ইডেনে অর্ধ শতাব্দীর স্মৃতিতে ডুব দিলেন ডেক্সটার-কন্ট্রাক্টর |
প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত • কলকাতা |
ভারত-ইংল্যান্ড মহাযুদ্ধের আগের সন্ধেয় ইডেন ডুবে থাকল নস্ট্যালজিয়ার সেপিয়া রঙে। টেড ডেক্সটার এবং নরি কন্ট্রাক্টরইডেনে দু’দেশের হয়ে টেস্ট অধিনায়কত্ব করা সবচেয়ে পুরনো দুই ক্রিকেটারের উপস্থিতিতে ক্রিকেটের মক্কায় তখন পাঁচ দশক আগেকার ফ্ল্যাশব্যাক।
“পঞ্চাশ বছর পরে নরিকে দেখছি! অদ্ভুত লাগছে...” হাতে ১৯৬১-’৬২ সালের সেই ভারত-ইংল্যান্ড টেস্টের স্কোরশিট নিয়ে বলছিলেন ডেক্সটার। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো তিনিও বাংলার জামাই। তাঁর শ্বশুরমশাই টম লংফিল্ডের নেতৃত্বেই প্রথম রঞ্জি জিতেছিল বাংলা। ফ্রেডি ট্রুম্যান থেকে ফ্র্যাঙ্ক ওরেল, বিজয় হাজারে থেকে চাঁদু বোরডে, টাইগার পটৌডী থেকে সেলিম দুরানি অন্য এক ক্রিকেট জগত উঠে এল আশি ছুঁইছুঁই দুই ক্রিকেটারের আড্ডায়। যে জগতে ক্রিকেট মানে ছিল ব্যাটে-বলে সৃষ্ট ধ্রুপদী সঙ্গীত। চিয়ারগার্লদের নাচ আর ডিজে-র কান-ফাটানো গান যে জগতে ছিল কল্পনাতীত। যখন ক্রিকেট মানে ছিল সবুজ ঘাসের মসৃণতা আর সাদা শার্ট-ট্রাউজারের রোম্যান্স। যে ক্রিকেটদুনিয়ার গল্প বর্তমান প্রজন্মের কাছে ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্বের মতোই অবিশ্বাস্য ঠেকতে পারে। |
ফিরে দেখা
|
ইডেনে কুক বনাম ধোনির আগের দিন ‘বন্ধু’ ভারত-ইংল্যান্ড। ব্লেজার, রুপোর ছড়ি এবং ফুলের
তোড়া দিয়ে দুই প্রাক্তন অধিনায়ককে বরণ করল সিএবি। মঙ্গলবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
কেমন ছিল ডেক্সটার-কন্ট্রাক্টরের ক্রিকেটবিশ্ব? প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের কথায়, “আমাদের সময় টাকাটা কোনও দিন ক্রিকেটের অংশ ছিল না। পাঁচ দিন মিলিয়ে আড়াইশো টাকা পেতাম। তা-ও টেস্টের শেষ দিন। তার মধ্যে থেকেই কুলি ভাড়া, ট্যাক্সি ভাড়া দিতে হত। বাড়তি এক কাপ চা খেলেও তার টাকা নিজের পকেট থেকে দিতে হত!” কোথায় লোভনীয় আইপিএল চুক্তি, আর কোথায় ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্টের কোটি কোটি টাকার হাতছানি। নিজের কাউন্টি সাসেক্স-কে ইতিহাসের প্রথম ওয়ান ডে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন ডেক্সটার। সেই টুর্নামেন্টের পুরস্কার মূল্য ছিল মোট নয় পাউন্ড!
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সূচনা পাঁচ দশক আগে হলে অবশ্য আইপিএলের বাইশ গজে গেইল-কোহলিদের ভাল প্রতিদ্বন্দ্বী হতেন ডেক্সটার। একটা কাউন্টি ম্যাচের প্রথম বলেই ওভার বাউন্ডারি মেরে তখনকার দর্শকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন ইংরেজ। পঞ্চাশ বছর আগে দেখা ইডেনের সঙ্গে এখনকার ইডেনের কী তফাত ধরা পড়ল তাঁর চোখে? “আমাদের সময় এত বড় বড় গ্যালারি ছিল না। পিচটা ছিল ড্রেসিংরুমের আড়াআড়ি। তবে একটা জিনিস এত বছরেও বদলায়নি। এখানকার দর্শকদের পাগলামি। আমি তো সব সময় টিমকে বলতাম, কলকাতায় খেলতে নামা মানে গোটা ভারতের বিরুদ্ধেই খেলতে নামা!” ‘গোটা ভারত’-এর বিরুদ্ধে বুধবার খেলতে নামছে অ্যালিস্টার কুকের ইংল্যান্ড। যে ম্যাচ নিয়ে ডেক্সটারের চেয়ে বেশি আগ্রহ তাঁর স্ত্রী সুজানের! কী রকম? “সুজান আমার চেয়েও বড় ক্রিকেটপ্রেমী। এখন বয়স হয়েছে। ভেবেছিলাম কাল একটু দেরি করে মাঠে আসব। কিন্তু সুজান বলে দিয়েছে, টসটা ও দেখবেই দেখবে!” নরি ও টেডদুই দেশের সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই সংস্কৃতির প্রতিনিধি হয়েও কোথাও যেন এক। তাঁরা দু’জনেই ক্রিকেটার এবং ‘জেন্টলম্যান’। যাঁদের ছায়ায় কিছুক্ষণের জন্য হলেও ইডেন ফিরে গিয়েছিল তার অতীতে। |
|