ধার পাওয়ার মাপকাঠি
ব্যসাচীর মতো দু’হাতে সমান তালে অফিস আর বাড়ি সামলাতে গিয়ে মাথা থেকে একবারে বেরিয়ে গিয়েছে ক্রেডিট কার্ডের টাকা মেটানোর কথা। সামান্য ক’টা টাকা দেব দেব করেও শেষ পর্যন্ত দেওয়া হয়ে ওঠেনি আর। কিন্তু ফ্ল্যাট কেনার জন্য ধার নিতে গিয়ে আগের সেই সামান্য ঋণের মাসুল যে এ ভাবে চোকাতে হবে, তা ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেনি সপ্তর্ষি। তার প্রশ্ন, আয়ের শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও কেন আবেদন করা অঙ্ক ঋণ হিসেবে পাবে না সে? ব্যাঙ্কের উত্তর, সিবিল স্কোর (নম্বর) এবং রিপোর্ট দুই-ই সপ্তর্ষির বিপক্ষে। তাই তাকে বেশি ধার দেওয়ার ঝুঁকি কোনও ভাবেই নেবে না তারা। প্রায় কিছুই না-বুঝে সে দিন বাড়ি ফিরে সিবিল-এর ওয়েবসাইট তন্ন তন্ন করে ঘেঁটেছিল সপ্তর্ষি। আর সেই সূত্রে যা জানা গিয়েছিল, আজ সেটাই এই আলোচনায় ভাগ করে নেব আমরা।

সিবিল কী?
পুরো নাম ক্রেডিট ইনফর্মেশন ব্যুরো অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড। এটি আসলে দেশের সমস্ত ঋণগ্রহীতার তথ্য নিয়ে তৈরি একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার। জন্ম ২০০০ সালে। জালিয়াতি রুখতে এবং ঋণের টাকা ফেরত নিশ্চিত করতে নব্বইয়ের দশকের শেষে বিশেষ কমিটি গড়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তাদের সুপারিশ মেনেই তৈরি হয়েছিল সিবিল।

চিত্রগুপ্তের খাতা
কোন ব্যাঙ্ক থেকে কবে কত টাকা ঋণ নিয়েছেন থেকে শুরু করে আপনার ক্রেডিট কার্ডের ‘পেমেন্ট রেকর্ড’ সব কিছুই তোলা থাকে সিবিলের খাতায়। দেখা যায়, কী ভাবে ওই সব ধারের টাকা শোধ দিয়েছেন বা দিচ্ছেন আপনি। শুধু ব্যক্তি নয়, এই তথ্য পাওয়া সম্ভব সংস্থা সম্পর্কেও।
বর্তমানে সিবিলের সদস্য ৮৪০টিরও বেশি ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তাদের কাছে কেউ ধার চাইলে, গোড়াতেই সেই আবেদনকারী সম্পর্কে সিবিল থেকে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে তারা। যাচাই করে ঋণ ও তা শোধের ইতিহাস। শেষ পর্যন্ত আপনি ধার পাবেন কি না, তা-ও অনেকটাই নির্ভর করে ওই রিপোর্টের উপর।

