নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে বিরোধী দলের বিধায়কদের আমন্ত্রণ জানিয়েও আসতে বারণ করা নিয়ে উত্তপ্ত হল বিধানসভার সর্বদল বৈঠক। রাজ্য রাজনীতিতে আমরা-ওরার বিভাজন আমদানি করা বামেদের এ নিয়ে মুখ খোলা সাজে না বলে বিরোধী সমালোচনার জবাব দিলেন সরকার পক্ষের প্রতিনিধিরা। কিন্তু একই সঙ্গে সিপিএমের দেখানো পথে চলা
নতুন সরকারের কতটা উচিত হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করল তৃণমূলের অন্দরে।
বিধানসভার স্বল্পকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে শুক্রবার। তার আগে মঙ্গলবার বিধানসভায় প্রথামাফিক সর্বদল বৈঠক ডাকেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে বাম বিধায়কদের আমন্ত্রণ জানিয়েও পরে না করে দেওয়া নিয়ে সরব হন সিপিএমের আনিসুর রহমান, ফরওয়ার্ড ব্লকের বিশ্বনাথ কারক, আরএসপি-র ঈদ মহম্মদ প্রমুখ।
এ নিয়ে আনিসুরের সঙ্গে তীব্র বিতণ্ডা বাধে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। জ্যোতিপ্রিয়বাবু অভিযোগ করেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন উত্তর ২৪ পরগনায় একের পর এক অনুষ্ঠানে তাঁদের ডাকা হয়নি। বিধানসভার মধ্যে বুদ্ধবাবুর মন্তব্যে তৎকালীন বিরোধী দলনেতা পার্থবাবু অপমানিত হয়েছেন। সেই বামেদের মুখে এখন মমতার সরকারের সৌজন্য নিয়ে প্রশ্ন করা সাজে না! বরং বর্তমান রাজ্য সরকার বিরোধীদের অনেক বেশি সম্মান দিচ্ছে। |
পরে নিজের ঘরে পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে রাজ্য সরকারি অনুষ্ঠানে সাংসদ হিসেবে তাঁকে ডাকা হয়নি, এমন ঘটনা ঘটেছে। বেহালায় গিয়ে বুদ্ধবাবু অনুষ্ঠান করেছেন। কিন্তু আমরা ডাক পাইনি!” পার্থবাবুর দাবি, শাসক দল হিসেবে তাঁরা সিপিএমের তুলনায় অনেক বেশি মর্যাদা দিচ্ছেন বিরোধীদের। তাঁর কথায়, “বাঁকুড়ায় কী হয়েছে, বলতে পারব না। কিন্তু মালদহের একটা বৈঠকে আমি গিয়েছিলাম। সেখানে তো বিরোধী জনপ্রতিনিধিরা এসেছিলেন। বিধানসভার ৭৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানেও তো বাম বিধায়করা মঞ্চ আলো করে ছিলেন।”
পার্থবাবুরা সোমবারের ঘটনায় সরকারি সিদ্ধান্তকে সমর্থন করলেও তৃণমূলের কেউ কেউ কিন্তু মনে করছেন, বিরোধী বিধায়কদের আমন্ত্রণ জানিয়েও যে ভাবে পরে আসতে বারণ করা হয়েছে, সেটা মোটেই ভাল উদাহরণ নয়। এটা কার্যত সিপিএমের পথেই হাঁটা হচ্ছে। যেটা আখেরে মানুষ ভাল ভাবে নেবে না।
এ দিকে বাঁকুড়ার ঘটনার পরে ভবিষ্যতে আমন্ত্রণ পেলেও সরকারি অনুষ্ঠানে যাওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে ভাবনা শুরু হয়েছে সিপিএমে। দলের পলিটব্যুরোর সদস্য নিরুপম সেন বলেন, “এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু যে ভাবে জনপ্রতিনিধিরা অসম্মানিত হচ্ছেন, তাতে আগামী দিনে এ ব্যাপারে আলোচনা করতে হবে।” রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা বাঁকুড়ার জেলা সিপিএমের সম্পাদক অমিয় পাত্র বলেন, “আমাদের বিধায়কদের যে ভাবে অসম্মানিত করা হয়েছে, তাতে তাঁরা ক্ষুব্ধ। এমন অসম্মানের পরে ভবিষ্যতে তাঁরা যাবেন কিনা, ভাবতে হবে।”
বামফ্রন্টের আমলে কোনও দিনই সরকারি অনুষ্ঠানে এ ভাবে বিরোধীদের উপেক্ষা করা হয়নি বলে দাবি করে নিরুপমবাবু বলেন, “আমরা সব সময়েই তাঁদের প্রাপ্য মর্যাদা দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। কিন্তু তৃণমূল সেই আমন্ত্রণ উপেক্ষা করে সরকারি অনুষ্ঠান বা সর্বদল বৈঠক বয়কট শুরু করে।”
এ দিন সর্বদল বৈঠকে ১২ দফা দাবি পেশ করেন আনিসুররা। তাঁরা বলেন, অধিবেশনের সময় ছাড়াও বিধানসভার প্রেস কর্নার ব্যবহারের অনুমতি দিতে হবে। কারণ, বিধানসভা বিরোধীদের জন্যই। বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া বিধানসভার সূচি মেনে মুখ্যমন্ত্রীর হাজিরা, প্রশ্নের উত্তর এবং নিজের দফতরের বিল পেশের দাবি তোলেন তাঁরা। পরে স্পিকার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী অধিবেশনে উপস্থিত থাকবেন বলেই আশা করছি।” আর পার্থবাবুর মন্তব্য, “যে বিরোধীরা অহরহ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসা করছেন, তাঁদের এমন দাবি ভাল লক্ষণ! মুখ্যমন্ত্রীর উপরে ওঁদেরও আস্থা আছে!”
সব মিলিয়ে স্পষ্ট, শীতে বিধানসভার অধিবেশন খুব একটা শীতল হবে না! |