পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে বৃক্ষপ্রেম নন্দদুলালের
বৃক্ষরোপণ তাঁর কাছে আনন্দ। আর পরম যত্নে তাকে বড় করে তোলাটা নেশা। অবশ্য শুধু বৃক্ষপ্রেমেই তিনি আবদ্ধ নন। প্রতিবেশীরা কেউ কোনও বিপদে পড়লেই ছুটে যান তিনি। অর্থ সাহায্য নিয়ে দাঁড়ান দুঃস্থ ছাত্রের পাশে। এ ভাবেই দিন কাটে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নন্দদুলাল বসুর।
না, অবসরের পরে নয়। গাছ লাগানোর নেশা তাঁর দীর্ঘ দিনের। সেই নেশার বশে একটু ফাঁকা জায়গা পেলেই পুঁতে দেন গাছের চারা। তার পর শুরু হয়ে যায় তার দেখভাল। সম্প্রতি রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার গোবরডাঙা স্টেশন চত্বরে ৬৭টি চারাগাছ লাগিয়েছেন এই ‘বৃক্ষপ্রেমী’। শুধু গোবরডাঙা স্টেশন চত্বরেই নয়, ঠাকুরনগর-গোবরডাঙা রাস্তা, যমুনা নদীর ধারের বাসস্ট্যান্ড, রায়বাগানের পাশের রাস্তাতেও গাছ লাগিয়েছেন নন্দদুলালবাবু। তাঁর হাতে লাগানো বহু গাছ এখন ক্লান্ত পথিকের বিশ্রামের জায়গা।
কী ভাবে পেলেন এ কাজের অনুপ্রেরণা?
নন্দদুলালবাবুর কথায়, “স্কুলে পড়ার সময় স্থানীয় এক দম্পতি মণি দাশগুপ্ত ও কল্যাণী দাশগুপ্তের সংস্পর্শে আসি। এঁদের কাছেই গাছকে ভালবাসার, তাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রেরণা পেয়েছি।”
আদি বাড়ি বাংলাদেশের যশোহর জেলার কেশবপুরে। দেশভাগের পর সপরিবার চলে আসেন গোবরডাঙায়। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে জামদানিতে পাকাপাকি ঠাঁই। শৈশব কেটেছে দারিদ্রে। প্রাথমিক শিক্ষার পর আর্থিক কারণে লেখাপড়ায় ছেদ পড়ে যায়। পরে স্থানীয় প্রীতিলতা শিক্ষানিকেতনের তৎকালীন প্রধানশিক্ষক হরিপদ দে জোর করেই তাঁকে স্কুলে ভর্তি করান। ১৯৭২ সালে ওই স্কুলেই শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু নন্দদুলালবাবুর। প্রথম দিকে নিজের বেতনের টাকায় স্কুলে মেহগিনি, কদম, দেবদারু, বকুল গাছের চারা লাগান। বৃক্ষপ্রেমে সঙ্গী পেয়েছিলেন সমীর নন্দী, নারায়ণ চক্রবর্তী, সুকুমার ভট্টাচার্যের মতো সহকর্মীকে। আজও সে কাজে ভাঁটা পড়েনি।
—নিজস্ব চিত্র।
‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’র এমন ছবি সচরাচর দেখা যায় না। তাই স্বাভাবিক প্রশ্ন জাগে, কেন? মৃদু হেসে প্রবীণ শিক্ষক বললেন, “আমার মনে হয়, পরিবেশ সুন্দর রাখাটা আমাদের সকলের কর্তব্য। পরিবেশ সুন্দর হলে মানুষের মনও সুন্দর থাকে। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বৃক্ষরোপণ করে যেতে চাই।” শুধু বৃক্ষরোপণই নয়, মানুষের উপকারে লাগে এমন কাজেও তিনি একপায়ে খাড়া।
যাতায়াতের সুবিধার জন্য স্কুল চত্বরে তৈরি করে দিয়েছেন রাস্তা। শব্দবাজি নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে মিছিল করেছেন এলাকায়। অবসর নিলেও শিক্ষাদানে বিরত থাকেননি। এখনও বাড়িতে ছাত্র পরিবৃত হয়ে থাকেন নন্দদুলালবাবু। অবশ্যই বিনা পয়সায়।
অর্থাভাবে এলাকার কোনও মেয়ের বিয়ে আটকে গেলে কিংবা কারও চিকিৎসা বন্ধ হলে ভরসা নন্দদুলালবাবু। জামদানি এলাকার বাসিন্দা পেশায় খেতমজুর নারায়ণচন্দ্র রায় বললেন, “দু’বছর আগে মেয়ের বিয়ের জন্য টাকার প্রয়োজন হয়। নন্দদুলালবাবুকে বলতেই চার হাজার টাকা দিলেন। কখনও ফেরত চাননি।” পেশায় ভ্যানচালক নারায়ণ দাসের ছেলে নিরুপম নবম শ্রেণিতে পড়ে। তাঁর কথায়, “ভ্যান চালিয়ে কোনও মতে সংসার চলে। নন্দদুলালবাবু ছেলের দায়িত্ব না নিলে হয়তো ওর পড়াশোনা ছাড়িয়ে দিতে হত।”
গোবরডাঙা পুরসভার চেয়ারম্যান সুভাষ দত্তও নন্দদুলালবাবুর কাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। জানালেন, “সমাজসেবক হিসাবে নন্দদুলালবাবু আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয়।”
আলাপচারিতার শেষে নিজের লেখা ছড়া থেকে পড়তে শুরু করে দেন নন্দদুলালবাবু,
একটা গাছ, দশটা ডাল
হাজার হাজার পাতা
হাজার গাছ, লক্ষ ডাল
হাওয়ায় দোলায় মাথা।

গাছ ও মানুষের পাশে থাকতে থাকতে কখন যে নিজেই বটবৃক্ষ হয়ে উঠেছেন তা বোধহয় তাঁর নিজেরও অজানা।
‘বটবৃক্ষ’র ছায়ায় আশ্রয় পাওয়া মানুষগুলো অবশ্য জানে সে কথা।

হর্নবিরোধী অভিযান
হর্ন বাজানো যে পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ, গাড়িচালকদের তা জানাতে বুধবার পথে নামে বেহালা অঞ্চলের তিনটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। বেহালা থানার সামনে ওই অভিযানে ছিলেন শিক্ষক, অভিভাবক, পরিবেশকর্মী ও ট্রাফিক পুলিশের পরিবেশ সেলের কর্মীরাও। পোস্টার-ফেস্টুনের মাধ্যমে সচেতনতার প্রচার করা হয়।

ময়াল-শাবক উদ্ধার
ছোট একটি ময়াল উদ্ধার হল। বুধবার মালদহের চাঁচলে এক রান্নার গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার গুদাম থেকে ময়াল শাবকটিকে উদ্ধার করে বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ দিন মালদহের ডিএফও অজয় কুমার দুবে জানিয়েছেন, ওই ময়াল শাবকটিকে সংরক্ষিত জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.