শেষ পর্যন্ত মন্ত্রী-আমলাদের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) পদের যোগ্য কর্মীও কি কম পড়ল রাজ্যে? গত মাসে রাজ্যের অর্থ দফতরের জারি করা একটি বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে এই প্রশ্ন উঠেছে মহাকরণে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিনিয়র পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্টের জন্য একটি এক্স-ক্যাডার পদ সৃষ্টি করা হল। রেল মন্ত্রক থেকে ডেপুটেশনের ভিত্তিতে এই পদ পূরণ করা হবে।
বিষয়টি শুনে বিস্মিত রেল-প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, “এমনটা হওয়া উচিত নয়। আমি জানতে পারলে বাধা দেব।”
গত বছরের মে মাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার শপথ নেওয়ার পর থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসারদের আনাগোনা শুরু হয় মহাকরণে। বিশেষত রেল মন্ত্রক থেকে অনেককেই ডেপুটেশনের ভিত্তিতে বিভিন্ন পদে নিয়োগ করে রাজ্য সরকার। এঁদের মধ্যে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর সচিব গৌতম সান্যাল।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রথম দিন থেকে মমতার নিরাপত্তার দায়িত্বও তুলে দেওয়া হয় রেল পুলিশের হাতে। এ সবকে কেন্দ্র করে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের মধ্যে নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভ তৈরি হয়। প্রকাশ্যে না-হলেও একান্ত আলোচনায় অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, তবে কি দিল্লির অফিসার দিয়েই রাজ্য চলবে? দিল্লি থেকে আসা অফিসারদের হাতে প্রভূত ক্ষমতা তুলে দেওয়ায় ক্ষোভও ছড়াতে শুরু করে।
কিন্তু এ সব ঘটনাই তৃণমূল ইউপিএ সরকারের শরিক থাকার সময়ে। অভিযোগ ওঠে, কেন্দ্রে তৃণমূলের ৬ জন মন্ত্রী থাকায় সেই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ইচ্ছেমতো দিল্লি থেকে লোক এনেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু এখন, কেন্দ্রীয় সরকার থেকে বেরিয়ে আসার পরেও লোক আনার বিরাম নেই। মহাকরণের এক কর্তার মন্তব্য, পিএ-এর মতো পদে রেল থেকে নিয়োগের জন্যও নতুন পদ তৈরি করতে হচ্ছে!
১ নভেম্বর ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে অর্থ দফতরের অডিট বিভাগ। বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে (সিএমও) এক সিনিয়র পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগ করার জন্য ডেপুটেশনের ভিত্তিতে রেল মন্ত্রক থেকে লোক নেওয়া হবে। মহাকরণের খবর, সচিবালয়ে প্রায় ৫৫০ পিএ পদ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০টি পদ ফাঁকা। এই অবস্থায় কেন নতুন পদ তৈরি করে রেল থেকে লোক আনা হবে, এই প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন মন্ত্রী ও সচিবের অফিসে কর্মরত পিএ-রা। যাঁকে নিয়োগ করার জন্য এই পদ তৈরি করা হয়েছে বলে মহাকরণের খবর, সেই ব্যক্তি কলকাতায় মেট্রো রেলে কর্মরত।নতুন সরকারের জমানায় তিনি মহাকরণে, মুখ্যমন্ত্রী অফিসে বহু দিন কাজ করেছেন। এখন তাঁকেই সরকারি ভাবে আনার জন্য নতুন পদ তৈরি হয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে নির্দেশ পেয়েও ওই ব্যক্তি এখন সরকারি ভাবে কাজ যোগ দেননি। এ প্রসঙ্গে সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, বেতনক্রম এক হলেও মেট্রো রেলে ওই ব্যক্তি সহসচিব পদে রয়েছে। এখানে তাঁকে পিএ করা হবে। অর্থাৎ, পদাবনতি হবে। ঘনিষ্ঠ মহলে ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, ‘দিদিকে ভালবেসে মহাকরণে আসতে চাইলেও পদাবনতি মেনে নিতে অসুবিধা হচ্ছে।’ শেষ পর্যন্ত কী করবেন, তা অজানা হলেও আপাতত কিন্তু তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে গিয়ে ‘কাজ’ করছেন। |