গাড়ি থেকে নেমে জনতার মুখোমুখি মুখ্যমন্ত্রী
রাস্তার দু’পাশে সারি দিয়ে সেই মানুষের ভিড়। তাঁদের উদ্দেশে কখনও তিনি গাড়ির জানলা দিয়ে হাত নাড়লেন। কখনও বা গাড়ি থেকে নিচে নেমে বাসিন্দাদের কুশল সংবাদও নিলেন। জনসভাতেও সেই মাঠ উপচানো ভিড়।
মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেই তৃণমূল নেত্রীর চেনা ভূমিকাতেই দেখলেন বাঁকুড়াবাসী। মঞ্চ থেকে জেলার জন্য একের পর এক ঘোষণা করলেন তিনি। জেলা নেতাদের কোনও কারণে মৃদু ধমকও দিলেন তিনি।
তবে এ সব ছাপিয়ে মানুষের মন ছুঁয়ে গেল তাঁর একের পর এক প্রকল্পের ঘোষণা। ওন্দার গোগড়ার মঞ্চ থেকে এ দিন তিনি জলপ্রকল্প, আবাসিক বিদ্যালয়ের মতো ৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন। শিলান্যাস করলেন ১৯টি প্রকল্পের। প্রায় ১০১১ কোটি টাকায় জেলার ১৪টি ব্লক ও ২টি পুরশহরে পানীয় জলের সমস্যা মেটানোর কাজের সূচনাও করলেন তিনি। জেলার জন্য অনেক প্রকল্পের ঘোষণাও করলেন।
জেলার রাজনীতির কারবারিদের মতে, পঞ্চায়েত ভোটকে পাখির চোখ করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার জঙ্গলমহলের এই দুই জেলায় সফর করে গেলেন। পাট্টা বিলি থেকে সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান, প্রতিবন্ধীদের হুইলচেয়ার, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ প্রদানের পাশাপাশি চাষিদের জন্য হস্তচালিত গাড়ি, কিষাণ কার্ড বিলি করলেন তিনি। সভামঞ্চ থেকেই রিমোটের সাহায্যে শিলান্যাস করেন ওন্দা ও ছাতনার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের, খাতড়ার স্পোর্টস অ্যাকাডেমির। উদ্বোধন করলেন ছাতনার পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আবাসিক বিদ্যালয়, উদ্যান পালন দফতরের আবাসিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিষ্ণুপুরের বেনাচাপড়ার সংখ্যালঘু মুসলিম মহিলা হস্টেলের। সভা শেষে পুরুলিয়ার মতোই এখানেও মুখ্যমন্ত্রী জনতার কাছে আর্জি জানিয়েছেন, এ বার মানুষের পঞ্চায়েত করতে হবে। পঞ্চায়েত পেলে আপনাদের জন্য আরও কাজ করতে পারব। যা দেখে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের কটাক্ষ, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে সরকারি টাকায় তৃণমূলের প্রচার হল। ওনার (মমতা) মুখে যা এসেছে, তাই উনি বলেছেন। এই সব ঘোষণা আদৌও বাস্তবায়িত হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।”
সব বাস গিয়েছে সভায়। বাসের অপেক্ষায় বৃদ্ধাও। বিষ্ণুপুরে শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।
মমতার সভায় ভিড়ের পরিসংখ্যান নিয়ে এ বারও তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে দাবি, পাল্টা দাবি রয়েইছে। তবে পুলিশের হিসেবে, এ দিন ৭০ হাজারের উপর মানুষ সভায় এসেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এই নিয়ে চতুর্থবার বাঁকুড়া জেলা সফরে এলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সার্কিট হাউস থেকে মুখ্যমন্ত্রী বেরনোর সময় তাঁকে দেখার জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা জনতার মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশ কর্মীদের। হুড়োহুড়ি ছিল সভাস্থলেও। মুখ্যমন্ত্রীকে এক ঝলক দেখার জন্য, মোবাইল ফোনে তাঁর ছবি ধরে রাখার জন্য এ দিন সকাল থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর যাত্রাপথে বিভিন্ন বয়সি মানুষ ভিড় করেছিলেন। বাঁকুড়া শহরের ভৈরবস্থান, লোকপুর, পোয়াবাগান, ধলডাঙায় রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। ভিড় দেখে লোকপুর ও ওন্দায় গাড়ি থেকে নেমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় কিষান ক্রেডিট কার্ডের গুরুত্ব থেকে কৃষি