মাস তিনেক আগে গত আগস্টে তুফানগঞ্জ থানার দেওচড়াই মোড় এলাকায় রাতে ‘ভুটভুটি’র ধাক্কায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। নম্বর না থাকায় ভুটভুটি চালককে ধরতে রীতিমতো হিমসিম খেতে হয় পুলিশ কর্মীদের। আবার বিমার আওতায় না থাকার কারণ সহ বৈধ কাগজপত্র না থাকার অভিযোগে কিছুদিন আগে দিনহাটায় ভুটভুটিতে যাতায়াত বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে নামেন পরিবহণ কর্মীরা। পুলিশ ৪টি ভুটভুটি আটক করে। পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে আন্দোলনে সরব হন ভুটভুটির চালকরা। এমন তুমুল বিতর্কের মধ্যেই কোচবিহার জেলা জুড়ে যন্ত্রচালিত ভ্যান ভুটভুটির দৌরাত্ম্য বেড়ে গিয়েছে। ‘ভুটভুটি’ নিয়ন্ত্রণের দাবি, পাল্টা দাবিতে উদ্ভুত বিতর্কে অস্বস্তি বেড়েছে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের। কোচবিহারের আরটিও তাপস বিশ্বাস বলেন, “মোটর ভেইকেলস অ্যাক্টের আওতায় ভুটভুটি নথিবদ্ধ হয়নি। তা ছাড়া এতে যাত্রী পরিবহণ ঝুঁকিপূর্ণ। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে ওই ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “ওই সব যন্ত্রচালিত ভ্যানের সঙ্গে মানুষের স্বার্থ, রুটিরুজির মত বিষয় জড়িয়ে আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ সব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
প্রশাসনের কাছে অভিযোগ, ‘ভুটভুটি’র রমরমা জেলা জুড়ে মারাত্মক ভাবে বেড়ে চলেছে। কোচবিহারের তুফানগঞ্জ, দিনহাটা, মাথাভাঙা মহকুমায় ওই যন্ত্রচালিত যানের রমরমা বেশি। কোচবিহার সদর, মেখলিগঞ্জে ভুটভুটির দাপট থাকলেও তুলনামূলক ভাবে ওই তিন মহকুমার থেকে কম। অনুমতি ছাড়াই যাত্রী পরিবহণের ওই কারবার চলছে। ভুটভুটি চালক-মালিকদের তরফে দাবি করা হয়েছে, মানুষ অপেক্ষাকৃত কম ভাড়া খরচ করে প্রত্যন্ত এলাকায় যাতায়াতের সুবিধে নিতে স্বেচ্ছায় ভুটভুটিতে যাতায়াতে ঝুঁকছেন। সারা বাংলা মোটর ভ্যান চালক সমিতির কোচবিহার জেলা কমিটির নেতা আব্দুস সালাম বলেন, “গোটা কোচবিহার জেলায় ১২০০ বেশি ভুটভুটি রাস্তায় চলছে। সরকার নির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে দিলে তা মেনেই আমরা লাইসেন্স নিতে চাই।”
তা ছাড়া গ্রামীণ যান হিসাবে এটিকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য গত ২৭ জুলাই রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রীর কাছে সংগঠনের তরফে স্মারকলিপি দিয়ে ওই আর্জি জানানো হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে হাই পাওয়ার কমিটি গড়ে বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সমিতির নেতা আব্দুস সালামের দাবি, “একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ভুটভুটিতে পণ্য পরিবহণ করা যাবে বলে স্পষ্ট জানিয়েছিল। ওই রায়ে অবশ্য যাত্রী নেওয়া যাবে না বলে কিছু আছে বলে জানা নেই।” পরিবহণ কর্মীরা ওই যুক্তি মানতে রাজি নন। কোচবিহার জেলা বেসরকারি যাত্রী পরিবহণ মোটর কর্মী ইউনিয়নের দিনহাটা মহকুমা সম্পাদক সাধন সাহা বলেন, “রায়ে ভ্যান রিকশার ‘টিউব টায়ার’ চাকার সঙ্গে মোটরের যন্ত্রাংশ লাগিয়ে ব্যক্তিগত কাজে পণ্য পরিবহণের কথা বলা হয়েছে। ভুটভুটিতে তো ছাট গাড়ির চাকা লাগানো হচ্ছে। আসলে আদালতের নির্দেশের ভুল ব্যাখা করে ভুটভুটি চালকরা সুযোগ নিচ্ছে। এটা হতে পারে না। প্রশাসন ভুটভুটিতে অন্তত যাত্রী পরিবহণ বন্ধে কড়া ব্যবস্থা না নিলে ফের আন্দোলন হবে।” |