায়ক স্কুলগুলিকে তাঁর তহবিল থেকে বই কেনার জন্য যে টাকা দিতেন, রুকবানুর রহমান বন্ধ করে দিয়েছেন তা-ও।
বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন চাপড়ার বইমেলার বয়স বারো বছর। তার মধ্যে টানা এগারো বছর কমিটির সভাপতি সিপিএমের সামসুল ইসলাম মোল্লা। রাজ্যরাজনীতিতে পরিবর্তনের পর গত বছরই সামসুলকে শুধু সভাপতির পদ থেকেই নয়, বইমেলা কমিটি থেকেই সরিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ তৈরি করেছিল স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু বইমেলা কমিটির সিংহভাগ সদস্যের সমর্থনে সভাপতি পদ থেকে সরানো যায়নি সামসুল ইসলাম মোল্লাকে। বইমেলা কমিটি এর পরেই রুকবানুর জন্যই তৈরি করে নতুন পদ ‘বিশেষ উপদেষ্টা’। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভেজেনি।
গত বারও বইমেলাতে পা দেননি তিনি। এ বারও সেই একই পথে হাঁটলেন বিধায়ক। লোক মারফত তাঁর ‘অনীহা’র কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। ফলে এ বার তাঁকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে বইমেলার আয়োজন করতে হয়। শুধু তাই নয়, প্রতিবারই বইমেলা থেকে বই কেনার জন্য বিধায়ক তহবিলের মোটা টাকা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গ্রন্থাগার গুলোকে বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু গত বছর থেকে তাও বন্ধ।
স্থানীয় তৃণমূলের দাবি, “সি পি এম নেতাকে সভাপতি করা হবে আর সেই বইমেলাকে আর্থিক সাহায্য করবে তৃণমূল বিধায়ক? তা আবার হয় নাকি!” কোনও রকম রাখঢাক না করে তৃণমূল বিধায়ক রুকবানুর রহমানও বলেন, “আমি ওই বইমেলা বয়কট করেছি।” কেন? তিনি বলেন, “বইমেলা সিপিএম পরিচালিত। সিপিএমের লোকজন সরিয়ে সব দলের লোক নিয়ে কমিটি করার জন্য গত বার বলেছিলাম। ওরা তা করেননি। তাই এলাকার বইমেলা থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছি।”
রুকবানুর রহমানের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে বইমেলা কমিটির সম্পাদক রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের বইমেলার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সর্ম্পক নেই। সব দলের লোমজনই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন।” তিনি জানান, সামসুল ইসলাম মোল্লা মেলা শুরুর প্রথম থেকেই সক্রিয়ভাবে আছেন। টানা এগারো বারের সভাপতি তিনি। কোনও বিষয় নিয়ে তাঁকে কখনও রাজনীতি করতে দেখা যায়নি। তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার কথা কেউ ভাবতেই পারেন না। তিনি বলেন, “আমরা গত বারই বর্তমান বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তাঁর জন্য বিশেষ পদই সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি আসেননি। এ বারও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বইমেলার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না বলে লোক মারফত জানিয়ে দিয়েছেন।”
গত বছর থেকে বই কেনার জন্য বিধায়ক তহবিলের টাকা না পাওয়ায় শিক্ষকরাও রীতিমতো ক্ষুব্ধ। চাপড়ার বাঙালজি স্বামী বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের প্রধানশিক্ষক ইসমাইল শেখ বলেন, “বই কেনার জন্য বিধায়ক তহবিল থেকে টাকা পেয়ে আসছি। গত বার থেকে সেটা বন্ধ। ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেল। বিধায়কের কাছ থেকে ছাত্রছাত্রীরা ওইটুকু আশা করতেই পারে।” |