|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত |
বেহাল জিআরপি |
কে কার ত্রাতা |
অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য |
বৃষ্টি হলেই অভিযোগ জানানো বন্ধ বারাসত জিআরপি-তে।
এক দিকে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর, অন্য দিকে ‘মডেল’ স্টেশনের তকমা। কিন্তু এত সব পরিচয় থাকা সত্ত্বেও বারাসত রেল পুলিশ থানার অবস্থা শোচনীয়। মাথার উপরে ছাদ নেই। ছোট্ট একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে পাশাপাশি তিনটি ঘর। দু’টি ঘর ভর্তি পুলিশকর্মীদের বিছানায়। খাওয়া-দাওয়া-শোওয়া চলে ওই দু’টি ঘরেই। অন্য একটি ঘরের একপাশে বড়বাবুর (ওসি) টেবিল। আর এক পাশে কম্পিউটারে সমস্ত কাজকর্ম চলে। অভিযোগ শোনা বা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোনও ঘর নেই। তাই বারান্দাতেই টেবল পেতে বসতে হয় ‘ডিউটি’ অফিসারকে। অভিযোগকারীরা এলে অগত্যা তাঁদের ঠাঁই হয় সিঁড়ি বা নীচের উঠোনে খোলা আকাশের নীচে। হঠাৎ বৃষ্টি এলে ভেজা ছাড়া গতি নেই। |
 |
অথচ, পূর্ব রেলের শিয়ালদহ-বসিরহাট শাখার দুর্গানগর থেকে হাসনাবাদ পর্যন্ত রেলের মোট ৭০ কিলোমিটার এলাকা দেখভাল করতে হয় ওই বারাসত জিআরপি-কে। আইনশৃঙ্খলা দেখভালের পাশাপাশি অবরোধ তোলা, গণ্ডগোল থামানো, ট্রেনে কেউ কাটা পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া বা দেহ আনা থেকে শুরু করে পকেটমার ধরা, সাদা পোশাকে ইভটিজার পাকড়াওয়ের মতো হাজার কাজের জন্য জনা চল্লিশেক পুলিশকর্মী রয়েছেন ওই থানায়। অথচ সেই পুলিশকর্মীদের থাকার ঘর বলতে মাত্র দু’টি। পলেস্তরা খসা ওই দু’টি ছোট্ট ঘরের মধ্যে গাদাগাদি করে থাকেন পুলিশকর্মীরা।
অভিযোগকারী বা অভিযুক্তদের সঙ্গে তদন্তকারী অফিসারদের কথা বলার জন্যও আলাদা ঘর নেই। একটিই লক-আপ। কোনও মহিলা ধরা পড়লে তাঁকে বড়বাবুর ঘরে মাটিতে বসিয়ে রাখতে হয়। মহিলা পুলিশকর্মী বা আসামীদের কোনও শৌচাগার নেই। একটিমাত্র শৌচাগারের অবস্থাও বেহাল। থানায় কোনও ফ্যান নেই। প্রচণ্ড গরমে ঘেমে-নেয়ে কাজ করতে হয়। পর্যাপ্ত আলো নেই। সন্ধ্যার পর থেকে জিআরপি-র অবস্থা হয় অনেকটা পোড়োবাড়ির মতো। ওই থানার অধীনস্থ ফাঁড়িগুলির অবস্থাও তা-ই। একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে কোনও মতে ধুঁকতে ধুঁকতে চলছে হাসনাবাদ ফাঁড়ি। সেখানে থাকার মতো কোনও ব্যবস্থাই নেই। বিশরপাড়া-কোদালিয়াতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে কোনও মতে চলছে পুলিশ ফাঁড়ি। |
|
অথচ বারাসত জিআরপি-র কয়েকটি ঘর বাড়িয়ে থানাটিকে সুন্দর করার পরিকল্পনা দীর্ঘ দিন ধরেই পড়ে রয়েছে রেল দফতরের কাছে। রেলের অফিসারেরাই সেই পরিকল্পনাটি করে জানিয়েছেন, ৭ লক্ষ টাকা ব্যয় করলেই পরিস্থিতি বেশ খানিকটা বদলাবে। ওই পরিকল্পনার মধ্যে ওসি-র ঘর এবং থাকার জায়গার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে শিয়ালদহের রেল পুলিশ সুপার উৎপল নস্কর বলেন, “কিছু কিছু জিআরপি-র অবস্থা সত্যিই খুব খারাপ হয়ে রয়েছে। বারাসত জিআরপি-র সম্প্রসারণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কাজ শুরু হওয়ার কথাও রয়েছে।”
তবে রেল দফতর সূত্রে অবশ্য অন্য কথা জানা গিয়েছে। পূর্ব রেলের (শিয়ালদহ) ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার সুচিত্র দাস বলেছেন, “বারাসত রেল পুলিশ থানা নিয়ে একটি পরিকল্পনা ও প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আমরা সেই বাড়ি তৈরি করে দিলেও টাকাটা রাজ্য সরকারের দেওয়ার কথা। সেই ব্যাপারে এখনও কিছু কথা এগোয়নি।”
|
ছবি: সুদীপ ঘোষ |
|
|
 |
|
|