বিনোদন
‘ঘাটেই মিলিয়ে যাবেন সোমলতার পিসশাশুড়ি’
নীচতলায় গোমস্তাদের বসার ঘর। তার ঠিক উপরে রঙিন কাচের বড় বড় জানলা দেওয়া বড় হলঘর। সেই ঘরে গভীর রাতে বাইরের লোক পছন্দ করেন না কেউ কেউ। তারা কারা, সে কথা বলা যাবে না। জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের জৈনপট্টি এলাকায় ভাগীরথীর গা-লাগোয়া সেই প্রায় দুশো বছরের প্রাচীন ‘সিংঘি কুঠি’-র বর্তমান উত্তরাধিকারী প্রকাশকুমার সিংহ বললেন, “ওই হলঘরের ভিতরে রাত-বিরেতে নূপুরের ঝমঝম আওয়াজ পাওয়া যায়। যদিও আমরা কোনও দিন শুনিনি। কিন্তু যাঁরা বাইরে থেকে গিয়ে ওই ঘরে রাত কাটিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকেরই একই অভিজ্ঞতা হয়েছে। ওই আওয়াজ শুনে তাঁদের ঘুম ভেঙে যায়।” তবে ওখানেই শেষ। প্রকাশবাবুর কথায়, “আর কোনও আওয়াজও কিন্তু কেউ কখনও শোনেননি। তবে ওই নূপুরের শব্দ শুনেই তাঁরা কেউ আর ওই ঘরে থাকতে চাননি।” সেই বাড়িতেই ছিল একটি গয়নার বাক্সও। প্রকাশবাবু বলেন, “আমাদের বাড়িতে দাদু-ঠাকুর্দার আমলের একটি সোনার বাক্স ছিল। কিন্তু সেটা হারিয়ে গিয়েছে। দেওয়ালে কোথাও ওই বাক্স ছিল। কিন্তু পরে সেই দেওয়ালটি ঠিক কোনটি, তা জানা যায়নি। ফলে ওই সোনার বাক্স হারিয়ে যায়। পরিবারের কেউ-ই তা জানতে পারেনি। আমরাও খুঁজে পাইনি।” ওই বাড়িতেই থাকতেন হীরাকুমারী নামে প্রকাশবাবুর এক বিধবা পিসি। প্রকাশবাবুর কথায়, “বিয়ের ছ-মাসের মধ্যেই পিসি বিধবা হয়ে যান। এর পরেই তিনি আজিমগঞ্জের বাড়িতেই পাকাপাকি থাকতেন। শ্বশুরবাড়ি থেকে আসার সময়ে তিনি বিয়ের সময়ে দেওয়া যাবতীয় সোনার গয়না নিয়ে এসেছিলেন। তা থাকত ওই পারিবারিক গয়নার বাক্সেই।”

‘লোকেশন ও কে’। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

দু’টি দৃশ্য তোলা হবে ঘাটে
সিংঘি কুঠির সামনেই সিংঘি ঘাট। সেই ঘাটে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দু’দিন ধরে শ্যুটিং শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে অপর্ণা সেন ‘গয়নার বাক্স’ সিনেমার। বুধবার সকালেই তিনি সেই ঘাটে পৌঁছে যান। দু’টি দৃশ্যের সাতটি শট তোলা হবে ওই ঘাটে১) বিয়ের পরে নৌকায় চড়ে নববধূ সোমলতা জমিদার বাড়িতে আসছে। সঙ্গে বর ও পরিবারের কয়েক জন। দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করতে তিনটে নৌকা থাকবে। ঘাটে নববধূ বরণ হবে সিঁড়ির চাতালে দাঁড়িয়ে। তারপরে সবাই যাবেন জমিদার বাড়িতে।
এবং ২) পিসিমা বা সোমলতার পিসশাশুড়ির ভাগীরথীতে মিলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য। এই সিনেমার দু’দিনই শ্যুটিং হবে আজিমগঞ্জে সকালে সূর্য ওঠার আগে এবং গোধুলির আলোয়।

