নোরা পেরেছে, অদেখাই রয়ে গেল অনুষ্কার জয়
দুই মেয়ে, দুই পৃথিবী।
এক জন ছিল বাবার খুব কাছের। বাবার কোলে-কাঁখে, ছত্রছায়ায়, সেতারের সুরে ধীরে ধীরে বড় হওয়া। আর অন্য জন, জানতই না কে তার বাবা! পিতৃস্নেহ থেকে কয়েকশো যোজন দূরে, মায়ের পরিচয়ে তাঁর বেড়ে ওঠা। কিন্তু সুর-তাল-ছন্দের বন্ধন ছেঁড়ে সাধ্য কার! তাই আজ, বিশ্বসঙ্গীতের দুই সফল মুখ, রবিশঙ্কর তনয়া অনুষ্কা শঙ্কর এবং গীতালি নোরা জোনস শঙ্কর।
যেন বাবারই মুখ বসানো। মিষ্টি হাসি, আর অবিকল এক চোখ-নাক-মুখ। দেখলে বলার অপেক্ষা রাখে না, তারা দুই বোন। তবু বহু দিন তারা একে অপরকে চিনতই না। দু’বোনের যখন প্রথম দেখা, অনুষ্কার তখন ১৬। আর নোরার ১৮। সেই শুরু, অভিমানের পাহাড় ভেঙে প্রকাশ্যে আসা দুই পৃথিবীর অজানা গল্প।
নিউ ইয়র্কে জন্ম নোরার। ১৯৮৬-তে নোরার যখন সাত, ভেঙে যায় বাবা-মায়ের সম্পর্ক। নোরা অবশ্য তখনও জানত না, কে তার বাবা। টেক্সাসের গ্রেপভাইনে মা সু জোনসের কাছে বড় হতে থাকে সে। দশ বছর বয়সে প্রথম নোরা জানতে পারে, তার বাবার কথা। ধাক্কা লাগে, তবু জীবন তার নিজের ছন্দেই চলতে থাকে। ডালাসের স্কুল, গানের দল, আর স্যাক্সোফোন। সেই সঙ্গে গির্জায় গান গাওয়া, পিয়ানো শেখা। ১৬ বছর বয়সে সে নাম থেকে ছেঁটে ফেলল বাবার দেওয়া ‘গীতালি’। হয়ে উঠল শুধুই নোরা জোনস। ’৯৬-’৯৭, পরপর দু’বছর ‘বেস্ট স্টুডেন্ট মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’ একই সঙ্গে সেরা জ্যাজ গায়ক এবং সেরা সুরকার।
অনুষ্কা
নোরা
নাম থেকে বাবার ছোঁয়া সরিয়ে দিলেও, জীবন থেকে সরলো না। বছর দু’য়েকের মধ্যেই দেখা হল দুই বোনের। অনুষ্কা এক সময় বলেছিলেন, “নোরার কথা জানতে পেরে অদ্ভুত লেগেছিল। ও যখন আমাদের কাছে আসে, আমার তখন ১৬। এক বছরের মধ্যেই বেশ সুন্দর একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল।”
তবে বিষয়টা মেনে নিতে যে সময় লেগেছিল, অস্বীকার করেননি অনুষ্কা। তার উপর সংবাদমাধ্যমে সমালোচনার ঝড়, মুহূর্তে খবরের শিরোনামে উঠে আসা। অনুষ্কা বলেছিলেন, “ফোনের ও পাশে একটা নরম গলা। জানালেন, তিনি রবিশঙ্করের সঙ্গে কথা বলতে চান। যখন জেনেছিলাম এই ‘তিনি’ কে, আমি চমকে যাই। নোরার সঙ্গে যে ফের যোগাযোগ হবে, সে আশা আমি ছেড়েই দিয়েছিলাম।” বাবার সঙ্গে নোরার সম্পর্ক যে কোনও দিনই সহজ ছিল না, প্রায় বছর আটেক আগেই স্বীকার করে নিয়েছিলেন অনুষ্কা। তবে নিজেদের মতো করেই কাছাকাছি চলে এসেছিলেন দুই বোন। অনুষ্কা বলেছিলেন, “অবশেষে একটা দিদি পেলাম।”
অনুষ্কার জন্ম লন্ডনে। ছেলেবেলা কাটে দিল্লি-লন্ডন, পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুই শহরে। বাবার কাছেই সেতারে হাতেখড়ি। ১৩ বছর বয়সে প্রথম অনুষ্ঠান দিল্লির সিরি দুর্গের সামনে। পরের বছরই বাবার সঙ্গে বিশ্বভ্রমণে বেরোন অনুষ্কা। নিজের নামেই ১৯৯৮-এ প্রথম অ্যালবাম ‘অনুষ্কা’। পরের বছর ‘অনুরাগ’। ২০০৩ সালে, দিদির সঙ্গে গ্র্যামি মনোনয়ন পান অনুষ্কাও। তিনি ছিলেন কনিষ্ঠতম প্রতিযোগী। তবে সে বার বোনকে হারিয়ে দেন নোরা।
২০০২-এ মুক্তি পায় নোরার একক অ্যালবাম ‘কাম অ্যাওয়ে উইথ মি’...। জ্যাজ, পপ ও কান্ট্রি মিউজিকের ফিউশন। প্রথম একক অ্যালবামেই ‘ডায়মন্ড’ সম্মান। বাণিজ্যিক ভাবেও চূড়ান্ত সফল। বিক্রি হয়েছিল প্রায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ কপি। আর এই অ্যালবামের জন্যই পরের বছর মুঠোয় এল পাঁচ-পাঁচটি গ্র্যামি। একে একে ২০০৪-এ ‘ফিল লাইক হোম’, ২০০৭-এ ‘নট টু লেট’। ওই বছরেই ফিল্মে আত্মপ্রকাশ নোরার ‘মাই ব্লুবেরি নাইটস’। ২০০৩ থেকে ’১১, ১৬ গ্র্যামি বার মনোনয়ন, ৯টি জয়। এ ছাড়াও, ২০০৩-০৪ সালে ‘ওয়র্ল্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ড। নিজের দিদির সম্পর্কে অনুষ্কা বলেছিলেন, “ও শুধু চেয়েছিল বাবার পরিচয়ের বাইরে থেকেই নিজের মতো করে গানের জগতে ডুবে থাকতে।” সেটাই করে দেখিয়েছেন নোরা।
দু’বার মনোনয়ন পেলেও, অনুষ্কা অবশ্য এখনও নিজের ঝুলিতে পুরতে পারেননি একটি গ্র্যামিও। এ বারের ৫৫তম গ্র্যামি পুরস্কারেও মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। প্রতিদ্বন্দ্বী স্বয়ং বাবা। তিন বারের বিজয়ী বাবার সঙ্গে মেয়ের লড়াই দেখার অপেক্ষায় ছিল গোটা দুনিয়া। রবিশঙ্কর বলেছিলেন, “অনুষ্কাই জিতবে।” ছোট মেয়ের জয় তাঁর অদেখাই রয়ে গেল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.