আমার সুবিধা কীসে?
প্রতি মাসে তথ্য যাচাই করে প্রত্যেক ঋণগ্রহীতার জন্য রিপোর্ট তৈরি করে সিবিল। এর নাম ক্রেডিট ইনফর্মেশন রিপোর্ট (সিআইআর)। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে নম্বরও দেয় তারা। তার নাম সিবিল ট্রান্স ইউনিয়ন স্কোর। চাইলে, টাকার বিনিময়ে (এখন ৪৭০ টাকা) সিবিলের ওয়েবসাইটে গিয়ে এই রিপোর্ট এবং স্কোর দেখতে পারেন আপনি। জেনে নিতে পারেন
(১) নতুন করে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার যোগ্যতা কেমন।
(২) কোনও ধার শোধ বাকি থেকে গিয়েছে কি না।
(৩) আপনার নামে অন্য কেউ ধার নেয়নি তো?
চাইলে ঋণের আবেদন করার সময় ব্যাঙ্কের কাছ থেকেই এই সব তথ্য পেতে পারেন আপনি। কিন্তু আগে থেকে জানলে, ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলতে সুবিধা হবে আপনার। রিপোর্টে কোনও ভুল থাকলে, তা-ও সিবিল-কে আগাম জানানোর সুযোগ পাবেন। তাই সিবিল রিপোর্ট হাতে থাকলে, এই সমস্ত ক্ষেত্রেই মস্ত সুবিধা আপনার।
একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও একটু স্পষ্ট হবে—
বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন জয়ন্তবাবু (নাম পরিবর্তিত)। ভেবেছিলেন, শেষ কিস্তি ব্যাঙ্কে গিয়ে শোধ দেবেন। কিন্তু ব্যাঙ্ক যে-টাকা জমা দিতে বলে, তা ন্যায্য অর্থের তুলনায় অনেকটাই বেশি। পরে এ নিয়ে আপত্তি জানালে, আর টাকা দিতে হবে না বলে জানিয়ে দেয় ব্যাঙ্ক। কারণ খুঁজতে শেষ পর্যন্ত সিবিলে গিয়ে জানতে পারেন, ব্যাঙ্ক ওই টাকা ইতিমধ্যেই অনাদায়ী সম্পদের খাতায় তুলে দিয়েছে। মুছে ফেলেছে (রিটেন অফ) আয় থেকে। ফলে ঋণ শোধ না-দেওয়ার দোষ এসে পড়েছে তাঁর ঘাড়ে। খারাপ হয়েছে সিবিল রিপোর্ট এবং নম্বর। সব জানার পর তবেই ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করে সমস্যা মেটাতে পেরেছেন জয়ন্তবাবু।
ক্রেডিট রিপোর্টে কী থাকে?
সিবিল ট্রান্স ইউনিয়ন স্কোর
হতে পারে ৩০০ থেকে ৯০০ পর্যন্ত। নম্বর যত বেশি, ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনাও তত পাকা। সাধারণত ৭০০-র বেশি নম্বর থাকলে ঋণ দেয় ব্যাঙ্কগুলি। তবে প্রত্যেকের মাপকাঠি নিজস্ব।
পরিচয়পত্র
আপনার পরিচয়। নাম, জন্ম তারিখ, প্যান নম্বর, ভোটার কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদির বিবরণ।
যোগাযোগের ঠিকানা
স্থায়ী এবং বর্তমান ঠিকানা, ফোন/মোবাইল নম্বর, ই-মেল ইত্যাদি। এর মধ্যে বর্তমান ঠিকানা এবং যাবতীয় যোগাযোগের নম্বর এক্কেবারে প্রথমে দেখতে পাবেন আপনি।
জীবিকা ও আয়ের তথ্য
ঋণ নেওয়া বা ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করার সময়ে যে চাকরি বা ব্যবসার কথা জানিয়েছেন, তার বিবরণ দেখা যাবে এখানে। থাকবে আয়ের তথ্যও।
অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য
সিবিল রিপোর্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সাধারণত তিন বছরের প্রত্যেক মাসের বিস্তারিত তথ্য দেখা যায় এখানে। এর আবার বিভিন্ন ভাগ রয়েছে। যেমন
• কোন ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ বা ক্রেডিট কার্ড নিয়েছেন।
• ঋণ কী ধরনের (গৃহঋণ, গাড়িঋণ, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি)।
• একা নিয়েছেন, না যৌথ ভাবে।
• কবে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, ঋণের পরিমাণ, শেষ কবে ঋণের টাকা শোধ করেছেন, কত বাকি রয়েছে ইত্যাদি।
• ঋণ শোধ হয়েছে কি না, কোনও আইনি সমস্যা রয়েছে কি না কিংবা ইতিমধ্যেই সম্পদ থেকে ব্যাঙ্ক তা মুছে ফেলেছে কি না (রিটেন অফ)।
আপনার খোঁজ করেছেন কারা
ক্রেডিট কার্ড বা ঋণের নানা অফারের ফোন কিংবা ই-মেল প্রায়ই পান আপনি। জেনে রাখুন, তার আগে আপনার সম্পর্কে যাবতীয় খোঁজ নেয় ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কারা আপনার সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছে, সেই তথ্যও জানতে পারবেন এখানে।
স্কোর ভাল করতে কী করণীয়?
• নিয়মিত রিপোর্ট যাচাই করুন। সম্ভব হলে বছরে অন্তত দু’বার।
• ঋণ শোধের মাসিক কিস্তি ঠিক সময়ে দেওয়া হচ্ছে কি না খেয়াল রাখুন। এক সঙ্গে বেশি ঋণ থাকলে, অনেক সময়েই খেয়াল থাকে না। সুতরাং সাবধান থাকুন।
• ক্রেডিট কার্ডের টাকা নিয়মিত শোধ করুন। কোনও টাকা বাকি না-রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখবেন, বড় অঙ্কের ঋণ না-নিয়েও শুধুমাত্র ক্রেডিট কার্ডের জন্যই খারাপ নম্বর আসতে পারে।
• প্রয়োজন না-থাকলে, ঋণ বা ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করবেন না।
• যতটা সম্ভব ডাউনপেমেন্ট করুন। নতুন করে ধার না-নিয়ে চালু ঋণের সঙ্গে টপ-আপ ঋণের জন্যও আবেদন করতে পারেন।
• হাতে কিছু বাড়তি টাকা এলে, সঙ্গে সঙ্গে তা ধার শোধের কাজে খরচ করুন। এতে নম্বর বাড়তে পারে আপনার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.