পছন্দ হল না নৌকার পাল
গাড়ি এসে থামল বিরাট সেই বাড়ির সামনে। ঘাটে পৌঁছেই সিঁড়ি বেয়ে তরতরিয়ে নেমে বাঁধা নৌকায় চড়ে বসলেন অপর্ণা। দীর্ঘ ক্ষণ ধরে কী ভাবে দৃশ্য দু’টি তোলা হবে, বোঝালেন ইউনিটের বাকিদের। নৌকা থেকে নামতেই তাঁকে দেখানোর জন্য ঘাট থেকে পাড়ে ওঠার সিঁড়ির উপরেই বিছিয়ে দেওয়া হল নৌকার ছবি আঁকা পাল। তবে তাতে খুব খুশি ছিলেন না। বললেন“এটা দিয়ে মনে হচ্ছে হবে না। তবে প্যাচ-ওয়ার্কগুলো খুলে দিয়ে দেখ তো কেমন লাগছে?”
এর মধ্যে কেউ এক জন বলে ওঠেন“উল্টে দিয়ে দেখ তো কি রকম লাগছে?”
কিন্তু পরিচালক তাতে সন্তুষ্ট নন--“না-না। খুব বাজে লাগছে। প্যাচ-ওয়ার্কগুলো খুলে দেখ শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায়।”

আনা হচ্ছে বাড়ির সাদা কাঁথা
সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গিয়ে চেয়ারে বসলেন। এক মনে দেখে চলেছেন শ্যুটিং-এর যাবতীয় খুঁটিনাটি। এক সময়ে ফোনে কোনও এক জনকে পরিচালকের নির্দেশে আমার বাড়িতে যে সাদা কাঁথাটা রয়েছে, সেটা আজকের রাতের মধ্যে কোনও ভাবে পাঠিয়ে দিতে পারবি! খুব প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।”
এভাবেই ফোনে, মাঝে-মধ্যে চিৎকার করে দিলেন বিভিন্ন পরামর্শ। সেই সঙ্গে রয়েছে জিজ্ঞাসাও“কালকে কখন শ্যুটিং?”
“সকাল ৬টা থেকে শ্যুটিং শুরু হলে মৌসুমীকে (চট্টোপাধ্যায়) হোটেল থেকেই মেকআপ নিয়েই স্পটে চলে আসতে হবে।”
“তাহলে তো বহরমপুর থেকে ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ রওনা হতে হবে। আসতে তো ঘন্টা খানেক লেগে যাবে!”
এক সময়ে অপর্ণা বলেন, “চল বহরমপুরে যাই। গিয়ে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া করতে দুপুর দুটো বেজে যাবে।”
গাড়ি রওনা দেয় বহরমপুর।

জীর্ণপ্রায় তোরণদ্বার
তার আগেই গত দু’দিন ধরে আজিমগঞ্জে সিংঘি কুঠি’র তোরণ দ্বারের অনুকরণে ঘাটের সিঁড়ি লাগোয়া জায়গায় চলছে সেট তৈরির কাজ। যেহেতু পিসিমার বাপের বাড়ির এক সময়ের সম্পন্ন ছিল, বর্তমানে অবস্থা পড়তির দিকে, সিনেমায় ওই ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা তুলে ধরতে কার্ডবোর্ড-প্লাইউড ও প্লাস্টার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে জীর্ণপ্রায় তোরণদ্বার। মাঝে লাগানো হয়েছে সেই আমলের লোহার গেটও।

ঘাটের কথা
আর সেই ঘাট। মণিহারা গল্পে এমনই এক “ঘাটের যে ধাপ বাহিয়া শব্দ উপরে উঠিয়াছিল সেই ধাপ দিয়া অলঙ্কৃত কঙ্কাল তাহার আন্দোলনহীন ঋজু গতিতে কঠিন শব্দ করিয়া এক-পা এক-পা নামিতে লাগিল।
এই ঘাটেই সোমলতার হাতে গয়নার বাক্সটি দিয়ে পিসশাশুড়িও মিলিয়ে যাবেন।

নাট্যমেলার উদ্বোধন
পুরসভা ও তথ্য সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে বুধবার আসানসোল রবীন্দ্রভবনে পাঁচ দিনের নাট্যমেলার উদ্বোধন করলেন নাট্যকার মনোজ মিত্র। প্রথম দিন ছিল লেকটাউন শ্রীভূমি সংস্কৃতি’র ‘বিকেলে ভোরের সর্ষেফুল’। এই ক’দিন থাকবে হাওড়া ব্রাত্যজনের ‘জায়মান’, পূর্ব-পশ্চিমের ‘ভালোমানুষ’, পঞ্চম বৈদিকের ‘অচলায়তন’ ও সুখচর পঞ্চম রেপার্টরির ‘আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র’।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.