স্থায়ী চাকরির দাবিতে ডিভিসির নির্মীয়মাণ বিদ্যুৎকেন্দ্র বিক্ষোভ-অবস্থান শুরু করেছেন ওই প্রকল্পের জমিহারারা। সোমবার বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি ডিভিসির চিফ ইঞ্জিনিয়রকে ওই দাবিতে স্মারকলিপিও দেন তাঁরা। চিফ ইঞ্জিনিয়র জিতেন্দ্রকুমার সিংহ জানান, প্রকল্পে স্থায়ী চাকরি দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়টি ডিভিসির নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। এই বিষয়ে তাঁদের কিছু করার ক্ষমতা নেই।
রঘুনাথপুর ২ ও নিতুড়িয়া ব্লকের একাংশে গড়ে উঠছে ডিভিসির ১২০০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। পাঁচ বছর আগে প্রকল্পের শিল্যানাস করেছিলেন ততকালীন বিদ্যুৎমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে। পরে প্রকল্পের পরিদর্শনে এসে ডিভিসির ততকালীন চেয়ারম্যান অসীম বর্মন জানিয়েছিলেন, প্রকল্পের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী পদে নিয়োগ করা হবে জমিহারাদের। পরে স্থায়ী চাকরির দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন জমিহারারা। কলকাতায় ডিভিসি টাওয়ারে গিয়েও তাঁদের দাবি জানিয়েছিল জমিহারা কমিটি।
এ বার সোমবার থেকে প্রকল্পের সামনে বিক্ষোভ-অবস্থানে বসেছে জমিহারা কমিটির প্রায় ৫০০ সদস্য। তাদের দাবি, প্রকল্পে প্রতি জমিহারা পরিবার থেকে অন্তত একজনকে স্থায়ী চাকরি দিতে হবে। কমিটির সভাপতি চিণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষের মুখে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ দ্রুত শুরু হবে। কিন্তু প্রকল্পে জমিহারাদের স্থায়ী চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েও রক্ষা করার কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না ডিভিসি কর্তৃপক্ষ।
১২০০ মেগাওয়াটের পরে আরও ১২০০ মেগাওয়াটের ইউনিট এই প্রকল্পেই গড়ছে ডিভিসি। দ্বিতীয় পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে শীঘ্রই। প্রকল্পে স্থায়ী চাকরি ছাড়াও যে সমস্ত জমিহারা পরিবারের সদস্যরা প্রকল্পে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করছেন তাঁদের ছাঁটাই করা চলবে না বলে দাবি উঠেছে। |
ঘটনা হল মূলত এসইউসির নেতৃত্বে এই জমিহারা কমিটি গড়ে উঠলেও কমিটিতে রয়েছে তৃণমূল ও সিপিএমের নিচু তলার কর্মী-সমর্থকেরাও। তবে চিণ্ময়বাবুর দাবি, “এই কমিটি পুরোপুরি অরাজনৈতিক। সব দলেরই জমিহারারা রয়েছে কমিটিতে।” সংগঠনের সম্পাদক দেবজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষের মুখে হওয়াতে নির্মাণ কাজের বরাত পাওয়া বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থাগুলি কাজ গুটিয়ে নিচ্ছে। ফলে তাঁরা কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে এবং যে সমস্ত জমিহারা পরিবারের সদস্যরা প্রকল্পে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করছে তাদেরকেও ছাঁটাই এর পক্রিয়া শুরু করেছে সংস্থাগুলি।” চিন্ময়বাবু বলেন, “শিল্যানাসের সময়ে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজ্যের ততকালীন মুখ্যমন্ত্রী সকলেই জানিয়েছিলেন, স্থায়ী চাকরির পাশাপাশি কর্মসংস্থান হবে জমিহারাদের। বর্তমানে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করছেন প্রায় একহাজার জমিহারা। তাঁদের স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করা তো দূর ঠিকা শ্রমিকের কাজ থেকেও ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।” দু’ দিন ধরে কাজে যোগ না দিয়েই বিক্ষোভ-অবস্থানে সামিল হয়েছেন জমিহারা পরিবারগুলির বড় অংশ।
তবে স্থায়ী চাকরির বিষয়ে কার্যত তাঁদের কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পে জমিহারা পরিবারগুলি থেকে স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা আগে থাকলেও বর্তমানে বিষয়টি ডিভিসির নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয় হয়ে গিয়েছে। চিফ ইঞ্জিনিয়ার জানান, তাঁরা প্রকল্পের পাশের এলাকায় সামাজিক উন্নয়নের কাজ করতে পারেন। জমিহারাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ শ্রমিকে পরিণত করার কাজ করেছেন। কিন্তু স্থায়ী চাকরির বিষয়ে স্থানীয় স্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এ দিন জমিহারা কমিটির সঙ্গে আলোচনায় প্রকল্পে ঠিকা শ্রমিকের কাজ থেকে জমিহারাদের ছাঁটাইয়ের বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন চিফ ইঞ্জিনিয়র। |