সময়সীমার মধ্যে বিলি হয়নি স্বাস্থ্যবিমার কার্ড |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ লক্ষ ৪৭ হাজার ৩০৪ পরিবার। সময়সীমা ছিল তিন মাস। তা পেরিয়ে গিয়েছে। অথচ দেখা যাচ্ছে, মাত্র ৪ লক্ষ ১০ হাজার ৬০০ পরিবারকে স্বাস্থ্য বিমার কার্ড দেওয়া সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ ৫৩ শতাংশ মানুষ কার্ড পেয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনায় এটাই পশ্চিম মেদিনীপুরের ছবি। এই কার্ড থাকলে দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী গরিব মানুষ মাত্র ৩০ টাকার বিনিময়ে ৩০ হাজার টাকার চিকিৎসা পরিষেবা পান। কার্ড না থাকায় সরকারি এই পরিষেবা থেকে অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রশাসন সূত্রে খবর, কার্ড বিলির জন্য আরও এক মাস সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন জানানো হয়েছে রাজ্য সরকারকে। পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সুমন ঘোষ বলেন, “আশা করি, সময়সীমা বাড়ানোর অনুমতি মিলবে। তাহলে আমরা বেশিরভাগ মানুষের হাতেই কার্ড পৌঁছে দিতে পারব।”
জেলায় স্বাস্থ্য বিমার কার্ড দেওয়া শুরু হয় গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কার্ড বিলি শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু তা করা যায়নি। কেন? প্রশাসন সূত্রে খবর, গ্রাম পঞ্চায়েত ও পুরসভাগুলির উদাসীনতাই এ ক্ষেত্রে দায়ী। প্রকল্পের জেলা প্রকল্প আধিকারিক হরিশ দে বলেন, “আমরা পঞ্চায়েত ও পুরসভাগুলির কাছে বারবার আবেদন রাখছি, যাতে এ বিষয়ে তাঁরা আরও উদ্যোগী হন। তাহলে যে বাড়তি ১ মাস সময় আমরা হাতে পাব তাতেই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে যেতে পারব।” খড়্গপুর পুরসভা যেমন এখনও কাজই শুরু করতে পারেনি। অথচ রেলশহরের পুরসভায় ৩১ হাজার ৬৩২ জনের কার্ড পাওয়ার কথা। খড়্গপুরের উপপুরপ্রধান তুষার চৌধুরী বলেন, “কিছু সমস্যা থাকায় কাজ শুরু করা যায়নি। এ বার দ্রুত বোর্ড মিটিং ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” খড়্গপুর পুরসভায় মামলার জেরে ডামাডোল চলছে। আদালতের নির্দেশে পুরপ্রধানের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন উপপুরপ্রধান। বোর্ড কার দখলে থাকবে সেটাই এখন প্রশ্ন রেলশহরে। এই পরিস্থিতি স্বাস্থ্য বিমার কার্ড বিলির কাজ কতটা এগোবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিও যথাযথ ভাবে কার্ড বিলির কাজ করতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ভারসাম্যহীনতার বিষয়টিই সামনে আসছে। রাজ্যে সরকার বদল হয়েছে, কিন্তু এই জেলায় পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিগুলির অধিকাংশই রয়েছে সিপিএমের দখলে। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের খবরদারিতে বেশিরভাগ পঞ্চায়েত প্রধানই নিজেদের সিদ্ধান্ত মতো কাজ করতে পারছেন না। সব মিলিয়ে কার্ড বিলির কাজে গতি আসছে না। অথচ এ বার এই কার্ড বিলির গুরুত্ব একটু বেশিই ছিল। আগে কার্ড হত এক বছরের জন্য। এ বার যে কার্ড দেওয়া হচ্ছে পুনর্নবীকরণের মাধ্যমে তা তিন বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। এই কার্ডে একই পরিবারের ৫ জনের যাবতীয় নথি থাকবে। প্রয়োজনে ৫ জনই ৩০ হাজার টাকার চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন মাত্র ৩০ টাকার বিনিময়ে।
প্রতিটি বিপিএল পরিবার ও গত আর্থিক বছরে যাঁরা একশো দিনের কাজ প্রকল্পে অন্তত ১৫ দিন কাজ করেছেন, তাঁদের সকলকে এই কার্ড দেওয়ার কথা। এই কার্ড দেখিয়ে কোন নার্সিংহোম বা হাসপাতালে পরিষেবা মিলবে, তারও তালিকা রয়েছে। কিন্তু কার্ড না পেলে সে সবই বৃথা।
|