কুবের উবাচ |
অন্বেষা বিশ্বাস (২৫)
• রাজ্য সরকারের কর্মী • চাকরিতে ঢুকেছেন মাস পাঁচেক আগে
• থাকেন মা-বাবার সঙ্গে • এই মুহূর্তে কারও দায়িত্ব মাথার উপর নেই
• ইচ্ছে, ৫-১০ বছরের মধ্যে দেশ-বিদেশ ঘোরা • মৃদু আপত্তি আছে শেয়ারে টাকা খাটানোয়
• এখন থেকেই সঞ্চয়ে আগ্রহী • ইচ্ছে দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দানেরও
|
অন্বেষা
মাসে আয়
১৪,৭৬১ |
টাকা রাখেন (বছরে) |
• ফ্লেক্সি রেকারিং ডিপোজিট ৩,০০০
(মেয়াদ ৩ বছর, সবে খোলা হয়েছে) |
• স্থায়ী আমানত ৮,০০০
(৯৯৯ দিন, সুদ ৯.৩৫%) |
• স্থায়ী আমানত
১০,০০০
(৫০০ দিন, ৯.২৫%) |
সম্পদ |
• সোনার গয়না (প্রায় ৬ লক্ষ টাকার) |
মাসে খরচ |
• ৩,৫০০ |
|
|
|
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
শৈবাল বিশ্বাস |
|
সবেমাত্র চাকরি জীবনে প্রবেশ করেছেন। সামনে অনেকটা পথ হেঁটে যেতে হবে। সেটা বোঝেন বলেই, নিজের বোধ এবং বিচার ক্ষমতা দিয়ে এরই মধ্যে অল্প অল্প করে হলেও সঞ্চয় শুরু করে দিয়েছেন। আর পাঁচ জনের মতো ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার তাগিদ তো রয়েইছে। সেই সঙ্গে চোখে স্বপ্ন ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে দেশ-বিদেশ ভ্রমণের।
এই ক্ষেত্রে হিসেব-নিকেশটা আমি একটু অন্য রকম ভাবে করব। এক দিকে দেখব যে, এই বয়স থেকেই কোন খাতে কী ভাবে লগ্নি করলে সামগ্রিক ভাবে তিনি সুরক্ষিত থাকতে পারেন। অন্য দিকে খেয়াল রাখব, যাতে ইচ্ছে পূরণ সম্ভব হয়। অন্বেষার যা বয়স, তাতে সঞ্চয়ের জন্য ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা এখন বেশি থাকাই স্বাভাবিক। সেই অনুযায়ী, তাঁর শেয়ার ও ঋণপত্রে লগ্নির অনুপাত হওয়া উচিত ৭৫:২৫। কিন্তু তিনি বেশি ঝুঁকি নিতে আগ্রহী নন। তাই আমরা মোটামুটি ৫০:৫০ অনুপাতে পুরো হিসাবটি করব। দেখব, সঞ্চয় থেকে ভাল রিটার্ন পেতে কোথায় কত টাকা (সঞ্চয়ের কত শতাংশ) রাখতে হবে। কী ভাবে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিতে হবে লগ্নি। |
হাতে বা ব্যাঙ্কে নগদ ৫% |
অনেক সময়েই ব্যাঙ্কের সেভিংস অ্যাকাউন্টে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি টাকা ফেলে রাখি আমরা। কিন্তু তাতে লাভ বিশেষ হয় না। তাই নিজের প্রয়োজন বুঝে অন্বেষার উচিত মোট সঞ্চয়ের ৫% এই খাতে রাখা। যাতে আপৎকালে তা কাজে লাগানো যায়। বাড়তি টাকা বরং থাকুক অন্য সব জায়গায়, যেখানে ভাল রিটার্ন মেলে। |
স্থায়ী আমানত ও রেকারিং ডিপোজিট ১৫% |
অন্বেষা ইতিমধ্যেই স্থায়ী আমানত এবং রেকারিং ডিপোজিটে টাকা রাখতে শুরু করেছেন। সেই সঙ্গে যদি ডাকঘরেও একটি রেকারিং ডিপোজিট খোলেন, তা হলে ওই খাতে লগ্নি আরও কিছুটা বাড়াতে পারবেন। |
পিপিএফ ২০% |
খুব তাড়াতাড়িই অন্বেষার উচিত পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলা। আয়ের ২০% সেখানে জমা দিন। তা হলে ১৫ বছর ধরে নিজের প্রায় অজান্তেই সেখানে গড়ে উঠবে একটি বড়সড় সম্পদ। যা তখন ভীষণ কাজে লাগবে বিভিন্ন চাহিদা সামাল দিতে। |