সংক্রান্ত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা বার বার এসেছে। একই সঙ্গে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের ভর্তুকি দেওয়া থেকে আশাকর্মীদের আরও কাজে অন্তর্ভুক্ত করে তাঁদের বেশি টাকা দেওয়ার উদ্যোগের কথাও মুখ্যমন্ত্রী জানান। জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কথাও তিনি শোনান। শীঘ্রই বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কাছে সরকারি উদ্যোগে একটি ওষুধের দোকান চালু করা হবে। সেখান থেকে প্রায় অর্ধেক দামে ওষুধ মিলবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। এ ভাবেই মানুষের মন জয় করার চেষ্টা চালান মুখ্যমন্ত্রী।
একই সঙ্গে এই জেলায় প্রচুর মেধাবী ছেলেমেয়ে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সে জন্য ৮টি মডেল স্কুল তৈরি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। জয়পুর, বৈতল ও মেজিয়ায় কলেজ নেই। ওই সব এলাকায় কলেজ তৈরির দাবিও অনেকদিনের। সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ওই এলাকাগুলিতে আস্তে আস্তে কলেজ তৈরি করার চেষ্টা করা হবে। একই সঙ্গে জেলার সব ক’টি ব্লকেও আইটিআই খোলা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী সভায় ঘোষণা করেন।
ওন্দা ছাড়াও বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া, তালড্যাংরা, পাত্রসায়র, সোনামুখী, ইঁদপুর থেকেও বাসে করে হাজার হাজার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা এ দিন সভায় ভিড় করেন। বহু এলাকা থেকে এ ভাবে বাস তুলে নেওয়ায় বহু মানুষ চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হন। বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া প্রভৃতি এলাকায় গুটি কয়েক সরকারি বাস দেখা গিয়েছে। সাধারণ যাত্রীদের ভরসা ছিল ওই ক’টি বাস। ফলে মুষ্টিমেয় বাসে ও ভাড়া গাড়িতে প্রচণ্ড ভিড় ছিল। তৃণমূল নেতাদের দাবি, “স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মানুষ এ দিনে সভায় এসেছিলেন।” যদিও সিপিএমের দাবি, “সরকারি টাকা উড়িয়ে বাসে করে লোক এনে মাঠ ভরানো হয়েছে।”
এ নিয়ে তর্কাতকি চলবেই। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য যাওয়ার আগে বলে গেছেন, “আবার অনেক কাজ নিয়ে আসব।”

এ যাত্রা বাঁকুড়ার জন্য
• শুশুনিয়া-শালতোড়া-বিহারীনাথ-মুকুটমনিপুরকে ঘিরে ট্যুরিজম সার্কিট গড়া হচ্ছে।
• বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে আসন বাড়ানো হবে আস্তে আস্তে।
• ৫০০ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা হবে। টেন্ডার হয়েছে।
• বাঁকুড়া-ওন্দা-বিষ্ণুপুর রাস্তা এবং সোনামুখী-বর্ধমান রাস্তা সংস্কার করা হবে।
• প্রতি ব্লকে আইটিআই হবে। ২টি কাজ চলছে। বাকি জমি দেখা হচ্ছে।
• জয়পুর, বৈতল ও মেজিয়ায় কলেজ করার চেষ্টা করা হবে।
• জঙ্গলমহলের বিভিন্ন রুটে নিয়মিত বাস চালানোর নির্দেশ।
• সব্জি নিয়ে আসার জন্য ৩০ হাজার চাষিকে হস্তচালিত ভ্যান দেওয়া হবে।


• মার্চের মধ্যে বাঁকুড়ার গ্রামে গ্রামে পৌঁছবে বিদ্যুৎ।
• খাতড়া মহকুমা হাসপাতালে তৈরি হচ্ছে মর্গ।
• সিএমওএইচ এবং এসিএমওএইচদের প্রশাসনিক ভবন তৈরি হচ্ছে।
• বিষ্ণুপুর হাসপাতালের উন্নয়ন করা হচ্ছে।
• ৫টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২০ লক্ষ টাকা উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ।
• কৃষকদের শালো পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার জন্য ৮০০০ টাকা জমা দিতে হয়। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আবেদন করলে সরকার ওই টাকার ব্যবস্থা করে দেবে।
• বাঁকুড়া মেডিক্যালের কাছে প্রায় অর্ধেক দামে ওষুধের দোকান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.