বিমা (০%): এখন দরকার নেই |
অন্বেষার উপর এই মুহূর্তে কেউ নির্ভরশীল নন। তাই এখনই বিমার প্রয়োজন নেই। এই মুহূর্তে জরুরি নয় পেনশন প্রকল্পও। দু’টোই কয়েক দিন পরেও করা যেতে পারে। |
ডেট ফান্ড ১০% |
এই ধরনের মিউচুয়াল ফান্ডগুলি সরকারি বন্ড, কর্পোরেট বন্ড, ট্রেজারি বিল ইত্যাদিতে লগ্নি করে। ফলে এতে ঝুঁকি কিছুটা কম। তাই এখানে টাকা রাখার কথা ভাবা যেতেই পারে। |
ইক্যুইটি ফান্ডে ২৫% এবং সরাসরি শেয়ারে ১০% |
অন্বেষার বয়স কম। তাই শেয়ার বাজারে লগ্নির এটাই উপযুক্ত সময়। সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি) অথবা সরাসরি শেয়ার কিনে এই লগ্নি করতে পারেন তিনি।
অনেকেই অনিশ্চয়তার কথা ভেবে বাজারে লগ্নি করতে সাহস পান না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতার পর থেকে বাজারই কিন্তু সব থেকে ভাল রিটার্ন দিয়েছে। অবশ্য কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখাও জরুরি
শেয়ারে দীর্ঘমেয়াদি লগ্নিই বুদ্ধিমানের কাজ।
অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। ঝোঁকের মাথায় কোনও সংস্থার শেয়ারে টাকা না-ঢালাই ভাল। বাজার ভাল করে দেখে শেয়ার বাছুন।
বাজারে ওঠাপড়া চলবেই। মাথা খাটিয়ে, ভেবেচিন্তে এগোন।
উপরের ক্ষেত্রগুলিতে লগ্নির ‘ফসল উঠলে’ দেশ-বিদেশ ভ্রমণ ও সঞ্চয়ের লক্ষ্য ছোঁয়া সহজ হবে। |
গোল্ড ইটিএফ/গোল্ড সেভিংস ফান্ড ১৫% |
অন্বেষার প্রায় ৬ লক্ষ টাকার সোনার গয়না রয়েছে। এ বার তাঁর উচিত কাগুজে সোনায় (পেপার গোল্ড) লগ্নি করা। মনে রাখতে হবে, গয়না বিক্রি বা কেনার যে ঝামেলা রয়েছে, গোল্ড ইটিএফ বা সেভিংস ফান্ডের ক্ষেত্রে কিন্তু তা নেই। তাই এই সোনা কেনা-বেচা করা বা রাখা অনেক সহজ। |
স্বাস্থ্য বিমা তিন থেকে পাঁচ লক্ষ টাকার |
এখন থেকেই স্বাস্থ্য বিমা কিনে রাখতে পারলে, প্রিমিয়াম অনেকটাই কম পড়বে। ভবিষ্যতের চিকিৎসার খরচ মাথায় রাখলে, তা হওয়া উচিত অন্তত তিন থেকে পাঁচ লক্ষ টাকার।
আগামী দিনে বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্বেষা নিজের সঞ্চয় বাড়াতে পারবেন এবং অন্যান্য খাতে লগ্নির সুযোগও খোলা থাকবে তাঁর সামনে। |
সমাজকল্যাণে দান |
অন্বেষার আর একটি ইচ্ছে দাতব্য সংস্থায় দান করা। আয়কর আইনের ৮০জি ধারায় এই ধরনের কোনও সংস্থায় দানের ক্ষেত্রে ৫০% থেকে ১০০% কর-ছাড় পাওয়া যায়। এই সংস্থাগুলির তালিকা কেন্দ্রীয় সরকার বা আয়কর বিভাগের কাছ থেকে খুব সহজেই পাওয়া সম্ভব। তবে যে-দান করা হচ্ছে, তার অঙ্ক আয়ের ১০ শতাংশের মধ্যে হতে হবে। শুধু নগদ দানের ক্ষেত্রেই এই সুবিধা পাওয়া যায়। চাইলে দাতব্য সংস্থাকে নিজের সম্পদের অথবা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করতে পারেন। উইলের মাধ্যমেও এই দান করা যায়। |
|